সংবিধানের ষোড়শ সংশোধণী অবৈধ ঘোষণার রায় এবং রায়ের পর্যবেক্ষণে অনেক ভুল আছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সংসদে নারী আসনে নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করার আগে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ করা উচিত ছিল।২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার স্মরণে সোমবার বিকালে রাজধানীতে এক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ১৩ বছর আগের গ্রেনেড হামলা ছাড়াও সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের রায় নিয়েও দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। কথা বলেন, রবিবার উচ্চ আদালতে প্রধান বিচারপতির করা মন্তব্য নিয়ে।গত ৩ জুলাই সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ। গত ১ আগস্ট প্রকাশ হওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় সংসদ, আইন প্রণয়ন পদ্ধতি, সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন, দেশের উন্নয়ন, শাসন পদ্ধতিসহ নানা বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য করা হয়। এসব মন্তব্যে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে সরকার। তবে এ বিষয়ে এতদিন প্রধানমন্ত্রী নিজে থেকে কিছু বলেননি।তবে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ১৩ বছর পূর্তির দিনে এসে দেয়া বক্তব্যের একটি বড় অংশ জুড়েই প্রধান বিচারপতির কথা উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে উচ্চ আদালত থেকে দেখছি নানা ধরনের বক্তব্য, রাজনৈতিক কথাবার্তা এবং হুমকি ধামকি।’‘আমার মাঝেমাঝে অবাক লাগে যে, যাদেরকে আমরাই নিয়োগ দিয়েছি, মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়েছেন এবং এই নিয়োগ পাওয়ার পর হঠাৎ তাদের বক্তব্য শুনে এবং পার্লামেন্ট সম্পর্কে যে সমস্ত কথা বলা হচ্ছে, পার্লামেন্ট সদস্য যারা তাদেরকে ক্রিমিনাল বলা হচ্ছে, সেখানে ব্যবসায়ী আছে, সেটাও বলা হচ্ছে। তো ব্যবসা করাটা কি অপরাধ?’সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। সরাসরি ভোটের বদলে ৫০ সদস্য সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন।‘এটা একটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি এবং এটা সংবিধানসম্মত হয়েছে’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি তার রায়ে মন্তব্য করেছেন যে মহিলাদের কেন এভাবে নির্বাচিত করা হয়।’

রাষ্ট্রপতিও সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদ সদস্যরাই রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত করেন আর সেই রাষ্ট্রপতিই নিয়োগ দেন প্রধান বিচারপতিকে। তাহলে রাষ্ট্রপতিকে সংসদ নির্বাচন করতে পারবে আর সেই রাষ্ট্রপতির দ্বারাই নির্বাচিত হয়ে চেয়ারে বসে নিজের কথা ভুলে গেলেন?’।‘মহিলা সংসদ সদস্যরা যদি নির্বাচিত হতে না পারে, তাহলে রাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচিত হতে পারে? পার্লামেন্টারি সিস্টেম অব ডেমোক্রেসিতে তো এটা আছে।’‘ওনার (প্রধান বিচারপতি) তো এই কথা বলার আগে এই পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত ছিল’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই পার্লামেন্ট যেহেতু মহিলা এমপি করতে পারবে না, এই পার্লামেন্ট যেহেতু রাষ্ট্রপতি করতে পারবে না আর এই রাষ্ট্রপতি যেহেতু আমাকে নিয়োগ দিয়েছে, আমি এই পদে থাকব না-বলে দিলেই তো হলো।’ সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগে স্বাধীনতা দিয়েছে। তবে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কেড়ে নিতে চান বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ যে ক্ষমতা সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে, সে ক্ষমতা তিনি কেড়ে নেন কীভাবে? সেটা দেয়া হচ্ছে না বলেই যত রাগ আর গোসসা। ’-ঢাকাটাইমস

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn