বিমানের জ্বালানি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের জ্বালানি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিমানে জ্বালানি হিসেবে মূলত অ্যাভিয়েশন টার্বাইন ফুয়েল (এটিএফ) বহুল ব্যবহৃত। সময়ের চাহিদা মেটাতে বিজ্ঞানীরা জেট ফুয়েলের পাশাপাশি বায়োফুয়েল কিংবা গ্যাস-টু-লিকুইডের (জিটিএল) মতো জ্বালানি নিয়েও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। নিরাপদ বিমান পরিচালনার জন্য আদর্শ জ্বালানি হিসেবে এতদিন হাইড্রোজেন জ্বালানি সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হয়ে আসলেও ভবিষ্যতে হাইড্রোজেন জ্বালানির জায়গা দখল করে নিতে পারে বিদ্যুৎ ভিত্তিক জ্বালানি। বিমান সংস্থার সাথে জড়িত অনেকের মতে, হাইড্রোজেন জ্বালানি ভবিষ্যতে বিমানের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং জ্বালানির প্রাপ্যতা কমে আসার সাথে সাথে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তেল পরবর্তী সময়ের জ্বালানির প্রধান বিকল্প হিসেবে বিদ্যুৎ শক্তির কথা চিন্তা-ভাবনা করছেন।
মূলত পরিবেশ বান্ধব সবুজ জ্বালানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্যই সবার আগে ভাবা হচ্ছে বিদ্যুতের কথা। এর ফলে কার্বন নিরসন অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে অনেক দেশ গাড়ির জ্বালানি হিসেবে বিদ্যুৎ শক্তিকে জ্বালানি হিসেবে বাধ্যতামূলক করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিমানের জ্বালানি হিসেবে বাধ্যতামূলক করা হতে পারে বিদ্যুৎ শক্তিকে। তবে এটি বলা যতোটা সহজ করাটা তার থেকে হাজার গুন কঠিন। তবে   এই কঠিন চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করতে এগিয়ে এসেছে বেশ কিছু বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকায় সবার আগে রয়েছে ইউরোপিয়ান বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস। বিদ্যুৎ নির্ভর বিমান জ্বালানি ব্যবস্থার লক্ষ্যে জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সিমেন্সের সাথে যৌথভাবে কাজ করছে এয়ারবাস। সিমেন্সের বিদ্যুৎ ভিত্তিক বিমান গবেষণা প্রোগামও কিনেছে এয়ারবাস। ২০১৫ সালে ই-ফ্যান লাইট এয়ারক্রাফট ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে দারুণ এক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করেছে এয়ারবাস। সেই সাফল্যের পরে এখন দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বিমানের জন্যও বিদ্যুৎ ভিত্তিক জ্বালানি ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে নতুন জ্বালানির নির্ভর জ্বালানির ক্ষেত্রে এয়ারবাসের সব থেকে বড় সাফল্য ‘ভাহানা’।  দুটি প্রোপেলার এবং চারটি ইঞ্জিন থাকবে ভাহানায়। আর এর সব কিছুই চলবে বিদ্যুৎ শক্তিতে। এই নভেম্বরেই ভাহানা টিম ঘোষণা দিয়েছে খুব শিগগিরই পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত তারা।
একই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সিটি এয়ারবাস, যারা ২০১৮ সালেই নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করার ঘোষণা দিয়েছে। সিটি এয়ারবাসের এই বিশেষ বিমানে এক সাথে চার জন যাত্রী পরিবহনেরও সুযোগ থাকবে বলে জানানো হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে। এই দৌড়ে আরো রয়েছে ইসরাইলভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এভিয়েশন এয়ারক্র্যাফট, নাসা এক্স-৫৭ ম্যাক্সওয়েল এবং পিপিসট্রেল আলফা ইলেকট্রো। এদের বেশিরভাগই আগামী বছরের মধ্যে বিমানের জ্বালানিতে বিদ্যুৎ শক্তিকে কাজে লাগানোর ঘোষণা দিয়েছে।-সিএনএন
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn