চেয়েছিলেন ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। পরে দেনদরবার করে এক লাখ টাকায় রফা হয়। প্রায় তিন মাস আগে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদের সম্প্রসারিত মার্কেটে দোকানঘর বরাদ্দ দিতে এক সহকর্মীর কাছ থেকে ওই টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের অফিস সুপার ফসিয়ার রহমান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তিন মাস পরে এসে সেই ঘুষের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। ফসিয়ার রহমান বর্তমানে জেলার সদর ইউএনও কার্যালয়ে ওই পদে কর্মরত রয়েছেন। বুধবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সামনে তাঁর অফিস কক্ষে ঘুষের ওই টাকা ফেরত দিয়েছেন ফসিয়ার রহমান। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদের পাশে ২০টি দোকানঘর নির্মাণের জন্য নিয়মবহির্ভূতভাবে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বরাদ্দের ওই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বরাদ্দ-প্রক্রিয়ায় ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে ওঠে। ওই সময় ফসিয়ার রহমান মহম্মদপুর ইউএনও কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। বরাদ্দ-প্রক্রিয়ায় ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর জেলা প্রশাসক খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, অন্যদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের দুই কর্মচারীও দোকানঘরের জন্য প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন। তাঁদের একজন ইউএনও কার্যালয়ের অফিস সহকারী মনিরা বেগম। মনিরা বেগম জেলা প্রশাসককে বলেন, অফিস সুপার ফসিয়ার রহমানকে এক লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে তিনি ওই প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ‘প্রায় এক মাস আগে ফসিয়ার রহমানকে আমি ওই বিষয়ে জিজ্ঞেস করি। তিনি ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। পরে মনিরা বেগম লিখিতভাবে জানালে ফসিয়ার রহমান ঘুষ নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। ঘুষের টাকা ফেরত দিতে রাজি হন। আজ বিকেলে আমার অফিসে ফসিয়ার রহমান ঘুষের সেই এক লাখ টাকা মনিরা বেগম ও তাঁর স্বামী সিরাজুল ইসলামের হাতে তুলে দেন। ফসিয়ারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ অফিস সহকারী মনিরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্লট বরাদ্দের জন্য অফিস সুপার ফসিয়ার রহমান আমার কাছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন। পরে আলাপ-আলোচনা করে তাঁকে এক লাখ টাকায় রাজি করাই। গত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ওই টাকা দিয়েছিলাম। পরে বরাদ্দের চুক্তিপত্রে দেখতে পাই, উপজেলা পরিষদে তিনি ওই টাকা জমা দেননি। এমনকি বরাদ্দ নিতে কোনো টাকাও লাগবে না।’ যোগাযোগ করা হলে ফসিয়ার রহমান প্রথম আলোর কাছে প্রথমে ঘুষের ওই টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। পরে অবশ্য বলেন, ‘আমি টাকা নিইনি। বরাদ্দের সবকিছু উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও স্যার দেখেন। আমার বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষমতা নেই। মনিরা অফিসের একজনের কাছে ৯০ হাজার টাকা রেখে গিয়েছিল।’ টাকা না নিলে ফেরত দিলেন কেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে ফসিয়ার রহমান বলেন, ‘টাকা ফেরত না দিলে জেলে যেতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে ফেরত দিয়েছি।’

জানতে চাইলে মহম্মদপুর উপজেলার তৎকালীন ইউএনও চৌধুরী রওশন ইসলাম সন্ধ্যায় বলেন, উপজেলা পরিষদের আয় বৃদ্ধির জন্য মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদের একটি মার্কেট আছে। ওই মার্কেট সম্প্রসারণ করে নতুন কিছু দোকানঘর নির্মাণের জন্য প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। উপজেলা চেয়ারম্যান এর সভাপতি। অফিস সুপার ফসিয়ার রহমানের ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান খান জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn