০ টাঙ্গুয়ার হাওর কেন্দ্রীক পযটন কেন্দ্র

০ জাদুকাঁটা সেতু

০ মধ্যনগরকে উপজেলায় উন্নীত

০ করণ সহ নানা প্রতিশ্রুতি আলোর মুখ দেখেনি-

সরকারের চারবছর পূর্তির পর সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসমাবেশকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলার হাওরাঞ্চলের ২৫ লাখ মানুষ।’ হাওরবাসী প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রী সিলেটের জনসভায় হাওরবাসীর বঞ্চনার অবসান ঘটাতে নানা উন্নয়নের নির্দেশনা দেবেন সেই সাথে অতীতে সুনামগঞ্জবাসীকে দেয়া বিভিন্ন অবাস্তবায়িত প্রুতিশ্রুতি গুলো দ্রুত সময়ে পুরণে সঠিক দিক নির্দেশনা দিবেন। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মঙ্গলববারে সিলেটের সমাবেশে হাওরবাসীরও আশা-প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে বলেই মনে করেন হাওেেরর রাজধানী সুনামগঞ্জবাসী।’ সুনামগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজনের সাথে আলাপ কালে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১০ নভেম্বরে  সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে কুষক সমাবেশে এবং সর্বশেষ গত ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল শাল্লায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের দেখতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।’ সরকারের এ মেয়াদে সিলেটের এই সমাবেশকেই এই অঞ্চলের শেষ সমাবেশ মনে করছেন অনেকে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর এবারের সিলেটের সমাবেশ  ঘিরে হাওরবাসীর চাওয়াও অনেকটা বেশি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাহিরপুরের সমাবেশে হাওরাঞ্চলবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন,  টাঙ্গুয়ার হাওর -টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের পতিত ভুমি ও বারেকটিলা কেন্দ্রীক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা, সীমান্তনদী জাদুকাটায় মিয়ারচর-পাঠানপাড়া খেয়াঘাট বরাবর সেতু নির্মাণ,  বাদাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, টেকেরঘাটে সিমেন্ট ফ্যাক্টরী কাম সিমেন্ট ক্লিংকার ফ্যাক্টরী নির্মাণ মধ্যনগর থানাকে উপজেলায় উন্নীত করণ। কিন্তু এসব প্রতিশ্রুতির কোনটিই আজো বাস্তবায়তি হয়নি।’ দায়িত্বশীলদের আসা যাওয়ায়  হবে হচ্ছে আর পরিদর্শনেই সীমান্তবদ্ধ রয়েছে এসব প্রতিশ্রুতি।’ এছাড়াও ‘হাওরাঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ  সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের জন্য হাওর উন্নয়ন বোর্ডকে সচল করে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করবে সরকার। মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণসহ ১০ টাকা দিয়ে কৃষকদের ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করে দিয়ে- মহাজনদের খপ্পর থেকে কৃষকদের বের করে নিয়ে আসবেন তিনি ।

বিগত সময়ে কৃষকদের ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক হিসাব খোলে কৃষি ভর্তুকি দেবার কাজ শুরু হলেও হাওর উন্নয়ন বোর্ডকে সচল করে মহাপরিকল্পনা গ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে। তাহিরপুরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সরকার হাওরের ফসল রক্ষার জন্য নদী খনন, বাঁধ ও প্রয়োজনীয় স্লুইস গেট নির্মাণ করা হবে।  সুনামগঞ্জের সীমান্তনদী জাদুকাঁটা ,রক্তি, বৌলাই ও এবং টেকেরঘাট থেকে ঘাগলাজুর পর্যন্ত নদী খননেরও ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।’ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী রক্তি, বৌলাই ও জাদুকাঁটা নদী খনন  কাজ শুরু হলেও হাওরের অনেক স্লুইসগেট এখনো অকার্যকর।’ সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ পয়েন্ট থেকে ভৈরব পর্যন্ত মেঘনা নদী খননের দাবি এখন পুরো হাওরবাসীর। একই সঙ্গে হাওরের অভ্যন্তরীণ ছোট ছোট নদী খননেরও দাবি উঠেছে।’

প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালের ১৮ আগস্ট সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে থাকা দায়িত্বশীলদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলার সময় বলেছিলেন,‘সুনামগঞ্জের শিক্ষার্থীদের প্রতিকূল পরিবেশে পড়াশুনা করতে হয়। হাওর এবং পাহাড়ী অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। বর্ষায় হাওরাঞ্চলে প্রচন্ড ঢেউ ডিঙিয়ে স্কুলে যায় শিক্ষার্থীরা। এই অবস্থায় হাওরে এবং পাহাড়ী অঞ্চলে আবাসিক স্কুল গড়ে তুলতে চায় সরকার।’ তাহিরপুরের বাসিন্দা  মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মনোয়ারা বেগম  বললেন, ২০১০ সালে তাহিপুরের কৃষক সমাবেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্যে বলেছিলেস তিনি গোপালগঞ্জকে যে দৃষ্টিতে দেখবেন তেমনি সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলকেউ সেই একই দৃষ্টিতে দেখবেন, এজন্য আমরা আশা করি টাঙ্গুয়ার হাওর কেন্দ্রীক পর্যটন কেন্দ্র, জাদুকাঁটাসেতু নির্মাণ, বাদাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র সহ হাওরবাসীকে দেয়া সব কটি প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নে সিলেটের সমাবেশে সংশ্লিষ্টদেও দিক নির্দেশনা দিয়ে যাবেন। ’হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, বিগত মৌসুমে বাঁধ দুর্নীতিতে সুনামগঞ্জের বোরো পসল ডুবেছে, প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের পাশে দাড়িয়েছেন কিন্তু এ মৌসুমে একমাস পেরিয়ে গেলেও এখনো জেলার গড়ে ৯৫ ভাগ হাওরের বেরীবাঁধ নির্মাণ কাজই শুরু করা হয়নি , এ নিয়ে কৃষকদেও শংকা কাটছেনা, তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃষকদেও আশা তিনি নির্ধারিত ফেব্রƒয়ারী মাসের মধ্যে বাঁধের কাজ সম্পন্ন ও বাঁধ নির্মাণ কাজের তদারকিতে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত করণে দিক নির্ধেনামুলক বক্তব্য প্রদান করবেন।  

সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও তাহিরপুর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খাঁন বলেন, তাহিরপুওে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সব প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন হাওরাঞ্চলের আবাসিক স্কুলের বিষয়েও আশার কথা শুনাবেন এমনটাই চান সুনামগঞ্জবাসী।সুনামগঞ্জ জেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মতিউর রহমান বলেন,  সিলেটের আজকের মঙ্গলবারের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ২০১০ সালে তাহিরপুরে জনসভায় সুনামগঞ্জের মধ্যনগরকে থানা থেকে উপজেলায় উন্নীত করণ, মধ্যনগরে হাসপাতাল, পাগলা- জগন্নাথপুর আউশকান্দি সড়ক, ধর্মপাশা- মহেষখলা- লাউড়েরগড় সীমান্ত সড়ক, তাহিরপুর সীমান্তে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের জন্য স্মৃতিফলক নির্মাণ, জেলার প্রত্যেকটি উপজেলায় ৩৫ শয্যার স্বাস্থ্য কমপেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী তাই এসব প্রতিশ্রুতি পুরণে তিনি আবারো তৎপর হবেন এমনটাই আশা করেন জেলাবাসী।  খোজ নিয়ে জানা গেছে, বাস্তবে মধ্যনগরের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ২০ শয্যার হাসপাতাল ভবন এখনো নির্মাণ কাজই শেষ হয়নি, কিন্তু ভবন ছাড়াই এখানে ডাক্তার এবং নার্স পোষ্টিং দেয়া হয়েছে বলে সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে। ধর্মপাশা- মহেষখলা-লাউড়েগড় সীমান্ত সড়কের কাজ চলছে ধারগতিতে। টেকেরঘাট সীমান্তে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতিফলক হয়েছে। উপজেলাগুলোর মধ্যে ছাতক, জগন্নাথপুর, দিরাই ও ধর্মপাশায় ৫০ শয্যার হাসপাতাল ভবন হয়েছে, জনবলও কিছু নিয়োগ হয়েছে, তাহিরপুরে ৫০ শয্যার হাসপাতাল ভবন হচ্ছে, অন্য ৬ উপজেলায় এখনো ৫০ শয্যার হাসপাতাল ভবনের কাজ শুরুই হয়নি।

এছাড়া গত বছরের এপ্রিল মাসে সুনামগঞ্জে ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতালসহ মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একনেক সভায়। পরে গত ১৬ মে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা স্থান নির্বাচন কমিটির সভায় সুনামগঞ্জে ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতালসহ মেডিকলে কলেজ স্থাপনের জন্য দিরাই সড়কের মোড়ের উত্তর-পশ্চিম দিকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ২৯.২৪ একর জমি স্থায়ীভাবে অধিগ্রহনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এখনো মেডিকেল কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়নি। সুনামগঞ্জবাসীর প্রত্যাশা সিলেটের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ, জাদুকাঁটা সেতু, সিমেন্ট ফ্যাক্টরী , বাধাঘাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্র, টাঙ্গুয়ার হাওর কেন্দ্রীক পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু’র নির্দেশনা দেবেন।

সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি সোমবার রাতে  বললেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা হাওরের মানুষকে গোপালগঞ্জের মানুষের মতোই ভালবাসেন, হাওরবাসীর প্রতি তাঁর মমতা-আবেগ সবসময় প্রকাশ করেন, আমাদেরকে বলেন হাওরবাসীর জন্য বেশি বেশি প্রকল্প করার জন্য, হাওরবাসীর জন্য দেওয়া তাঁর প্রতিশ্রুতির বেশির ভাগই ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে, কোন কোনটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, সুনামগঞ্জে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের বিষয়টি আমি সিলেটের সমাবেশে  মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবো।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn