তাহিরপুর:সুনামগঞ্জে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে যে সকল বীর সৈনিক মাতৃভূমি রক্ষায় বুকের তাজা রক্ত দিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের মধ্যে শহীদ সিরাজুল ইসলাম বীর বিক্রম একজন। যুদ্ধে তার অসমান্য অবদানের জন্য তৎকালীন সরকার থাকে বীর বিক্রম উপাধীতে ভূষিত করেন। সেই বীর শহীদের করব। এই বীর সেনানীর শেষ স্মৃতি চিহ্ন অযত্ন আর অবহেলায় মুছে যেতে বসেছে। যেন দেখার কেউ নেই। জানাযায়, তাহিরপুর উপজেলায় উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টেকেরঘাট সীমান্তে যুদ্ধ-কালীন সাবসেক্টর টেকেরঘাটের টেকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্প পরিতাক্ত কোয়ারি সংলগ্ন সমাধীস্থলটি আজ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। বর্তমানে শহীদ সিরাজের কবরটি ডেকে গেছে বন্জ গাছ,লতা-পাতায়,কবরের দেওয়াল হয়েছে রংছটা,মুছে গেছে দেওয়ালের গায়ে লেখা তার নাম টুকুও। এছাড়াও সরকারী গুরুত্বপূর্ন দিবসেও জানানো হয় না থাকে সম্মান।

সম্প্রতি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম আনুষ্টানিক ভাবে টেকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্প পরিতাক্ত কোয়ারীটি (নীলাদ্রী লেক) কে নীলাদ্রী ডিসি পার্ক নামে নামকরন করেন। এই নাম করনের পর পর শুরু হয় তুমুল প্রতিবাদ ও ক্ষুব প্রকাশ করে এই নামকরন বাতিল করে শহীদ সিরাজের নামে লেকে’র নামকরনের দাবী জানান মুক্তিযোদ্ধা,স্থানীয় এলাকাবাসী,বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। কিন্তু এ দাবী জানিয়ে আসলেও বাস্তবে তার সমাধী স্থলটি ঘুরে দেখেন নি আজও কেউ। পরে জেলা প্রশাসক দাবী মুখে শহীদ সিরাজ লেক নামকরন করেন।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানাযায়, ১৯৭১ সালের তুখর ছাত্রনেতা সিরাজুল ইসলাম দেশ মাতৃকার টানে কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র,কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার ছিলানী গ্রাম হতে কয়েকজন যুবককে সাথে নিয়ে ভারত মেঘালয় রাজ্যের বালাট কেম্পে মুক্তিযোদ্ধে যোগদেন। সেখানে পৌছলে সিরাজুল ইসলাম কে আসাম রাজ্যের ইকুয়ানে পাঠানো হয় এবং সেখানে তিনি গ্যারিলা প্রশিক্ষন শেষে মেজর মীর শওকত আলীর অধিনে যোগ দেন যুদ্ধ কালীন ৫নং সাবসেক্টর টেকেরঘাটে। তার দক্ষতার কারনে তিনি একটি কোম্পানীর সহকারী কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন। সে কোম্পানীর অন্যতম পৃষ্ট পোষক ছিলেন, প্রয়াত সাবেক এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ঐ সময় রেল যোগাযোগ ব্যহত হওয়ার পর হানাদার বাহিনীরা তৎকালীন সুনামগঞ্জ মহুকুমার গুরুত্ব পূর্ন নদী বন্দর সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজার দিয়েই পাক হানাদের রসদ সিলেট পৌছানো হত। তাই এই নদী বন্দরকে মুক্ত করার জন্য মিত্রবাহিনীর মেজর বাট ও জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে ৩৬জন চৌকুস মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠন করা হয় একটি এডভান্স পাটি।
১৯৭১ সালের ৮ই আগষ্ট এডভান্স পার্টি সুর্যাস্তের পরপরই শুধু মাত্র ত্রি-নট থ্রি রাইফেল,টেকেঘাট সাব সেক্টর কোম্পানী কমান্ডার মোজাহিদ উদ্দিন আহমদ ও গ্রেনেড কমান্ডার সিরাজের নেতৃতে ২৫মাইল উত্তর থেকে এ অভিযান শুরু করে দুটি নৌকায় করে সাচনা পৌছে পাক হানাদার বাহিনীর সুরক্ষিত ব্যাংকারে গ্যারিলা আক্রমন করে। অতর্কতি এ হানায় ব্যাংকারে অবস্থানরত পাক বাহিনীদের মৃত্যু হয়। এক পর্যায়ে কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম আনন্দে লাফিয়ে উঠে জয়বাংলা ম্লুগান দিতে থাকেন এমন সময় পাক বাহিনীর একটি বুলেট চোখে এসে বিদ্ধ হলে সাথে সাথে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং কিছক্ষন পরই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর শহীদ সিরাজুল ইসলামকে পূর্ন সামরিক মর্যাদায় টেকেরঘাট সাব সেক্টর টেকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্প পরিতাক্ত কোয়ারি সংলগ্ন স্থানে সমাহিত করা হয়। তাহিরপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও আ,লীগ নেতা খেলু মিয়া,ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম,সাদেক আলী সহ জেলা ও উপজেলার সচেতন মহল বলেন, দুঃখ জনক হলেও সত্য যে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ধরে রাখতে কোটি টাকা ব্যায়ে স্মৃতি সৌধ নির্মিত হয়েছে অথচ একজন দেশপ্রেমিকের কবর সংরক্ষনে এগিয়ে আসছে না কেউ। স্বীকৃতি দেওয়া একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর এমন অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে তা মানা যায় না। তাহিরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার যুদ্ধাহত মোজাহিদ উদ্দিন আহমেদ,রফিকুল ইসলাম,রৌজ আলী বলেন,মহামান্য রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের অত্যান্ত আস্থাভাজন ছিলেন সিরাজ ভাই। দেশের জন্য তার অসমান্য ত্যাগ জাতি ও বর্তমান তরুন প্রজন্ম জানুক সেটা আমি চাই। তার কবরটি সংরক্ষনের জন্য বার বার বিভিন্ন মহলে আবেদন করার পরেও কেউ উদ্যোগ গ্রহন করে নি যা খুবই দুঃখজনক। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন,শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামেই শুধু নয় প্রত্যেক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর সংরক্ষন করা খুবেই প্রয়োজন। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূনেন্দ্র দেব জানান,বীর বিক্রম শহীদ সিরাজুল ইসলামের কবরটি সংস্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn