সুনামগঞ্জ  ::: দুই সন্তানের জনকের হাতে ধর্ষিত হয়ে দরিদ্র পরিবারের এক তরুণী (১৮) তিন মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় বিয়ে ভেঙ্গে গেছে ওই তরুণীর। ঘটনাটি ঘটেছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের তেলিগাঁও (কৃষ্ণতলা) গ্রামে। অভিযুক্ত যুবকের নাম সুমন পাল (৪০)। তিনি তেলিগাঁও গ্রামের মৃত জুনু পালের ছেলে। সুমন বিবাহিত ও তার দুই সন্তান রয়েছে। তরুণীর পাশের বাড়ির বাসিন্দা সুমন। এই ঘটনায় অভিযুক্ত সুমন পালের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণ মামলা করেছেন ওই তরুণীর বাবা। স্থানীয়রা জানান, শ্রাবন মাসের প্রথম সপ্তাহে পারিবারিকভাবে ওই তরুণীকে সিলেটে বিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ধর্ষণে সন্তান সম্ভবনা হওয়ায় বিয়েটি ভেঙ্গে যায়। ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ায় ওই তরুণীকে সামাজিকভাবে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল অভিযুক্ত সুমন পাল। পরে বিয়ে করতে অস্বীকার জানায়। এবং ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি আপোষে নিষ্পত্তি করতে চেয়েছিল। কিন্তু যুবতীর পরিবার টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি আপোষে নিষ্পত্তি না করে থানায় মামলা দায়ের করেন।

গত ১৩ আগষ্ট শুক্রবার সুমন পালের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন ওই তরুণীর বাবা। পরদিন আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন অন্তস্বত্ত্বা ওই তরুণী। এদিকে সুমনকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করায় সুমনের ছোট ভাই সুবেদ পাল (১৯) কে আটক করেছে পুলিশ। সুবেদ পাল বর্তমানে কারাগারে আছে। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ওই তরুণীর বাবা ও তার ছোট ভাই ফেরি করে সবজি বিক্রি করেন। তার মা ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ করেন। গত ১ জুন সকালে প্রতিবেশি সুমন পাল ওই তরুণীকে বাড়িতে একা পেয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এরপরও বিয়ের প্রলোভন দিয়ে একাধিক বার ধর্ষণ করে। মাস খানেক আগে ওই তরুণী অসুস্থ হলে দুই মাসের অন্তস্বত্ত্বা হওয়ায় বিষয়টি ধরা পরে। এবং পরিবারকে ধর্ষণের ঘটনাটি জানায়। এরপর তার পরিবার স্থানীয় গণমান্যদের বিষয়টি অবগত করলে অভিযুক্ত সুমন পাল ওই তরুণীকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল। পরে গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য বিষ্ণু পালের প্ররোচণায় বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে গ্রাম থেকে পালিয়ে যায় সুমন। তবে বিষ্ণু পাল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন এই ঘটনার তার কোন সম্পৃক্ত নাই। তিনিও ধর্ষণের ঘটনা শুনেছেন। এদিকে থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করার পর মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মামলার বাদী ও স্বাক্ষীদেরকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ জানিয়েছেন মামলার হওয়ার পর কাউকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে সুমন পাল ও তার ভাইরা।

ওই তরুণীর প্রতিবেশি ও মামলার স্বাক্ষী বদন পাল বললেন,‘ সিলেটে মেয়েটির বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ায় সেটি ভেঙ্গে গেছে। ধর্ষণের ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই সুমন পালের পরিবার টাকা দিয়ে বিষয়টি আপোষ করতে চেয়েছিল। মেয়ের পরিবারকে ৭ লাখ টাকা দিতে চেয়েছিল। থানায় মামলা করায় মেয়ের বাবাকে ও আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। বিষয়টি আমি মামলার তদন্তকারী অফিসারকে জানিয়েছি।’ তেলিগাঁও (কৃষ্ণতলা) গ্রামের বাসিন্দা আজব আলী বলেন,‘ এই ঘটনাটি সারা এলাকার মানুষ জানে। এই ঘটনার জন্য মেয়েটার বিয়ে নষ্ট হয়েছে। সুমনের পরিবার বিষয়টি আপোষে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করায় প্রমাণ হয়, সুমন ঘটনার সাথে জড়িত।’ এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সুমন পাল গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ায় ও তার পরিবারের সবার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় কারো বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খসরুল আলম বলেন,‘তেলিগাঁও গ্রামে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। এই ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।’ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাহিরপুর থানার এস আই অপূর্ব কুমার সাহা বলেন,‘মামলাটির তদন্ত চলছে এবং সুমন পালকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ভিকটিম আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে। আসামী ও তার ভাইরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সুমনকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করায় সুমনের ছোট ভাই সুবেদ পালকে আটক করা হয়েছে।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn