ফয়সল আহমদ রুহেল:: 
অজোপাড়া গাঁয়ে জন্ম। শৈশব কাটে বৈরী পরিবেশে। শিশু অবস্থায় পিতৃবিয়োগে এক রকম অভিভাবকহীন। বাবা ছিলেন ধার্মিক। বাবার স্নেহ ভালোবাসা আর দৈনন্দিন কার্য পদ্ধতি শিশু অবস্থায়ই মুগ্ধ করেছিল। জীবনে প্রতিষ্ঠার পেছনে ছিল মায়ের ছোট্ট একটি কথা অন্তরে লালন। বর্ণাঢ্য জীবনে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। এতোসব বৈচিত্র্যময় আর নানান ঘাতপ্রতিঘাতের সংগ্রামী জীবনের নাম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মো. আশরাফুল ইসলাম। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার হাজী আছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। 
জন্ম : শ্রদ্ধেয় মো. আশরাফুল ইসলাম সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামে ১৯৬০ সালের ১৮ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৃত হাজী নছির উদ্দিন তালুকদার ও মাতা মোছা. জোবেদা খাতুন। পিতার পেশা ছিল গৃহস্থি। মো. আশরাফুল ইসলাম ছয় ভাই চার বোন এর মধ্যে অষ্টম।

শিক্ষা জীবন : মো. আশরাফুল ইসলাম ১৯৬৫ ইংরেজি সনে নিজ গ্রামের মাহমুদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭০ইং সনে জামালগঞ্জ দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যায়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে, ১৯৭২ ইংরেজি সনে আটগাঁও নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে, ১৯৭৪ ইংরেজি সনে জামালগঞ্জ দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। অনিবার্যকারণবশত: বিজ্ঞান বিভাগ পরিবর্তন করে ১৯৭৭ ইংরেজী সনে মানবিক বিভাগে ভীমখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭৯ ইংরেজি সনে তৃতীয় বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৭৯ ইংরেজি সনে মদনমোহন মহাবিদ্যালয় সিলেট এ একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি এবং ১৯৮১ ইংরেজি সনে এইচএসসি পাশ করেন। একই মহাবিদ্যালয় হতে ১৯৮৫ ইংরেজি সনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএ পাশ করেন। ১৯৮৫ ইংরেজি সনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ – ঢাকা – বাংলা বিভাগে এম এ ভর্তি এবং একই সাথে সেন্ট্রাল ল’কলেজে এলএলবি ক্লাসে ভর্তি হন। অবস্থান সূর্য সেন হল, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়। ১৯৯৫- ৯৬ শিক্ষা বর্ষে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়ে বি এড ডিগ্রি অর্জন করেন। 

কর্মজীবন : মো. আশরাফুল ইসলাম ১৯৮৮ ইংরেজি সনে পড়াশোনার পাশাপাশি সিলেটের বালাগঞ্জ দয়ামীর সদরুন্নেসা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগদান করেন। শিক্ষকতা ফাঁকে ইংরেজি বিভাগে এম এম প্রথম পর্ব শেষ করে চুড়ান্ত পর্ব আর পরীক্ষা দেয়া হয়নি। সহকারী শিক্ষক ইংরেজি হিসেবে ১৯৯৮ ইংরেজি পর্যন্ত কর্মরত থেকে স্বীয় চেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত (আটগাঁও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়) হাজী আছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৯৫ ইংরেজি সনে প্রধান শিক্ষক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন এবং পরবর্তীতে ১৯৯৮ ইংরেজি থেকে ২০২০ ইং সনের ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত নিয়মিত শিক্ষক হিসেবে অত্র বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত থেকে শিক্ষকতা হতে অবসর গ্রহন করেন। তিনি ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ব মানবাধিকার ফাউন্ডেশন কর্তৃক মাদার তেরেসা গোল্ডেন এওয়ার্ড পান। 

শৈশব : অজোপাড়া গাঁয়ে জন্ম নেয়া মো. আশরাফুল ইসলামের শৈশব বৈরী পরিবেশ, শিশু অবস্থায় পিতা হারা এক রকম অভিভাবক হীন বাউন্ডুলে জীবন, আষ্টেপৃষ্টে প্রতিকূলতায় বাঁধা ছিল। বাড়ির পাশেই গ্রামের প্রাইমারি স্কুল, আটটি গ্রাম মিলে একটি মাত্র বিদ্যালয়, গোটাকতক হাতে গোনা শিক্ষার্থী, মক্তব ছুটির সঙ্গে সঙ্গে নাকেমুখে কতক আহার গিলে তড়িঘড়ি স্কুলেগমন। ভাঙা চৌচালা টিনের ঘর, ভাঙা বেড়া, একটা উঁচু মাটির ডিবির উপর নড়বড়ে স্কুল ঘর। পাশেই একটা বড় আমগাছ তার সবগুলো বড় বড় মূল বের করে গুড়িটি এক ঝাকড়া ডাল-পাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে। হেমন্তে বর্ষায় ঐ মূলগুলো বসার আসন ছিল। এরই নীচে উঠান, শুষ্ক মৌসুমে এ উঠানে সাদা ধবধবে ধুলোয় শাহাদাত আঙুলে দাগ কেটে অক্ষর লেখা চর্চা চলে। ডাক করে কানফাটা চিৎকার চেচামেচির মধ্যদিয়ে নামতার শ্লোক আওড়ানোর মেলা। ঘরের ভেতর ভাঙা চেয়ার টেবিল, বেঞ্চ, ছাত্রছাত্রীদের গুণগুণ আর শিক্ষক মহোদয়গণের যতেœর সাথে পাঠদান। ফাঁকে ফাঁকে নারকেলি হুকোয় আয়েসি দম নিয়ে ধোঁয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে মধ্য বিরতি নেন শিক্ষক মহোদয়। সেই ফাঁকে কতক সাধু শিক্ষার্থীর পাঠশালা পলায়ন। তাঁর স্কুলে আসা সকাল সকাল, সঙ্গী নুরুজ্জামানকে নিয়ে পল্লীগীতি আর বাউল সংগীতের মূর্চ্ছনায় মুখরিত পাশের হিজল করচের জঙ্গল। পাঠশালা পাঠ আনন্দের সাথেই সমাপ্ত হয়। নানান রকম গ্রাম্য আচার অপসংস্কৃতি আর অবোধ সঙ্গীদের সঙ্গ, বড় ভাইবোনদের আদর সোহাগ আর এতিমের প্রতি সহানুভূতি তাঁকে এনে দিত অবাধ স্বাধীনতা। অর্জিত স্বাধীনতার অপব্যবহার জীবনকে করে তোলে বৈচিত্র্যময় আর নানান ঘাতপ্রতিঘাতের সংগ্রামী জীবন। আড্ডা আর পড়াশোনা পাশাপাশি চলে স্বেচ্ছায়, আর স্বেচ্ছাচারী জীবন হয়ে ওঠে প্রতিকূল বৈরীতায় অজ্ঞান শিশুটির পথের যাত্রায় অনিরাপদ। বর্ণাঢ্য জীবন তা-ই শত রকমের ব্যর্থতার মধ্যে সফলতার সংগ্রামে বড়োই কষ্টকর আর আশা নিরাশার দোলায় দুলতে দুলতে সামনে এগিয়ে চলা, কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি এক রথের চাকা। এতসব কঠিন বাস্তবতাকে টেনে নিয়ে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম নেয়া মো. আশরাফুল ইসলামের জীবন নিদারুণ নিষ্ঠুর বাস্তবতার কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে চলতে যাওয়া। তবুও হার না মানা জীবন সামনে এগিয়ে চলা। 
শিক্ষকতা জীবনের স্মৃতি : মো. আশরাফুল ইসলাম শিক্ষকতা জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, সেটা কাকতালীয়ভাবে মনের অজান্তেই জীবনে ঘটে যাওয়া এক বিস্ময়। তখন স্বৈরাচার এরশাদ সরকার পতন আন্দোলন, অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। চলে আসি বাড়িতে, কিছু দিন পর এক ছোট ভাই এর সাথে দেখা, সে একটি বিদ্যালয়ের গনিতের শিক্ষক। কুশলাদি বিনিময়ের পর এক সময় সে প্রস্তাব করে তার স্কুলে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করার। তার যুক্তি শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়াশোনা ও চালিয়ে যাওয়া যাবে, ঢাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো, মাঝে মাঝে যোগাযোগ করে কাজ চালিনো যাবে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও শিক্ষক হতে হলো। বেশ দক্ষতা আর খ্যাতির সঙ্গে চলে শিক্ষকতা। দশ বছরের শিক্ষকতা চলে সদরুন্নেসা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ-ই জীবনে অভিজ্ঞতা আর স্মৃতির আয়নায় অনেক ঘটনা ঘটনা বহুল চিত্রে চিত্রিত। তার মধ্যে একবার আমার স্কুলের এক ছাত্রকে একটি মাইক্রোবাস স্কুলে আসার পথে ঢাকা সিলেট মহাসড়কে পৃষ্ঠ করে যায়। পথে ব্যারিকেট ছাত্রছাত্রীসহ জনগণ প্রতিবাদ করছে। সকল শিক্ষক উৎকণ্ঠিত ব্যথিত। যান চলাচল বন্ধ, পথে পড়ে আছে ছাত্রের লাশ, পুলিশ না আসা পর্যন্ত লাশ এবং ব্যারিকেট কোনো টা-ই তোলে নেয়া যাচ্ছে না। দুই ঘণ্টার ও অধিক সময়, মহাসড়কের যানজট মহাকারে বাড়ছে। সরকারি কর্তৃপক্ষের কোনো ও সাড়াশব্দ নেই। উৎকণ্ঠায় মন মেজাজ একেবারে ই ঠিক নেই। ইতিমধ্যে জেনেছি যে পুলিশ আসতে আরও বিলম্ব হবে। এরই মধ্যে মন খারাপ অবস্থায় প্রাধশিক্ষক মহোদয় এর সামনে বসে উপায় খুঁজছি। চা স্টলের এক বালক এসে প্রধান শিক্ষক মহোদয় কে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাহেব এর নিকট যেতে বলে। এমনিতেই মন মেজাজ চেয়ারম্যান সাহেব এর প্রতি রুষ্টভাবাপন্ন, স্থানীয় চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর দায়িত্বের ব্যর্থতা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছিলেম না তার উপর একটি চা স্টলের ছেলেকে দিয়ে প্রধান শিক্ষক মহোদয়কে ডেকে পাঠানো কেমন যেন বেমানান আর অপমানজনক মনে হলো। মেজাজ সামলাতে পারলেম না, তাই প্রধান শিক্ষক মহোদয় যেতে পারবেন না বলে ছেলেটি জানিয়ে দিলাম। পরক্ষণে ঘণ্টা খানিক পর পুলিশ আসলে ব্যারিকেট উঠিয়ে নেয়া হলো। পুলিশ লাশ নিয়ে চলে যায়। দুই দিন পরিবেশ উত্তপ্ত থাকলো, পরবর্তীতে বিদ্যালয়ে সালিশ বসে চেয়ারম্যান সাহেব এর সাথে একটা আপোষ মিমাংসা হলো। বাস মালিক ক্ষতি পুরণের আঞ্জাম দিয়ে মৃত ছেলেটির স্মরণে দুর্ঘটনাস্থলে একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করে দিলেন। সকলের জোরালো প্রতিবাদ ছেলেটিকে স্মৃতি স্তম্ভের নাম পলকে বাঁচিয়ে রাখলো। সন্তান হারানো ব্যথায় ব্যথিত হৃদয় আজও ক্ষণে ক্ষণে গুমরে মরে।

শিক্ষা জীবনের স্মৃতি চারণ : মো. আশরাফুল ইসলামের চাচাত বড় ভাই প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আর-ও দু’জন শিক্ষক ছিলেন, প্রত্যেকেই পাঠদানে অতি আন্তরিক, যথাসময়ে স্কুল করায় তাঁদের কোনও উদাসীনতা নেই। পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষা দেন তিনজন। বাড়তি সময়ে বেশি বেশি পড়াশোনা দরকার তাই প্রধান শিক্ষক বড় ভাই তাঁর ঘরে একজন আর মা. আশরাফুল ইসলামের ঘরে একজন ছাত্রের লজিং দিয়ে অতিরিক্ত সময় যতেœর সাথে পাঠদান করতেন। পাঠদানের আন্তরিকতায় এতটুকু ও কমতি রইলো না, কোন রকম আর্থিক সুবিধা না নিয়ে-ই প্রায় সারাটা বছর তাদের তিনজনকে চমৎকার পাঠদান করাতেন। স্যাররা প্রায়ই অনেক গরীব ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষার ফি না নিয়েই তাদের পরীক্ষার সুযোগ দিতেন। স্যারদের আন্তরিকতার পাশাপাশি শাসন আর সোহগেরও কমতি ছিল না। পড়াশোনা ঠিক মতো হতে হবে তবে এতে শাসনের মাত্রা সীমাবদ্ধ থাকলেও কোনো রকম বেয়াদবিকে প্রশ্রয় দেয়া হতো না। আদব কায়দায় যেন কোনোও শিক্ষার্থী সীমালঙ্ঘন না করে সেদিকে কড়া নজরদারি থাকতো। শাসন করার ক্ষেত্রে অভিভাবকগনের পক্ষ থেকে কোন ও বাধা বিপত্তি ছিল না। অনেকেই এমনটি বলতেন ‘মানুষ করতে যা দরকার আপনারা তাই করবেন, শুধু হাড়গুলো থাকলেই চলবে।’ এমন শাসনের ভয়ে শিক্ষার্থীরা সদাসর্বদা সতর্কতার ভেতর দিয়ে বড় হয়ে ওঠে। আর এ থেকেই ছাত্র- শিক্ষক এর একটা শালীনতা তৈরি হয়ে সুশৃঙ্খল সুবিন্যস্ত পরিপাটি সমাজ গড়ে উঠেছিল আর শিক্ষক হিসেবে গুরুজনের মর্যাদা সমুন্নত থেকেছে।
হাইস্কুল জীবনে দু’জন শিক্ষক মো. আশরাফুল ইসলামকে বিকেলে ইংরেজি এবং গণিত তাদের বাসায় ডেকে নিয়ে পড়াতেন। প্রাইভেট পড়া বলতে কোনো বিষয় আছে বলে তিনি জানতেন না। নীতি নৈতিকতায় সুদৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ী ছিলেন জামালগঞ্জ দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রদ্ধেয় সর্বজনাব গোলাম কিবরিয়া স্যার। তাঁর সুদৃঢ় মজবুত ভিত্তির ওপর গড়ে উঠে বিদ্যালয়টি। তৎকালীন সময়ে জেলার শ্রেষ্ট বিদ্যালয় হিসেবে খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান তাঁর সুদক্ষ কর্ম নৈপুণ্যের বদৌলতে-ই হয়েছিল। তখন তারা কয়েকজন এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। ফলাফল প্রকাশ হলে সকলেই তা মাথা পেতে মেনে নেয়া টা-ই বিধান বলে জানতেন। তবুও এক ছাত্র বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে গেলো। দৈবাৎ গোবিষ্ঠা খাইয়ে বাঁচিয়ে তোলা হলো। অনেকেই তার বাবাকে প্রধান শিক্ষক মহোদয়কে অনুরোধ করে পাশ করিয়ে দিতে বললেন, তিনি ছিলেন সেই সময়ের সাবেক চেয়ারম্যান এবং এলাকায় প্রভাবশালী ব্যক্তি। সকলে ভাবলেন এমন ক্ষমতাবান ব্যক্তির সুপারিশ বা অনুরোধ প্রধান শিক্ষক মহোদয় প্রত্যাখ্যান করবেন না। কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব একজন নীতিবান মানুষ হিসেবে অন্যের নীতিতে আঘাত করতে চাইলেন না। তিনি সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন এমন কু-পুত্র মরে গেলে ও তাঁর পক্ষে প্রধান শিক্ষক মহোদয়কে অনুরোধ করতে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁর ছেলে আর দ্বিতীয় বার আর মরতে গেল না। তিনি একথাও জানতেন সুদৃঢ় প্রত্যয়ের অধিকারী গোলাম কিবরিয়াকে তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে একচুল নাড়ানো যাবে না এবং তিনি তাঁর সে ইতিহাস জানতেন। কালের বিবর্তনে সেই শক্তিধর প্রধান শিক্ষক আজও বেঁচে আছেন হাজারো শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের কাছে। স্যার ছিলেন সুঠাম শারীরিক গঠন আর মানানসই পরিচ্ছন্ন সাজগোজ যুগল ভ্রুতে ডাগর ডাগর চোখ দু’টো সদা সতর্ক চঞ্চল। গুরুগম্ভীর হাঁটাচলায় নুরানি চেহারায় ফোটে আছে এক চমৎকার ব্যক্তিত্ব। ইস্ত্রি করা হাফহাতা সাদা শার্ট আর চকচকে প্যান্টে সর্বদাই ফিটফাট আধুনিক-শিক্ষিত মার্জিত রুচির বহিঃপ্রকাশ সাধারণের কাছে এক শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় মূর্তিমান।

তাঁর মার্জিত অঙ্গভঙ্গি আর মিষ্টি মধুর আলাপচারিতা মুগ্ধ করতো সবাইকে। ভাব এমন ছিল যে যে-কেউ ইচ্ছে করলেই তাঁর সঙ্গে আলাপ জমাতে সাহস পেতেন না। তিনি ভয়ংকর ছিলেন না মোটেই তবুও অনেকেই ভয়ার্ত থাকতেন। তাঁর সৃজনশীল কর্মকান্ডের বদৌলতে জামালগঞ্জ কলেজ, জামালগঞ্জ জামে মসজিদ, জামালগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি এবং জামালগঞ্জ অডিটরিয়ামের জন্ম তাঁকে অনন্তকাল বাঁচিয়ে রাখবে। সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ স্কুলের নিদিষ্ট প্রকল্পে খরচ করে উদ্বৃত্ত অর্থ ফেরত দিয়ে মহুকুমা প্রশাসক এ-র নিকট সম্মানিত হয়েছিলেন। এমন বিরল দৃষ্টান্ত তাঁর জীবনে অনেক রয়েছে। তিনি শুধু একজন শিক্ষক হিসেবেই নয় একজন সমাজ উন্নয়নের সুদক্ষ কারিগর হিসেবে সৎ ন্যায়পরায়ন এবং ধার্মিক আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসেবে সর্বজন শ্রদ্ধেয় অনুসরণীয় উপমা হয়ে আজও প্রদীপ্ত আছেন। এ রকম আদর্শকে লালন করে জীবন পথে এগিয়ে যাওয়া এক সুকঠিন বাস্তবতা। এই কিংবদন্তির শিষ্য হতে পেরে এটাই জীবনের সার্থকতা মো. আশরাফুল ইসলামের।

এক কথায় তখনকার সময়ে শিক্ষকগণ টাকার কাঙ্গাল ছিলেন না, তাদের কর্মযজ্ঞে এতো বেশি যত্নশীলতা ছিল যে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত না হয়ে উপায় ছিল না।

শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মো. আশরাফুল ইসলাম মনে করেন, আজকের দিনের বাণিজ্যিক লেনদেন ছাত্র- শিক্ষকদের মধ্যে ক্রেতা বিক্রেতার সম্পর্কের পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। শাসনের সীমাবদ্ধতায় আইনবিদগণ বেতের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার কারণে সমাজের উশৃংখলতা, উগ্রতা শ্রদ্ধা ভালবাসার মাধুর্য্যরে সমাধি রচিত করেছে। তখনকার সময় বিদ্যালয়ে স্যারদের টেবিলে বেতের টুকরোগুলো সাজানো থাকতো আর এটি দেখেই দুষ্টমতি ছাত্রেরা সত্তর ভাগ সোজা হয়ে চলতো। অহেতুক মারধর করে শিক্ষক মন্ডলী কষ্মিক কালেও অবিচার করতেন না। বর্তমানে পরিবেশ পরিস্থিতির যাতাকলে পৃষ্ঠ হয়ে অনেকেই আর নীতি নৈতিকতার স্বার্থ বজায় রেখে চলতে পারছে না। 

মর্মান্তিক শোকের স্মৃতি : মো. আশরাফুল ইসলামের শৈশব স্মৃতির ভীড়ে অনেকগুলো স্মৃতি ই বিস্মিত হবার নয়, তার মধ্যে আট বছর বয়সে পিতৃবিয়োগ এক মর্মান্তিক শোকের স্মৃতি। বাবার বয়স বার্ধক্যের কোটায়। হাজী নছির উদ্দিন তালুকদার বৃদ্ধ বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে নানান রকম ব্যাধিতে ভোগেন। তবুও তাঁকে তাঁর অভ্যেসগত কারণে নামাজ রোজা ইবাদত বন্দেগিতে কোনো উদাসীনতা বা আলস্য কোনো টা-ই কাবু করতে পারেনি। তিনি ছিলেন তাঁর বাবার রেখে যাওয়া পর্যাপ্ত তালুকের উত্তরসূরি। তাছাড়া মুন্সি সাহেবের পুত্র হাজী সাহেব কতকটা সুশিক্ষিত মৌলভী শ্রেণীর পরহেজগার মানুষ। উত্তরাধিকারে প্রাপ্ত তালুক দেখা শোনা আর ইবাদত বন্দেগিতেই তাঁর সময় অতিবাহিত হতো। অবৈতনিকভাবে পাড়ার মসজিদে এবং স্থানীয় ঈদগাহে ইমামতি করতেন, মো. আশরাফুল ইসলামের জানা মতো তাঁর বাবা তাহাজ্জুদ এর নামাজ কাজা করতেন না। বাবার স্নেহ ভালোবাসা আর দৈনন্দিন কার্য পদ্ধতি মো. আশরাফুল ইসলামকে শিশু অবস্থায়ই মুগ্ধ করে ছিলো। একজন ওলির দরজার মানুষ হিসেবে সকলের কাছেই তিনি সমাদৃত ছিলেন। তাঁর সুদক্ষ পরিচালনায় ঘরগৃহস্থালীর কাজের গোছগাছ আর পরিপাটি গৃহস্থীর কারুকাজ দেখে সকলেই মুগ্ধ হতেন, সেই সাথে তিনিও। বাবার অসুস্থতা ক্রমেই বাড়তে থাকে। সবসময় বাবার কাছাকাছি থাকতেন।

ঐ দিন স্কুলে যান, বারটা একটার দিকেকে একজন সংবাদ দিলে তাড়াতাড়ি বাড়ি যাওয়ার জন্য। দ্রুত বাড়ি গিয়ে বাবাকে মৃত্যু শয্যায় দেখে কাতর হয়ে তাঁর পাশে বসলেন, বাবা অপলক তাঁর দিকে চেয়ে কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলেন না, এরই মধ্যে বাবা পবিত্র কালেমা পড়তে পড়তে কিছুক্ষণের মধ্যে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করলেন, তাঁর সে নিঃশ্বাস এ-র মৃদু একটা শব্দ কানে বাজলে, কলিজা ছিঁড়ে বিলাপ করতে থাকলে অন্যেরা তাঁকে বাবার কাছে থেকে সরিয়ে নিলেন। সে দিন এ-র সেই অসহায় কান্না আজ-ও মো. আশরাফুল ইসলামকে পীড়িত করে। মা ভাই-বোনের আহাজারি এমন করে অন্তরে আঘাত হানলে বারবার এমন ভয়ংকর কান্না আর যেন কাঁদতে না হয় সেজন্যে প্রার্থনা করতেন। এরপরও মা দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর বেঁচে থেকে ইহলোক ছেড়ে চলে গেলেন। ধৈর্যশীলা মা সন্তান বাৎসল্যে আর পরোপকারিতায় অনন্য বৈশিষ্ট নিয়ে হৃদয়ে লালন করেছেন, কোনো দিনও বাবার অবর্তমান তাদেরকে বুঝতে দেননি।

কলেজে পড়া অবস্থায় প্রতি মাসে একবার বাড়ি এসে পড়ার খরচের টাকা নিতেন মো. আশরাফুল ইসলাম। পথের দূরত্ব আর যানবাহনের নিয়ম মেনে প্রতিবারই রাত দশ-টার পর বাড়ি পৌঁছাতে হতো। দরদী মা সেই রুটিন জানতেন, গ্রামের বাড়িতে রাত দশ-টা অনেক রাত, মা কুপি বাতিটা জ্বালিয়ে দরজা ফাঁক করে বসে থাকতেন। সাংঘাতিক সেই কষ্ট মাকে এতটুকু বিচলিত করে না, মা প্রতিদিন এমনি করেই তাদেরকে আগলে রেখেছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর মা মো. আশরাফুল ইসলামকে একটি ছোট্ট সতর্ক বাণী শুনিয়ে জীবন পথের যাত্রাকে সুশোভিত হতে দিয়েছিলেন। মা বলছিলেন- বাবারে লোকে বলে শিশুকালে বাপ মারা গেলে সন্তান বাপজাউট্টুয়া (অতিরিক্ত খারাপ) হয়। মায়ের এ-ই ছোট্ট কথাটি আজীবন অন্তরে লালন করে সতর্ক থেকেছেন।

মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, মহান আল্লাহ পাক এ-র মেহেরবাণীতে সুশীল তারুণ্য আর যৌবনের উদীয়মান সময় পার করেছি নিষ্কণ্টক। জীবনে প্রতিষ্ঠার পেছনে অনেক নাফরমান অকৃতজ্ঞের হিংস্রতা যতবার যত রকমে কষ্ট দিয়েছে ততবারই হেঁসে উড়িয়ে দিয়েছি অবোধের ব্যর্থ আস্ফালন ভেবে। পরিণামে ঐ হিংসুকেরা নিজে থেকে নিষ্ঠুরতম অপমান আর অপ্রাপ্তির বঞ্চনায় মর্মে মর্মে মরেছে। আমার আত্মতুষ্টি আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে স্রষ্টার আদরের বান্দা হিসেবে। তিনি হাজারও শুকরিয়া মহান খোদার পাক দরবারে করেন।

স্যারের প্রেরণায় কবি সাহিত্যিক : মো. আশরাফুল ইসলামের চলমান জীবনে ঘটে যাওয়া কর্মকান্ডের সাথে সঙ্গী হয়ে একজন মহান শিক্ষক হিসেবে ঠাঁই নেন মরহুম গোলাম মর্তুজা স্যার। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ্য সূচীতে মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদ বধ কাব্যের কবিতাংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল, সেই কবিতা পড়াতে গিয়ে স্যার কবি মধুসূদন দত্ত এর ঘটনা বহুল জীবনের বর্ণনা মো. আশরাফুল ইসলামকে মুগ্ধ করে।

সাহিত্য প্রেমী স্যার কবিকে যে রূপ উচ্চাঙ্গের মর্যাদা দিয়ে উপস্থাপন করতেন তা মো. আশরাফুল ইসলামকে অনুপ্রেরণা যোগায়, স্যারকে অনুসরণ করতে মন চায় তাই তিনি ও স্বদেশ প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে আটগাঁও নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় অঙ্গনের বিশাল করচ গাছটির ছায়ায় বসে চৈত্র দুপুরে কয়েক চত্র কবিতা লিখতে চেষ্টা করেন। কিন্তু একলাই লিখেন আবার একলাই এ-র মান বিচার করেন। বিচারে উত্তীর্ণ না হওয়াতে লিখা আর অগ্রসর হয় না। পরবর্তীতে ১৯৭৯ ইংরেজি সনে এইচএসসি পড়ার কালে এক সাহিত্য পাগল শফিকুর রহমান চৌধুরীর অনুপ্রেরণায় ‘সোহাগ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ’ নামে একটা সংগঠনে তাকে সদস্য করে নেন। সংগঠনের সভাপতি ছিলেন মখলিছুর রহমান মিনু। ঐ বছরে ষোল ডিসেম্বর ‘সোহাগ’ নাম দিয়ে একটি মেগাজিন প্রকাশ করা হয়, তাঁর প্রথম কবিতা ছাপার অক্ষরে চোখের সামনে তাঁকে এই প্রথম বিস্মিত করে।

এ থেকে চলতে শুরু সাহিত্য চর্চার। পরবর্তীতে স্বীয় সম্পাদনায় ‘তরঙ্গ হিন্দোল’ ১৯৮০ ইংরেজি থেকে ১৯৮৫ ইংরেজি পর্যন্ত প্রতিটি জাতীয় দিবসে প্রকাশ হতে থাকে। মাঝে ‘মৌসুমী সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ’ নামক সংগঠন এর সভাপতি নির্বাচিত হন। ওখান থেকে ও ‘মৌসুমী’ নামে ম্যাগাজিন প্রকাশ পায়। সিলেটের সাহিত্য অঙ্গনে পদচারণা যথেষ্ট জোরালো ভূমিকা রাখতে গেলে স্থানীয় কবি সাহিত্যিক গণের কাছে পরিচিতি লাভ করেন। তখনকার রেডিও বাংলাদেশ সিলেট থেকে প্রচারিত ‘আমরা নবীন’ অনুষ্ঠানে কবিতা ও ছড়া পাঠে অংশ নিয়ে কিছুদিন কাজ করেন। ১৯৮৮ ইংরেজী সনে জামালগঞ্জ স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ‘বজ্রকণ্ঠ’ নামে পনের অগাস্টে প্রকাশিত সাহিত্য সাময়িকী সম্পাদনা করেন। নানান প্রতিকুলতার ভেতর দিয়ে চলমান জীবনে সাহিত্য চর্চার অনুশীলন ব্যাহত হয়েছে, বর্তমানে দু’টো পান্ডুলিপি ছাপাখানায় দিয়েছেন। আশা করা হচ্ছে কিছু দিনের মধ্যে তা প্রকাশ পাবে।

পারিবারিক : শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মো. আশরাফুল ইসলাম পারিবারিক জীবনে দুই সন্তানের জনক। বড় ছেলে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আর ছোট ছেলে এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগে ২০২২ খ্রি. ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে।

গুনী এই শিক্ষক ২০২৩ সালে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশন সুনামগঞ্জ জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়নে জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় জামালগঞ্জ উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।

সুনামগঞ্জ জেলার ১১ উপজেলার ২২ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)।

উল্লেখ্য, ফাউন্ডেশন সুনামগঞ্জ জেলার ২২ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জনকে আর্থিক সহযোগিতা এবং জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকে ভুষিত করবে সংস্থাটি।

শ্রদ্ধেয় মো. আশরাফুল ইসলাম প্রতিনিয়ত অকৃপণভাবে শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন। মানুষের বিপদে পরামর্শ প্রদান, দিকনির্দেশনা, সহযোগিতা, সহমর্মিতায় এগিয়ে আসেন সর্বাগ্রে। মো. আশরাফুল ইসলাম শিক্ষকতা জীবনেও বছরের শুরু হতে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন সকাল ন’টায় স্কুলে ডেকে এনে একঘণ্টা বিনা টাকায় পাঠদান করাতেন। অর্থের প্রয়োজন তোও ছিল, তাঁকে সে প্রয়োজন লোভী বানাতে পারেনি। চাহিদা আর সন্তুষ্টির সমন্বয় করে আয় বুঝে ব্যয় করতে শিখলেই জীবনে আত্মতুষ্টি লাভ করা যায়। নৈতিক অবক্ষয় রোধে আদর্শ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে পারাটাই জীবনের সার্থকতা-এই উপলব্ধি বুকে ধারন করে দীর্ঘদিন শিক্ষকতার মহান পেশায় ছিলেন। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মো. আশরাফুল ইসলাম মানুষকে মানুষ হিসেবে তৈরি করতে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্রের দক্ষ কারিগরের মতো আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন। আমরা এ মহান শিক্ষকের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করছি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn