দিরাইয়ে বখাটের ছুরিকাঘাতে স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তার মুন্নী হত্যা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। বখাটে এহিয়া সরদারের (২২) বিরুদ্ধে সোমবার বিকালে এই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। মামলার অন্য আসামি মো. তানভীর আহমদের (২২) বিরুদ্ধে ঘটনায় জড়িত থাকার কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। সুমাইয়া আক্তারের মা রাহেলা বেগমের দায়ের করা এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দিরাই থানার উপ-পরিদর্শক মো. সেকান্দর আলী সুনামগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ শহীদুল আমিনের আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ১৬ ডিসেম্বর রাতে দিরাই পৌর শহরের মাদানী মহল্লা এলাকায় সুমাইয়া আক্তারকে নিজঘরের পড়ার টেবিলেই ছুরিকাঘাত করেন দিরাই উপজেলার সাকিতপুর গ্রামের জামাল মিয়া সরদারের ছেলে এহিয়া সরদার। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। সুমাইয়ার বাবা হিফজুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ইটালিতে আছেন। ঘটনার একদিন পর ১৮ ডিসেম্বর এহিয়া সরদার ও তার বন্ধু তানভীর আহমদকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন রাহেলা বেগম। পুলিশ ঐ দিনই তানভীরকে গ্রেপ্তার করে। পরে ২১ ডিসেম্বর রাতে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এহিয়া সরদারকে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, এহিয়া দিরাই শহরের সেন মার্কেটের একটি দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসাবে কাজ করতেন। একই দোকানে বিক্রয়কর্মী ছিলেন সুমাইয়ার চাচা নুর উদ্দিন। এ কারণে সুমাইয়া প্রায়ই এই দোকানে আসা-যাওয়া করত। তখন এহিয়ার সঙ্গে সুমাইয়ার পরিচয়। পরে এহিয়া সুমাইয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাতে সুমাইয়া ও তার পরিবার রাজি হয়নি। এরপর থেকে বিভিন্নভাবে তাকে উত্যক্ত করতেন এহিয়া। অতিষ্ট হয়ে এক পর্যায়ে সুমাইয়াকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি র‌্যাবের সুনামগঞ্জ ক্যাম্পেও জানানো হয়।  ঘটনার আগে ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এহিয়া সুমাইয়াদের বাসায় গিয়ে আবার তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু সুমাইয়া ও তার মা এতে রাজি হননি। তখন এহিয়া পকেট থেকে চাকু বের করে নিজের বাঁ হাত চারস্থানে কেটে রক্তাক্ত জখম করেন এবং নিজের গলা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে সুমাইয়ার মা রাহেলা বেগম বিষয়টি নিয়ে তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করলে এহিয়া রক্ত ছুইয়ে মা ও মেয়েকে শপথ করিয়ে চলে যান। পরদিন এহিয়া আবার মা ও মেয়েকে ফোন করলে তারা কেউই ফোন ধরেন নি। এহিয়া ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আবার যান সুমাইয়াদের বাসায়। তখন তার মা রাহেলা বেগম বাসায় ছিলেন না। এহিয়া সুমাইয়ার কক্ষে গিয়ে রক্ত ছুইয়ে শপথের বিষয়টি তাকে স্মরণ করিয়ে দেন। এ সময় তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে এহিয়া ঘরের সো-কেসের ওপরে থাকা ফল কাটার ছুরি নিয়ে সুমাইয়ার পেটে ও বুকে দুটি আঘাত করে পালিয়ে যান। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সুমাইয়া মারা যায়। সুমাইয়া আক্তারের দিরাই বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসিতে বৃত্তি পেয়েছিল মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া। তাদের গ্রামের বাড়ি দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের নদগীপুর গ্রামে। সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাবীবুল্লাহ বলেছেন, ঘটনার পর ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী আদালতে এহিয়া সরদারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn