ময়নাতদন্ত: সুরতহাল

সিলেটের জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে নিহত দুই জঙ্গি মজিনা ও তার স্বামী কাউসারের লাশ
সিলেটের জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহল থেকে উদ্ধার করা মৃতদেহ দুটি আত্মঘাতী জঙ্গির। নারী জঙ্গি আগুনে পুড়ে আত্মঘাতী হয়েছে। পুরুষ জঙ্গি বোমা হামলায় আত্মঘাতী হয়। লাশ দুটির সুরতাহল রিপোর্টে পুলিশ এসব বিষয় উল্লেখ করেছে। লাশের অবস্থা বিকৃত এবং ছিন্নভিন্ন। দুটি লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্টে তাদের পরিচয় অজ্ঞাত বলে উল্লেখ করেছে পুলিশ। তবে দুটি রিপোর্টেই নিহতদের জঙ্গি বলে দাবি করা হয়। তাই এর আগে পুরুষ লাশটি জঙ্গি কাউসার এবং নারী লাশটি জঙ্গি মর্জিনার বলে জানিয়েছিল আইনশৃংখলা বাহিনী।

সুরতহালে নারী জঙ্গি লাশের বর্ণনা : মাথায় সামান্য চুল আছে। উচ্চতা আনুমানিক ৪ ফুট। লাশের মুখমণ্ডল পোড়া। ওপরের পাটির দাঁত দেখা যায়। দুই হাত দুই পায়ের গিরা পর্যন্ত সম্পূর্ণ দেহ পোড়ানো। সারা শরীরে আগুনে পোড়ার ছাপ। বাইরে থেকে কঙ্কাল দেখা যায়। একটি পায়ে সামান্য মাংস আছে। পায়ের তালুর নিচে দুই ইঞ্চি পরিমাণ কাটা। মৃতার দেহের বুক ও পা দেখে প্রতীয়মান হয়, লাশটি একজন মহিলার। সুরতহাল রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, লাশটি সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল সোমবার বিকাল ৫টা ৫৫ মিনিটে আতিয়া মহল-২ থেকে উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। লাশটি একজন জঙ্গি সন্ত্রাসীর স্ত্রীর লাশ এবং মহিলা নিজেও একজন জঙ্গি সন্ত্রাসী। আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার এড়ানোর জন্য নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অজ্ঞাতনামা এই মহিলার মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের লক্ষ্যে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করা হল। লাশের ময়নাতদন্তকালে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে সুরতহাল রিপোর্টে। এই সুরতহাল রিপোর্টটি তৈরি করেছেন মোগলাবাজার থানার এসআই সুজন দত্ত। সুরতহাল রিপোর্টের উপস্থিত সাক্ষী দেখানো হয়েছে এসআই মো. সোহেল রানা ও এএসআই সুবির চন্দ্র দেবকে।

সুরতহালে পুরুষ জঙ্গি লাশের বর্ণনা : অজ্ঞাতনামা লাশটির উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। লাশের মুখমণ্ডল গোলাকার। আগুনে পোড়ানো। কান দুটি স্বাভাবিক। মাথায় সামান্য চুল আছে। ডান চোখ খোলা। চোখের ওপরে ভ্রু আছে। মুখে সামান্য দাড়ি দৃশ্যমান। দুই হাত শরীরের সঙ্গে মুষ্টিবদ্ধ। লাশের বুক থেকে তলপেট পর্যন্ত ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন। লাশের গায়ে কালো জামা। দুই পায়ে কালো জুতা। বাম পায়ে ঠাকনু বরাবর কাটা। দুই রান স্বাভাবিক। ডান পায়ে কালো প্যান্টের অংশ আছে। উল্লেখিত লাশটি একজন জঙ্গি সন্ত্রাসীর। তিনি আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আইনশৃংখলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে তিনি এ পথ বেছে নিতে পারেন। অজ্ঞাতনামা এই ব্যক্তির মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করা হল। সুরতহাল রিপোর্টে লাশের ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে ময়নাতদন্তকালে। এই সুরতহাল রিপোর্টটি তৈরি করেছেন মোগলাবাজার থানার এসআই মো. সোহেল রানা। সুরতহাল রিপোর্টের উপস্থিত সাক্ষী দেখানো হয়েছে এসআই সুজন দত্ত ও এএসআই সুবির চন্দ্র দেবকে।

মোগলাবাজার থানার শিববাড়ী পাঠানপাড়ার জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহল-২ এর সামনে বৈদ্যুতিক আলোতে লাশ দুটির সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়।

ময়নাতদন্ত : সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি সুহেল আহমদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ নিহত দুই জঙ্গির লাশ মঙ্গলবার ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায়। একই সময়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় সিআইডি, পিবিআই ছাড়াও কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীলরা। দুপুর তখন ঠিক ১২টা। রোহান অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানো হল সাদা রঙের বিশেষ কাপড়ে মোড়া দুটি লাশ। এর মধ্যে একটি লাশ কিছুটা লম্বাটে দেখা গেলেও অপরটি ছিল অনেকটা গোলাকার। লাশ দুটি লাশঘরে ঢুকানোর সময় কড়া নিরাপত্তা ও নজরদারি ছিল আইনশৃংখলা বাহিনীর। সিআইডির একজন সদস্য তখন লাশঘরের বারান্দায় ঢুকে পড়েন অপটোমাস ক্যামেরা নিয়ে। পিবিআইয়ের দুই সদস্য ঢুকে পড়েন তাদের বিশেষ জ্যাকেট পরা অবস্থায়। তখন পুলিশের এক কর্মকর্তা তাদের ভেতরে নেয়া যায় কিনা এ ব্যাপারে অনুমতি চান ঊর্ধ্বতনদের।

একপর্যায়ে তিনি মোবাইল রেখে তাদের ধমকিয়ে বারান্দা থেকে বের করে দেন। বলেন, পোশাক, ক্যামেরা ও মোবাইল রেখে আসতে। এমনকি ময়নাতদন্তের কাজে আসা চিকিৎসক দল ও লাশকাটার কাজে নিয়োজিত ডোমদের মোবাইলও নিয়ে যায় পুলিশ। ১২টা ২০ মিনিটে লাশ দুটি লাশকাটা ঘরের টেবিলের ওপর রাখা হয়। এরপর পিবিআইয়ের একটি টিম দুটি লাশের হাতের ছাপ নিয়ে লাশকাটা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। বন্ধ করে দেয়া হয় বাইরের দরজা। ডা. শামসুল আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বোর্ড ময়নাতদন্ত শুরু করে। বেলা পৌনে তিনটার দিকে তাদের দু’জনের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। পরে অজ্ঞাত লাশ দুটি ফের পাঠিয়ে দেয়া হয় হাসপাতালের মর্গে। ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক, আইনশৃংখলা বাহিনীসহ উপস্থিত দায়িত্বশীলদের প্রশ্ন রাখা হলে তাদের কেউই কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn