মহী জামন (ফসবুক থেকে) মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী আমার সালাম নিবেন। যথা বিহিত সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই। আজ দক্ষিন সুনামগঞ্জে আপনার সভা ছিলো। সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আপনার জন্মমাটি ডুংরিয়ার আশেপাশে প্রতিষ্টা হচ্ছে। এলাকার কিছু মানুষ ও আপনার কিছু গ্রামবাসী আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ স্বরূপ এই সভার আয়োজন করেছে। আপনি জেলার মন্ত্রী কিন্তু আপনার সামর্থ হয়নি জেলা সদয়ে এই সভা করার। আর এটা ধ্রুব সত্য যে জেলাবাসী স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা বা ধন্যবাদ জানায়নি। আপনার এক চোখা নীতির পক্ষে যদি জেলাবাসীর সমর্থন থাকতো তাহলে আজ আপনি বীরের বেশে বুক ফুলিয়ে জেলা সদরে স্বতঃস্ফূর্ত সভা করতেন। লক্ষ লক্ষ মানুষ আপনাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় শোভিত করতো। কিন্তু আপনার দূর্ভাগ্য সে সুভাগ্য আপনার হয়নি। জেলার নয়টি উপজেলার জনগনের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে আপিনি নিজ এলাকার স্বার্থ দেখলেন। আপনার এই একক স্বীদ্ধান্ত কি জেলার বাকী উপজেলার মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত করবে। না উষ্কে দেবে? সদরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হলে তর্ক বিতর্কের উর্ধ্বে থেকে যা সহজ হতো আজ আপনি তা কঠিন করে তুললেন। তারপরও জেলাবাসী আপনার এই ইচ্ছাকে সহজে মেনে নিতো। যদি দাবী খাটিয়ে এক মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় আপনি আপনার এলাকায় নিয়ে যেতেন। কিন্তু আমরা কি দেখছি  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিআরটিএ অফিস কাম ট্রেনিং সেন্টার, যুব মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সহ প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সব মেগা প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রী বাড়ী শান্তিগঞ্জের দুই কিলোমিটার এলাকার মধ্যে স্থাপনের স্বীদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সকল প্রতিষ্ঠানতো আপনি নিয়ে গেলেন। এখন বাকী থাকলো কি? রেল স্টেশন? নিয়ে জান। পারলে কোট কাচারী সহ সুনামগঞ্জের মাছ বাজারটা স্থানান্তরিত করেন।

মাননয়ী মন্ত্রী।

আপিনি পরিকল্পনা মন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যার সু বিবেচনায় আপিনি আজ দেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। পরিকল্পনা আপনি ভালো বুঝেন। তাই হয়তো এ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয় আপনাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনার মার প্যাচে গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা শান্তিগঞ্জে নিয়ে যাবার পিছনে হয়তো আপনার সুদুর প্রসারি পরিকল্পনা আছে। এই মূহুর্তে আমরা হয়তো তা বুঝতে পারছি না।

মাননীয় মন্ত্রী

কিছুদিন পূর্বে আপনি কচুরিপানা পানা নিয়ে পরিকল্পনা করেছিলেন। বলেছিলেন, গরু খেতে পারলে মানুষ কেন খেতে পারবেনা। সবাই হাসাহাসি করেছিলো। মহান সংসদে প্রধানমন্ত্রীকে ও আপনার এ পরিকল্পনা হাসিয়ে ছিলো। আপনার ভাবমূর্তি নিয়ে অনেকে তখন প্রশ্ন তুলেছিলন। আপিনি বলেছিলেন, আমি কোন মুর্তি না। আমার আবার ভাবমূর্তি কি? বাহ কি সুন্দর ব্যাখ্যা।

জনাব মন্ত্রী

সুনাগঞ্জবাসী হিসাবে আমরা গর্ববোধ করি আপনার মতো একজন সৎ, স্পষ্টবাদী ও কর্মদক্ষ মন্ত্রী পেয়েছি বলে। নিজেদেরকে আমরা ভাগ্যবান মনে করি আপনাকে জেলার মন্ত্রী হিসাবে পেয়েছি তাই। আপনি আজকের সভায় বলেছেন, বেঁচে থাকলে আপনি সুনামগঞ্জের চেহারা পাল্টে দেবেন। শুধু বেঁচে থাকলে না ক্ষমতায় থাকলেও বলা উচিত।

মাননীয় মন্ত্রী

আপনার কথায় আমরা ভরসা পাই কি ভাবে। সুনামগঞ্জের হাসপাতালের সিভিল সার্জনের বদলি নিয়ে কয়েক মাস আগে যে নাটক হলো। আপনি বলেছিলেন সোমবারে আপনি মন্ত্রনালয়ের সাথে কথা বলে তার সমাধান করবেন। সে সোমবারতো কেলেন্ডারে আর আসলো না। বয়সের কারনে কিংবা হেভি ডায়বেটিস এর প্রভাবে হয়তো আপিনি তা ভুলে গেছেন। জনগন কিন্তু ডায়বেটিস রোগে ভুগছেনা। কিংবা সবাই বয়সের ভারে স্মরণ শক্তি হারায়নি।

মাননীয় মন্ত্রী।

হয়তো ভাবছেন। আমি আবার কে? কেনো এতো লম্বা লম্বা কথা বলছি। আপিনি হয়তো আমাকে চিনবেন না। আপনার সাথে সর্বমোট হাতে গুনা দুইবার সাক্ষাৎ হয়েছে। তাও খুব কম সময়ের।

একবার ব্রাইটনে। মন্ত্রী হবার আগে। আরেক বার শান্তিগঞ্জে আপনার হিজল করচে। আপনার সাদা মনের পরিচিয় পেয়েছি। খুব সাদামাটা মানুষ আপনি। মাটিও মানুষের সাথে সম্পৃক্ত আলাপে বুঝা যায়।

মাননীয় মন্ত্রী

সুবিধা আদায়ের জন্য আমি কখনো আপনার পিছনে ঘুরঘুর করিনি। আল্লাহ’র ইচ্ছা থাকলে ভবিষ্যতে আপনার কাছে কোন সুবিধা আদায়ের জন্য যেতে না হতে পারে। আপিনি যে রাজনৈতিক দলে এসেছে আমিও সে দলের নগন্য এক খাদেম। সুনামগঞ্জে শহরে জন্ম গ্রহনকারী এক অদম আদম। দীর্ঘ বছর যাবত বৃটেনে বাস করছি। আমার ছোট আরেকটা পরিচয় আমি সুনামগঞ্জ জেলাআওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটের ১০ নাম্বার সদস্য। সাসেক্স আওয়ামীলীগ ইঊ কের সভাপতি। কলেজ জীবনে ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলাম। আওয়ামীলীগে আপনার যখন জন্ম হয়নি। যে আমলে আপনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী সেই ৮১ সালে আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ (কাদের-চুন্নু) ছানা রানা পরিষদ থেকে রাবি নির্বাচনে পাঠকক্ষ সম্পাদকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। আমার বড় ভাই ৭২-৭৪ মেয়াদে ছাত্রলীগ সুনামগঞ্জের সভাপতি ছিলেন। ছাত্রলীগের কার্যালয় দখল নিয়ে জাসদ ছাত্রলীগের সাথে দ্বন্ধে সন্ত্রাসী হামলায় আমার ৬৫ উর্ধ পিতা ও ৬০ উর্ধ মা কে কুপিয়ে জখম করা হয়। জীবন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে কয়েক মাস হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তারা পঙ্গুত্ব ও সারা জীবন ক্ষত নিয়ে প্রাণে বেচে যান। ৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর অক্টোবরে মুস্তাক সরকারের সময়ে কাদের বাহিনীর সদস্যের অভিযোগে আমার ভাইকে বাসায় না পেয়ে পুলিশ আমাকে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিশেষ ক্ষমতা আইন যা প্রেসিডেন্ট পাওয়ার ৫০ একক্ট ৩০ তে গ্রেফতার করে সিলেট কারাগারে নিয়ে যায়।

সিলেট কারাগার থেকে ৬ মাস পর ৭৬ সালের এপ্রিল কিংবা মে মাসের দিকে জেল থেকে ছাড়া পাই। কলেজ জীবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শেষে প্রবাস জীবনে আজ পর্যন্ত আওয়ামী রাজনীতির সাথে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাথে বেইমানী করিনি। কোন চাওয়া পাওয়ার জন্য রাজনীতি করিনি। পারিবারিক ভাবে বঙ্গবন্ধু রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। হাইব্রিড, সুবিধাভোগী কিংবা কাউয়া নই।

জনাব মন্ত্রী।

বেয়াদবি হলে ক্ষমা করবেন। আপনার মতো আমিও একটু আবেগী। আপনি আপনার ডুংরিয়ার প্রতি । এলাকার মানুষের প্রতি যেমন দূর্বল আমিও তেমনি নিজ এলাকার মানুষের প্রতি দূর্বল। আমার আর আপনার মাঝে একটু পার্থক আপনি শপথ করে মন্ত্রী হয়েছেন। আমি শপথ করিনি। শপথে আপিনি বলেছেন, আবেগ ও বিরাগের বশবর্তী হয়ে আপিনি কোন কাজ করবেন না। আজ দেখছি উলটো চিত্র। আবেগ আপনাকে স্বজন প্রীতি করতে বাধ্য করেছে। ঘোষ, দূর্নীতি যেমন অপরাধ ক্ষমতার খাটিয়ে অন্যের অধিকার খর্ব করে স্বজনপ্রীতি করাটা কি অপরাধে পড়ে না?

মাননীয় মন্ত্রী-

আরেকটা কথা না বললে না হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টার স্থান প্রস্থাবনায় ছিলো সুনামগঞ্জ সদরে। গত কিছুদিন আগে শিক্ষা বিভাগীয় সংসদীয় কমিটির সভায় কি ভাবে কার প্রভাবে ৩ নং প্রস্থাবের ১ নং ধারা পাল্টিয়ে দক্ষিন সুনামগঞ্জ করা হলো?

মাননীয় মন্ত্রী-

আপনি জনগনের সেবক। জনপ্রতিনিধি। আপিনি স্বেচ্ছা শ্রমে তা করেন না। বেতন, ভাতা নেন। প্রজাদের টাকায় আপনি চলেন। দামী গাড়ী হাকান। প্লেন চড়ে এলাকায় আসেন। আপনাকে সে কথা মনে রেখে জনগনকে সেবা দিতে হবে।

মাননীয় মন্ত্রী

আজকের সভায় আপনি বলেছেন, দক্ষিন সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইতিমধ্যে স্থান নির্ধারিত হয়ে গেছে। উড়ুঊড়ু খবরে জানলাম জায়গা নিয়ে যারা বানিজ্য করবেন তারা নাকি ইতিমধ্যে পরিকল্পনা করে পেলেছেন। আপনার চার পাশের মানুষরা নাকি এই পূর্ব পরিকল্পনায় জড়িত। কেউ জমি কিনে আর কেউ মৌখিক পার্সেন্টেজে জমির মালিক হয়ে আছেন। পরিকল্পনা মন্ত্রীর সাথে চলে বলে হয়তো টাকা বানানোর পরিকল্পনাটা তারা বেশ ভালো শিখিছে। এ সব পরিকল্পনায় আপনার কোন হাত না থাকলে ভালো।

মাননীয় মন্ত্রী-

দক্ষিন সুনামগঞ্জে আমাদের পারিবারি ১২৯ বিঘা জমি ছিলো। আশেপাশে প্রর্যাপ্ত জমি ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে হলে ফ্রি দেবো ঘোষ না দিয়ে ছিলাম। দাবী ছিলো বঙ্গবন্ধু পরিবারের কারো নামে বিশ্ববিদ্যালয় চাই। এ ব্যাপারে আপনাকে, শিক্ষা মন্ত্রীকে, জেলা প্রশাসককে এমন কি প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একাধিকবার ইমেইল দিয়েছি। মাস, দু’মাস হলেও কেউ উত্তর দেবার প্রযোজন মনে করেননি। যারা ইমেইল চেক করেন তাদের কাছে হয়তো বৃহত্তর কোন কারনে আমার প্রস্তাব বা শর্ত পছন্দ হয়নি।

মাননীয় মন্ত্রী-

শেষ মেষ আপনাকে অনুরোধ করবো। একবার হলে ভাবুন। বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় হবে চিন্তা করোন। দলীয় নেতা কর্মী ও বিশিষ্ট জনের মত নিন। আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করে শেষ করছি। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। খোদা হাফেজ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn