নুরুজ্জামান শাহী–

গতকালকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন ড:শামসুল আলম। এর আগে তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কয়েকবার তার চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ বাড়ানো হয়। গত ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগের স্বীদ্ধান্ত হয়। তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর ময়মনসিংহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। শুনেছি তিনি একজন দক্ষ, সৎ, প্রখর মেধাবি, সৃজনশীল ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি।

নতুন প্রতিমন্ত্রী ড,শামসুল আলমের নিয়োগ পরিকল্পনামন্ত্রীর এম,এ,মান্নান সাহেবের জন্য রেড সিগনাল কি না ভাবছি। হতে পারে আমি ভুল। জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের এটা হয়তো নিয়ম মাফিক স্বীদ্ধান্ত। হতে পারে সরকারের চলমান পক্রিয়ার অংশ। কিন্তু তারপরও আমাদের মতো সাধারন জনগনের কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। সাধারনত মন্ত্রী সভা রদবদল,গঠন কিংবা নতুন নিয়োগ হলে একসাথে বেশ কিছু রদবদল হয়। পরিকল্পনামন্ত্রনালয়ে হঠাৎ এমন কি প্রয়োজন পরলো যে সরকারকে শুধু এই মন্ত্রনালয়ে আরেকজন নতুন মন্ত্রী নিয়োগের চিন্তা করতে হলো? আমাদের সুনামগঞ্জের মন্ত্রী এম,এ মান্নান সাহেব কি তাহলে তার দফতর সামাল দিতে পারছেন না? নাকি তার ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে? তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেবার কথা ভাবা হচ্ছে নাতো?

বেশ কিছুদিন ধরে শুনা যাচ্ছিলো পরিকল্পনা মন্ত্রী তার ইমেজ সংকটে ভুগছেন। প্রস্তাবিত সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ সর্বোপরি সিলেট টু সুনামগঞ্জ রেল লাইন তৈরি নিয়ে জনাব মান্নান বেশ সমালোচিত হয়েছেন। এ সব ইস্যু নিয়ে নিজ দল ও জেলার সকল সাংসদ তাকে এড়িয়ে চলছেন। সর্বোপরি রেল লাইন নিয়ে জেলার ৫ সাংসদের সাথে মিলে রেল মন্ত্রনালয়ে ডিও লেটার দেওয়া নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড, মোমেনের সাথে তিনি বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে যান। জাতীয় ভাবে এ ইস্যুনিয়ে দু’জনে বেশ আলোচিত হয়েছেন। জেলার সাংসদরা সংসদে তার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কান পর্যন্ত বিষয়টা গড়িয়েছে।

মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী মাঝেমধ্যে বুঝে না বুঝে বেফাঁস কথা বলে ফেলেন। কিছুদিন আগে আমলাদেরকে নিয়ে তার উক্তিকে ঘিরে আওয়ামিলীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমদ আমলা বিরোধী বক্তব্য রাখেন। সাবেক যুবলীগ নেতা জাতীয় পার্টির সাংসদ ফিরোজ রসিদ প্রধানমন্ত্রীকে সামনে রেখে অভিযোগ করলেন, ভিডিও কনফারেন্স প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে হলে সাংসদদেরকে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে হয়। প্রটোকল অনুযায়ী সাংসদরা সচিবেদের উপরে ক্ষমতা রাখলেও অধীনস্হদের কথায় তাদের চলতে হয়। মন্ত্রী মান্নান সাহেবের “ফেরাউনে সময়ও আমলা ছিলো। স্বয়ং ফেরাউন তাদেরকে ঠিক করতে পারেনি ‘ এ উক্তি কে উপলক্ষ করে মুলতঃ এই বিতর্কের শুরু। সংসদে এরকম আলোচনা প্রধানমন্ত্রীর জন্য নিশ্চয় সুখকর ছিলোনা। বিব্রতকর অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীকে ফেলার পিছনের কারিগর ছিলেন আসলে এম,এ,মান্নান।

মন্ত্রী মান্নান সাহেব সুনামগঞ্জ জেলার একমাত্র মন্ত্রী। সবেধন নীলমনি। মান্নান সাহেব পরবর্তীতে জেলা থেকে মন্ত্রীত্বে যাবার মতো এমন কাউকে আমি দেখছিনা। একজন সত, নির্লোভ এবং সাদা মনের মানুষ হিসাবে এলাকায় তার বেশ সুনাম শুনেছি। হাজার হোক তিনি এখন জেলার অবিভাবক।

সম্ভবত ২০০৫ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলের নেত্রী। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রফেসর খালেদ হাসানের ওয়াশিংটনের বাসায় একান্তে দেখা হয়েছিলো। আমি তখন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সহ- সভাপতি। মান্নান সাহেব সবে দলে যোগ দিয়েছেন বা দেবেন। আমার সাথে পরিচয় নাই। নেত্রীর কাছ থেকে উনার সম্মন্ধে জানতে চাই। নেত্রী তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। মান্নান সাহেবের ব্যাপারে নেত্রীর ইতিবাচক মন্তব্য থেকে বুঝতে পারি নেত্রী উনার ব্যাপারে বেশ খোজ খবর রাখেন বা নিয়েছেন। আমি একবার মান্নান সাহেবকে আলাপে সে কথা বলেছিও। যে মান্নান সাহেবের প্রতি নেত্রীর উচ্চ ধারনা ছিলো সে মান্নান সাহেবকে তিনি ছুড়ে ফেলে দেবেন আমার মনে হয় না। হয়তো কোন কারনে তিনি রুষ্ট হতে পারেন।

মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রীকে বলতে চাই “আপনি জেলার অবিভাবক। একমাত্র মন্ত্রী। আগামীতে আপনার মন্ত্রীত্ব চলে গেলে সাড়ে ২০ লক্ষ জেলাবাসীকে পস্তাতে হবে। আপনার কাছে অনুরোধ থাকবে যত শীঘ্র সম্ভব আপনি জেলার ৫ সাংসদ ও নিজ দলের সাথে বসে ভুলবোঝাবুঝির অবসান করুন। বিবৃতি পালটা বিবৃতি দিয়ে লাভ হবে না বরং উভয় পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কখনো এটা ভাববেন না আলোচনায় যা হয় তা শক্তি দিয়ে সমাধান করবেন।

ইসরায়েলের মতো শক্তিশালী দেশ আজ মুসলিম বিশ্বের সাথে হাত মিলাচ্ছে। মুসলমান সাংসদদের সমর্থনে সরকার গঠনের কথা ভাবছে৷ আমেরিকার রিপাবলিকান পার্টি ও ডেমক্রেট পার্টি কখনো একের সাথে অনন্যের ডায়লগের পথ বন্ধ করেনা।

অনেকে আছে সুবিধা নেবার জন্য আপনাকে ভুল পথে নিয়ে যেতে চাইবে। এ সব সুবিধাবাদীদের দেখানো ভ্রান্ত পথ পরিহার করে সুস্থ ধারার পথে চলুন। ভাবুন আপনার ঘাড়ের উপর বোঝা কেন বসানো হচ্ছে? আগামীতে এই বোঝা হয়তো আপনার অস্থিত্বের প্রতি হুমকি হতে পারে। ক্ষতার বন্টন শুধু না। ক্ষমতা খাবার পরিকল্পনাও হতে পারে। আপনার জন্য এটা একটা রেড সিগনাল ধরতে পারেন। আশা করি বোধদয় হবে।

লেখকঃ সাবেক সভাপতি  নিউইয়র্ক আওয়ামীলীগ ।সাবেক সহ- সভাপতি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ । 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn