নেত্রকোনায় কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলা সদর, আটপাড়া, মোহনগঞ্জ, কেন্দুয়াসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় অন্তত পাঁচ হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন। জানা গেছে, জরুরি ভিত্তিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে মাঠে কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।  জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুক্রবার (১১ মে) সকালে নেত্রকোনা জেলা সদরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে জেলা সদর, আটপাড়া, মোহনগঞ্জ, কেন্দুয়াসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার অন্তত ৫ হাজার ২শ’ ৪৩ হেক্টর বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও জেলায় এখন পর্যন্ত ৩ হাজারেরও অধিক আধা-পাকা, টিন ও কাঁচা ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, জেলার পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ-এর ৭০টি খুঁটি উপড়ে পড়েছে। ফলে বিদ্যুৎবিছিন্ন হয়ে পড়েছে সারা জেলা। আর দু’দফা ফসলহানির পর শিলাবৃষ্টিতে এমন ক্ষতিতে এবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে স্থানীয় চাষিরা। এ ব্যাপারে আটপাড়া উপজেলার বানিয়াজুন ইউনিয়নের কৃষক জকির হোসেন বলেন, ‘ভাই আধা পাকা ধান হঠাৎ করে কী থেকে কী যে হয়ে গেলো কিছু বুঝতে পারলাম না, একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। বারবার এমন ক্ষতি! আমাদের কী যে হবে বলতে পারছি না।’ জানা যায়- গত বছরের বন্যায় আটপাড়া, নেত্রকোনা সদর, বারহাট্টা, কেন্দুয়া, মোহনগঞ্জ, পূর্বধলাসহ বিভিন্ন উপজেলার নিচু এলাকার হাওরগুলোতে ধান কাটতে পারেননি কৃষকরা। এ বছর ধার-দেনা করে ফসল রোপণ করার পর, আধা-পাকা ধানের ওপর এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা। তাই আগামীতে জীবিকা নির্বাহ করার জন্য সরকারি সহায়তা প্রদানের দাবি কৃষকদের।দুওজ গ্রামের রাখি রানী সরকার বলেন, ‘৮ কাঠা জমি অনেক ধার-দেনা করে রোপণ করেছিলাম। স্বামী অসুস্থ, কী যে হবে জানি না।’ঝড়ে বোরো ধানের পাশাপাশি রবি শস্যেরও ক্ষতি হয়েছে। এদিকে জেলার নদ-নদীগুলোর পানি বৃষ্টির পর হাওরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। আর এসব ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলের দ্রুত ত্রাণ সহায়তা ও আবারও কৃষি-ঋণ প্রদানের দাবি জনপ্রতিনিধিদের।

জানা যায়, শুক্রবার সকালের ঝড়ে জেলায় আব্দুল মালেক নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে ও একণ পর্যন্ত ২ শতাধিক আহত রোগীদের প্রাথমিক ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে।নেত্রকোনার সিভিল সার্জন তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যে কোনও দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে ও  দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থদের সব ধরনের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য ইতোমধ্যে আমরা হাসপাতালগুলোতে জানিয়ে দিয়েছি।’এ ব্যাপারে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক মঈন উল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির যা হিসেব পেয়েছি তা হলো- অন্তত ৩ হাজার ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, ৫ হাজার ২শ’ ৪৩ হেক্টর বোরো ধানের জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা তালিকা তৈরি করছি। তালিকা শেষে ডিআর-এর মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn