হেলিম উদ্দিন আহমদ-
নানা বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী, ভাষা ও ধর্মের মানুষ বহুকাল থেকেই আমেরিকায় বসবাস করে আসছেন। সে তুলনায় বাংলাদেশিরা নবাগত। বলতে গেলে ৯০’-এর দশক থেকে অপি-ওয়ান, ডিভি লটারির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশি আমেরিকায় অভিবাসী হয়ে আসছেন। নবাগত হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশিরা অন্য বহু জনগোষ্ঠীর চেয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছেন। আমেরিকায় কর্মঠ ও নিষ্ঠাবান জাতি বাংলাদেশিরা এরই মধ্যে সুনাম ও স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। কর্মস্থলে তাদের সততা ও একাগ্রতা সর্বমহলে প্রশংসিত।  অভিবাসীদের মধ্যে সর্বাধিক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন ইহুদিরা। এরা পৃথিবীর সব উন্নত দেশে তাদের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। অনেক দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি ইহুদিরা নিয়ন্ত্রণ করেন। আমেরিকাতে তাদের প্রভাব ও দাপট সর্বত্রই দৃশ্যমান। আমেরিকার অধিকাংশ ব্যবসা, শিল্প-কারখানা, শিক্ষা, আবাসন ও পরিবহন খাত তাদের দখলে। আদালত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রাজনীতি, প্রচারমাধ্যম থেকে শুরু করে হোয়াইট হাউস; কোথায় তাদের উপস্থিতি নেই। অনেকেই মনে করেন আমেরিকার অদৃশ্য মূল চালিকাশক্তি হলো ইহুদি জনগোষ্ঠী। সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশিরা আমেরিকাতে একেবারেই নগণ্য। আমেরিকার গুটিকয়েক নগরীতে বাংলাদেশি কমিউনিটির সরব উপস্থিতি রয়েছে। বর্তমানে আমেরিকার মূলধারায়ও নিজেদের উপস্থিতির জানান দিচ্ছেন বাংলাদেশিরা। এখানে নতুন প্রজন্ম যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে অচিরেই তাদেরকে আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ পদ ও অবস্থানে দেখা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আমেরিকার নিউইয়র্ক নগরীতেই সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশির বাস। অধিকাংশ বাংলাদেশি পেশাগতভাবে অদক্ষ হওয়ায়, তারা সাধারণত অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ায় পাওয়া যায় কিংবা কম মূল্যে কেনা যায় এমন এলাকাগুলোকে বসবাসের জন্য বেছে নেন। বন্ধু-বান্ধবদেরও সে ধরনের এলাকায় যাওয়ার পরামর্শ ও উৎসাহ জোগান। তাদের ব্যাপক উপস্থিতি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে সময়ের ব্যবধানে সেসব এলাকা উন্নত হয়ে উঠছে। ব্রঙ্কস, জ্যামাইকার মতো জায়গা এক সময় বলতে গেলে ‘অনাবাদি’ই ছিল। এসব এলাকাকে বসবাসের জন্য সুবিধাজনক বলে মনে করা হতো না। কিন্তু বাংলাদেশিদের উপস্থিতি বাড়তে থাকলে ওই সব জায়গাতেও নতুন নতুন স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, দোকান-পাটসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা গড়ে ওঠে। এই সব এলাকা এখন সব কমিউনিটির কাছে আকর্ষণীয় হিসেবে বিবেচিত ও স্বীকৃত। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এসব এলাকার বাসযোগ্য হয়ে ওঠার পেছনে বাংলাদেশিদের অবদান অনস্বীকার্য। 

ব্রুকলিনের ওজনপার্ক এলাকায় এক সময় দিন-দুপুরে যাওয়াকেও অনেকে নিরাপদ মনে করতেন না। বাংলাদেশিরা সেই এলাকাকেও পাল্টে দিয়েছেন। এখন গভীর রাতেও ওজনপার্ক জেগে থাকে। সড়কে নারী-পুরুষ একাকী হেঁটে বেড়ান। একইভাবে জ্যামাইকার লিবার্টি অ্যাভিনিউর চেহারাও পাল্টে দিয়েছেন বাংলাদেশি অভিবাসীরা। ২০০৩ সালেও এলাকাটিতে চলাফেরা নিরাপদ ছিল না। দিনেই ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি হতো। বহু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে সেখানে। আজ সেগুলো ইতিহাস। বিপদমুক্ত। বসবাসের আকর্ষণীয় ঠিকানা এখন জ্যামাইকার লিবার্টি অ্যাভিনিউ। শত শত বাংলাদেশি এখানে বাড়ির মালিক। ভাড়াটেরও অধিকাংশই বাংলাদেশি। গড়ে উঠেছে মসজিদ, যেখানে শত শত মুসল্লি শুক্রবারে একত্রিত হন। একই পরিবর্তন এসেছে ব্ রঙ্কসের পার্কচেস্টারে। যেদিকেই তাকানো যায় বাংলাদেশি মালিকানার দোকানপাট নজরে পড়ে। সব ধরনের দোকান। এসব দোকানের গ্রাহকের কাতারেও রয়েছেন বাংলাদেশিরা। রয়েছেন অন্য কমিউনিটির মানুষও।বাংলাদেশিদের উপস্থিতি যে শুধু নিউইয়র্ক নগরীর চেহারাই পাল্টে দিয়েছে, তা-ই নয়। নিউইয়র্ক নগরী থেকে ৪০০ মাইলেরও বেশি দূরে বাফেলো। এই তো ২০১০ সালেও এটা ছিল ভুতুড়ে এলাকা। আজ সেই এলাকাই বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে মুখরিত। বদলে গিয়েছে দৃশ্যপট। সঙ্গে রয়েছে নেপাল ও তিব্বত থেকে আসা অভিবাসীরাও। একইভাবে মিশিগানের ড্রেটয়েটসহ অন্যান্য পরিত্যক্ত বহু শহরকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন বাংলাদেশিরা। কোনো কোনো শহরের নগর সরকারে এখন বাংলাদেশিদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। রীতিমতো ভোটের মাধ্যমে তাঁরা জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। তাঁদের সন্তানেরা কোন উচ্চতায় উঠবে, তা সময়ই বলে দেবে। সম্ভাবনার দেশ আমেরিকায় বাংলাদেশিরা যে অগ্রযাত্রা শুরু করেছেন, তা উৎসাহ ও উদ্দীপনার।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn