প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মানুষ মনের গভীরে স্বপ্ন দেখেন অন্তত একবার হজে যাওয়ার। সামর্থ্যবানদের জন্য হজ ফরজ। অনেকে সারাজীবনের আয়ের একটি অংশ গচ্ছিত রাখেন হজে যাওয়ার নিয়তে। অল্প অল্প করে জমান টাকা। এই টাকার প্রতি মায়াটা তাই আলাদা। এই এবাদতকে নিয়েও একশ্রেণির মানুষের প্রতারণা থেমে নেই। হজ এজেন্সি এবং দালালচক্রের ফাঁদে পড়ে হয়রান হচ্ছেন হজ করতে ইচ্ছুক ধর্মপ্রাণ হাজার হাজার মানুষ। প্রাক-নিবন্ধন এবং হজের টাকা তুলে দিয়ে এখন হজ এজেন্সি ও দালালের পেছনে পেছনে ঘুরছেন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল হাজার হাজার মানুষ সবচেয়ে ভোগান্তিতে আছেন। দালালরা তাদের আশ্বাস দিয়ে বলছেন, ‘সিরিয়াল নম্বর নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। সরকারি কোটা পূরণ হবে না। ওইখানে ৫-৬ হাজার খালি থাকবে। সেই খালি কোটায় আপনাকে নিয়ে যাব। সিরিয়াল পেছনে থাকলেও সামনে নিয়ে আসা হবে। এজন্য বাড়তি কিছু টাকা লাগবে।’ যারা একটু বিত্তবান তারা বাড়তি টাকাও তুলে দিচ্ছেন দালালদের হাতে। কারণ তারা যে করেই হোক এবারই হজে যেতে চান। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত হজ কোটার অতিরিক্ত প্রায় ৭১ হাজারের বেশি প্রাক-নিবন্ধন হয়ে গেছে।

গতকাল ২০ মার্চ ছিল এ বছরের প্রাক-নিবন্ধনের টাকা জমা নেওয়ার শেষ তারিখ। চলতি বছর এক লাখ ৪০ হাজার ৯৯৫ সিরিয়াল থেকে প্রাক-নিবন্ধন শুরু হয়। সরকারি পর্যায়ে তিন হাজার ৩৪৯ জন ও বেসরকারি পর্যায়ে এক লাখ ৮৫ হাজার ৫০৩ জন প্রাক-নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া গত বছরের ৩৭ হাজার ৪৫০ জন প্রাক-নিবন্ধনকারী রয়েছেন হজে যাওয়ার অপেক্ষায়। কোটা জটিলতার কারণে তারা হজে যেতে পারেননি। ২০১৭ সালে সৌদি সরকারের সঙ্গে হজ চুক্তি অনুযায়ী এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার এবং বাকিরা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন। এ বছর হজে যাওয়ার সর্বশেষ সিরিয়াল হতে পারে ২১৭২৮৮।

ইতিপূর্বে ধর্ম মন্ত্রণালয় এক সার্কুলারে জানায়, হজে যেতে পারবে না জানা সত্ত্বেও কোনো এজেন্সি প্রতারণা করে টাকা নিলে তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে। তবে এই হুঁশিয়ারি মানছে না অনেক হজ এজেন্সি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানান, চলতি বছর দুই লাখ ১৭ হাজার ২৮৮ সিরিয়ালের বাইরে কারো হজে যাওয়ার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রাক-নিবন্ধনকারীর সংখ্যা দুই লাখ ৮৮ হাজার ৪০৯ জন হয়েছে।

হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আবদুল্লাহ আল নাসের বলেন, নির্দিষ্ট কোটার বাইরে হজে যাওয়ার জন্য প্রাক-নিবন্ধন করেছেন অনেক বেশি মানুষ। অথচ তারা এ বছর হজে যেতে পারছেন না। কিন্তু নিবন্ধনের নাম করে দালালরা অনেকের কাছ থেকে দুই-আড়াই লাখ টাকা প্রতারণা করে নিয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-হাব-এর সভাপতি মোহাম্মদ ইবরাহিম বাহার বলেন, যারা নিবন্ধন করেও হজে যেতে পারছেন না তাদের কাছে থেকে নিবন্ধন ফির বাইরে কোনো টাকা নেওয়া যাবে না। প্রতারণা করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে হাব ব্যবস্থা নিবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল জলিল বলেন, কোনো হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা হজে যাবেন তাদের কাছে অনুরোধ করব-নিবন্ধন নম্বর দেখে টাকা দিবেন। প্রাক-নিবন্ধিতদের মধ্য থেকে সবাই এবার হজে যেতে পারবেন না। তবে যারা এবার যেতে পারবেন না তাদের আগামী বছর অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

এদিকে চলতি বছর হজের প্রাক নিবন্ধনে অনিয়মের তদন্ত চলছে। আলাদা তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুইটি কমিটি করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও অন্যটি ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এর মধ্যে একটি কমিটিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফয়েজ আহমেদ ভুঁইয়াকে প্রধান করা হয়েছে। এ কমিটির আইটি প্রতিষ্ঠান বিজনেস অটোমেশনের বিরুদ্ধে হাবের অভিযোগ তদন্ত করে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও কর্মতত্পরতায় অগ্রগতি কম বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn