নির্বাচন করতেই হবে। না করলে তোমাদের জেলে ধরে নিয়ে যাবো এ রকম কথা আমরা কোন রাজনৈক দলকে বলতে পারিনা বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কী আসবে না, এটা তাদের দলের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে  বিএনপি দলীয় সিদ্ধান্তে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আসেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোন পার্টি নির্বাচন করবে, আর কোন পার্টি করবে না, এটা সম্পূর্ণ তাদের ওপর নির্ভর করে। এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। আমরা কোনও দলের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারি না যে, ’ বুধবার (২ মে) গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাংবাদিক শাবান মাহমুদরে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফর উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ‘দলীয় চেয়ারপারসন মুক্তি না পেলে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না’, বিএনপি নেতাদের এই মন্তব্য প্রসঙ্গে শাবান মাহমুদ তার প্রশ্নে জানতে চান এক্ষেত্রে সরকার তাকে (খালেদা জিয়াকে) মুক্তি দিয়ে নির্বাচনে আনার কোনও উদ্যোগ নেবে কিনা? জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের নেত্রীকে তো আমি জেলে পাঠাইনি। রাজনৈতিক কারণে আমি জেলে পাঠালে ২০১৫ সালে যখন হুকুম দিয়ে দিয়ে মানুষ হত্যা করলো, তখনই তাকে গ্রেফতার করাতাম। কিন্তু আমি রাজনৈতিকভাবে এটা করতে চাইনি। তার ছেলে যখন মারা গেলো, আমি গেলাম, ঢুকতে দিলো না। ভেতর থেকে তালা দিয়ে রাখলো। অন্য কোনও দেশ হলে কী করতো— ওই সরকার বাইরে থেকে আরেকটা তালা দিয়ে দিতো, যাতে ওখান থেকে আর কেউ বেরোতে না পারে। আমিও ইচ্ছা করলে সেটা কিন্তু করতে পারতাম। ইচ্ছা করলে ঢুকতে পারবে না, বেরোতেও পারবে না। কিন্তু আমি তা করিনি। আমি রাজনৈতিকভাবে গ্রেফতারও করিনি। হয়রানিও করিনি।’

খালেদা জিয়ার জেলে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটা মামলা ১০ বছর চলেছে। ১৫২ বার সময় নিয়েছে। বিএনপির বড় বড় আইনজীবীরা কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি যে, খালেদা জিয়া এতিমখানার টানা এনে দুর্নীতি করেননি। কোর্ট রায় দিয়েছে, এখানে আমাদের কাছে দাবি করলেও তো কিছু হবে না। কোর্ট রায় দিয়েছে, আইনগতভাবে তিনি কারাগারে গেছেন। আইনগতভাবে এটা মোকাবিলা করতে হবে। এখানে আমাদের কাছে দাবি করলে আমি কী করতে পারবো। আমি তো তাকে গ্রেফতার করাইনি।’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মেইড সার্ভেন্ট থাকার সুযোগ দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমি একটা অন্যায় কাজ করেছি, একজন নিরাপরাধ মানুষ ফাতেমা বেগমকে তার সঙ্গে থাকতে দিয়েছি। ওনার সঙ্গে মেইড সার্ভেন্ট লাগবে। সাজাপ্রাপ্ত কোনও আসামিকে কবে কে কোন দেশে মেইড সার্ভেন্ট সাপ্লাই দিয়েছে। তাদের সেই দাবিও মেনে নিয়ে তা দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন সময়ে স্বোচ্চার দেখি। কিন্তু একজন নিরাপরাধ মানুষ খামাখা কেন জেল খাটবে, তা নিয়ে তাদেরকে স্বোচ্চার হতে দেখি না। মানবাধিকার সংস্থাকে টু শব্দ করতে দেখি না। তারপরও যদি ভালো বেতনভাতা দিতো কথা ছিল। তার ওষুধ রাখার জন্য ফ্রিজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর কী কী শুনবেন।’

নির্বাচনে জয়-পরাজয় প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘নির্বাচনে জেতাটা আমি জনগণের ওপর ছেড়ে দিলাম। তারা যদি মনে করে উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখার দরকার তাহলে নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। আমরা আবারও ক্ষমতায় আসবো। যে পরিকল্পনাগুলো নিয়েছি তা বাস্তবায়ন করবো।’ তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা বৃহৎ দল। নির্বাচন হলে আমরা জয়ী হবো, এটা সব সময়ই বলবো। এটা আশাও করবো। এত উন্নয়ন করার পরও যদি জনগণ ভোট না দেয়, আর না আসতে পারি— আমরা না এলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা যে নষ্ট হয়ে যায়, তা আপনারা আগেই দেখেছেন। ওইভাবে যদি বাংলাদেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে না চান, তাহলে নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগকে সবাই ভোট দেবেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে।’ তারেক রহমানকে দেশে আনতে আনতে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলার বিষয়টি পুর্ণব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সাংবাদিক শ্যামল দত্তের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই প্রচেষ্টা থাকবে এ ধরনের অপরাধীদের বাংলাদেশে ধরে নিয়ে আসার। বৃটিশ সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি।তাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে আইনিভাবে যেটা করার, আমরা তা করবো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারেক রহমান একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তার অপরাধগুলোর বিষয়ে এফবিআইয়ের প্রতিনিধি এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। সে দুটো মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, আরও মামলা রয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিদেশের মাটিতে বসে প্রতিদিন আন্দোলন করে। সাজাপ্রাপ্ত ছেলে আন্দোলন করে মায়ের মুক্তির জন্য। আমরা অনেক দেশ থেকে এ ধরনের আসামি ধরে নিয়ে আসি বা আনার চেষ্টা করি। সেখানে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে।  আমরা সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে নিয়ে আসবো।’ তারেক রহমানকে দলীয় চেয়ারম্যান করার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি কী দলে একজন উপযুক্ত নেতৃত্ব বাংলাদেশে খুঁজে পেলোনা— যে একজন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে চেয়ারম্যান করা হলো। সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে চেয়ারম্যান করা, রাজনীতিতে এত বড় দেউলিয়াত্ব আর কী আছে?  আমরা রণক্ষেত্রে যুদ্ধে জড়াতে চাই না, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে সৌদি আরবে গিয়ে সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোথায় কী হচ্ছে না হচ্ছে এটা তাদের ব্যাপার। আমরা কিন্তু ওর সঙ্গে জড়াতে চাই না। সৌদি আরবের বাদশা আমাকে দাওয়াত দিয়েছেন, আমি গিয়েছি। আমাদের সেনাবাহিনীর প্রধানও গিয়েছিলেন। আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি। আমরা তাদের বলেছি—আমরা কোনও যুদ্ধে জড়াতে চাই না। তাদের অন্য যে ধরনের সহযোগিতা দরকার আমরা করবো। তাদের মাইন অপসারণের সমস্যা আছে, কিছু কনস্ট্রাকশনের কাজ আছে, আমরা তাতে সহযোগিতা করতে চেয়েছি। তবে রণক্ষেত্রে আমরা যুদ্ধে জড়াতে চাই না। একমাত্র জাতিসংঘের মিশনে যেভাবে শান্তিরক্ষায় যাই, যদি সেই ধরনের কোনও বিষয় হয়, তখন বাংলাদেশ যাবে। তাছাড়া, বাংলাদেশ যুদ্ধে জড়াবে না। আমি যেটা করি তা পরিষ্কারভাবেই করি।’

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় অর্থনৈতিকভাবে অবশ্যই একটা চাপ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী  বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা যেটা করছি, তা মানবতার স্বার্থেই করছি। সেই শিশু, নারী বয়োবৃদ্ধরা যেভাবে এসেছিল, তখন মানিবক কারণে আমরা আশ্রয় না দিয়ে পারিনি। রোহিঙ্গাদের কারণে অর্থনৈতিকভাবে একটা চাপ পড়বে এটা ঠিক কথা। আমরা তাদের জন্য ভাষাণচরে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট নিয়েছি। কার্ড করে দিয়েছি। খাদের ব্যবস্থা করছি। এতে নিশ্চয়ই আমাদের টাকা কিছু খরচ হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে অবশ্যই একটা চাপ পড়বে।’ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, ‘ব্যাপকভাবে তারা এসেছে এবং সহযোগিতা করেছে। যে কারণে খুব একটা চাপ আমাদের ওপর পড়েনি। আমরা সহযোগিতা করছি বলেই সবাই এগিয়ে আসছে। তারা বলছে কী লাগবে বাংলাদশের, আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। আর তারা সহযোগিতা করছে বলেই মনে করছি, এতটা সমস্যা হবে না। তাছাড়া ভুলে যান কেন, বিএনপি আমলে ৬১ হাজার কোটি টাকা বাজেট ছিল। এখন চার লাখ কোটি টাকার বাজেট দিচ্ছি। কাজেই আমরা দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে পারবো। আমাদের যেটা চাপ আছে, সেটা আমরা মোকাবিলা করতে পারবো। আমার দেশের মানুষ প্রস্তুত। তারা ভাগ করে নেবে। আমাদের সে আতিথেয়তা আর  মানবতাবোধ এখনও হারিয়ে যায়নি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে বর্ষাকাল। আমাদের দেশে বন্যা, ঝড়, বৃষ্টি, কালবৈশাখী হচ্ছে। এই যে মানুষগুলো বসবাস করছে ক্যাম্পে, এটা অত্যন্ত কষ্টকর। আমাদের প্রায়ই ল্যান্ড স্লাইড (ভূমিধস) হয়, এটাও তো সমস্যা, আমাদের নরম মাটি। তাদের জন্য ভাসানচরে বসতির ব্যবস্থা করেছি। আগামী বর্ষার আগেই যারা পাহাড়ে বা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যারা বাস করছে, তাদেরকে সেখানে সরিয়ে নিতে পারবো। ঘরবাড়ির ডিজাইন তাদের দেখালাম, তারা আমাদেরকে যথেষ্ট সাধুবাদ জানিয়েছে। সমগ্র বিশ্বের যে সমর্থন পেয়েছি, এটাই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দুর্গত মানুষকে আশ্রয় দিয়েছি।

পথচারীদেরও নিয়ম মানতে হবে

সড়কে চলাচলে পথচারীদের নিয়ম মানতে হবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী এজন্য জনসচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যমের সহায়তা চেয়েছেন। ঢাকার সড়কে ট্রাফিক আইন না মেনে পথচারীদের পারাপারের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় চলার নিয়ম আছে, সেটা আমরা কতটা মানি? একটা গাড়ি দ্রুতগতিতে আসছে, আমরা হাত একটা তুলে রাস্তায় নেমে গেলাম। যারা পথচারী, তাদেরও কিছু রুলস জানা দরকার, মানা দরকার। আপনি বাসে চড়ে যাচ্ছেন, কেন আপনি হাত বের করে যাবেন? যার হাত গেলো, তার জন্য কান্নাকাটি করছেন, কিন্তু সে যে নিয়ম মানছে না, সে কথা তো বলছেন না। আমার এই কথাগুলো অনেকে পছন্দ করবেন না। কিন্তু যা বাস্তব, তাই বলছি।’ সড়ক দুর্ঘটনা হলেই আইন হাতে নিয়ে চালককে মারধর না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn