সাদিকা পারভীন পপিছবি: সংগৃহীত

পরিচিতজনদের কাছে দারুণ আড্ডাবাজ হিসেবে পরিচিত ছিলেন চিত্রনায়িকা পপি। যেখানেই থাকতেন, চারপাশ জমিয়ে রাখতেন। খোলা মনের পপি সবার সঙ্গে হাসিখুশি বজায় রেখে কথা বলতেন। ঢালিউডের খোলা মনের মানুষটি নেই কোনো শুটিংয়ে। নেই কোনো নতুন ছবির খবরেও। চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট আড্ডায়ও তাঁর দেখা পাওয়া যায় না। কাছের দু–একজন ছাড়া কেউ জানেন না পপি এখন কোথায়। যাঁরা জানেন, তাঁদের মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছেন। নিজেদের থেকে পপি প্রসঙ্গে কিছুই বলতে চান না। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী পপিকে বছর তিনেক ধরে কোথাও দেখা যায় না। আড়ালে যাওয়ার কদিন পর চাউর হয়, বিয়ে করে তিনি সংসারী হয়েছেন, এমনকি তিনি মা–ও হয়েছেন। এত কিছুর পরও তাঁকে ক্যামেরার সামনে পাওয়া যায়নি।

হঠাৎ তাঁকে দেখা যায় তবে সামনাসামনি নয়, ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি প্রকাশ্যে এসেছিলেন। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন উপলক্ষে ফেসবুকে ৫ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বার্তা দেন তিনি। সেখানে তিনি তাঁকে নিয়ে সৃষ্ট রহস্যের সুরাহা করেননি। বলেননি, কোথায় আছেন? কেমন আছেন? সেই ভিডিওতে তিনি ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের জন্য ভোট চান। তাঁদের বিজয়ী করতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ভোটারদের কাছে ভোট দেওয়ার অনুরোধও করেন।

পপির ৫ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ চলচ্চিত্রের বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে যায়। পপি সেই ভিডিওতে বলেছিলেন, ‘ভেবেছিলাম আর কখনোই ক্যামেরার সামনে আসব না। কিন্তু একজন শিল্পী হিসেবে এবং নিজের কিছু দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আজকে কিছু কথা না বললেই নয়। দীর্ঘ ২৬ বছর ইন্ডাস্ট্রিতে সুনামের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছি। তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। আজকে অনেক কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলছি, আজ আমি কোথায়! আমি আছি আপনাদের মাঝেই, হয়তো ভাগ্য থাকলে আবারও ফিরব।’

পপি তাঁর ভিডিও বার্তায় জানিয়েছিলেন, শিল্পী সমিতির একটিমাত্র লোকের কারণে, তাঁর পলিটিক্স এবং তাঁর অনেক রকম অসহযোগিতার কারণে তাঁকে বারবার অপমানিত হতে হয়েছে। শুধু তাঁকে নয়, রিয়াজ, ফেরদৌস, পূর্ণিমা, নিপুণও অপমানিত হয়েছেন। তাঁদের ব্যবহার করে এই চেয়ারে ওই লোক বসেছেন—সেখানে বসে বিভিন্ন অপকর্মের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁরা গুটিকয় তাতে সায় দেননি। যার কারণে তিনি ভিকটিম। তাঁর মতো শিল্পীকে সদস্য পদ বাতিলের চিঠি দেওয়া হয়। এসব কারণে চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।

এদিকে আড়ালে যাওয়ার আগে পপি ২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর ‘ধোঁয়া’ নামের একটি ছবিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। প্রযোজকের কাছ থেকে সাইনিং মানি হিসেবে নেন এক লাখ টাকা। পরের বছরের মার্চে ছবির শুটিং শুরুর কথা ছিল। তবে কাজ শুরুর আগে চুক্তির খবরটি মিডিয়াতে প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন পপি। খবর গোপনই রাখেন ছবির পরিচালক ও প্রযোজক। মাঝেমধ্যে কাজ নিয়ে পপির সঙ্গে আলাপ–আলোচনা চলতে থাকে। শুটিং শুরু হওয়ার আগের মাস পর্যন্ত এ রকমই ছিল। এরপর হঠাৎ আড়ালে চলে যান পপি। এর পর থেকে কোথাও তাঁকে পাওয়া যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা মুঠোফোন-হোয়াটসঅ্যাপও বন্ধ।

ঢালিউড তারকা মৌসুমীর ফুফাতো বোন পপি, ওমর সানীর শ্যালিকা। মৌসুমীর পরিবারও কিছু জানে না কোথায় আছেন তিনি। তাঁদের সঙ্গেও যোগাযোগ নেই। এদিকে পপির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পপি আসলে এখন মিডিয়ার সামনে আসতে চাইছে না। সে তার মতো করে ভালো আছে।’ আরেকজন বললেন, সংসার নিয়ে শান্তিতে আছেন পপি। তাঁকে খোঁজার চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই। তাঁর কাছে ইন্ডাস্ট্রির সবার মুঠোফোন নম্বর আছে। সময় হলে তিনি নিজেই প্রকাশ্যে আসবেন।

পপি প্রসঙ্গে তাঁর আরেক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘আমার সঙ্গে তার হঠাৎ কথা হয়। কিন্তু কী করছে, কোথায় আছে—এসবের কিছুই জানতে চাই না। আমি মনে করি, প্রত্যেক মানুষের প্রাইভেসির প্রতি আমাদের সবার শ্রদ্ধা থাকা উচিত। কথা হলে শুধু এটুকু জিজ্ঞেস করি, কেমন আছে। সে–ও জানায়, বেশ ভালো আছে। আসলে তার ভালো থাকাটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে জরুরি। যেখানে থাকুক ভালো থাকুক। তার জন্য সব সময় শুভকামনা।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn