মারুফ কিবরিয়া- পরকীয়া প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন প্রেমিকের বাবা শাহ আলম ভূঁইয়া। তারই জেরে ক্ষুব্ধ হয়ে খুনের পরিকল্পনা করেন প্রেমিকা লাবনী আক্তার কনিকা। পরিকল্পনা অনুযায়ী কৌশলে বাসায় ডেকে নেয় ৭৫ বছর বয়সী শাহ আলমকে। শ্বাসরোধে হত্যার পর তার লাশ স্যুটকেসে ভরে গুমের উদ্দেশে অটোরিকশায় করে ঢাকার সড়কে ঘুরেছে কয়েক ঘণ্টা। টাকা ভাঙতি নেয়ার কথা বলে অটোরিকশায় লাশ রেখে সটকে পড়েছিল ‘খুনি’ কনিকা। ভেবেছিল হয়তো এখানেই সব শেষ। কিন্তু নিজের রহস্য আচরণে ধরা পড়ে এখন পুলিশের জালে কনিকা। হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনাও দিয়েছে সে। তবে এ বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য প্রকাশ করেননি। গত ৮ই এপ্রিল বিকালে জনশক্তি ব্যবসায়ী শাহ আলমকে খিলগাঁও তিলপাপাড়া বাসা থেকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যায় কনিকা। এরপর সেখানেই একটি টিনশেডের বাসার মধ্যে শ্বাসরোধ করে খুন করে। কনিকার সঙ্গে এ ‘কিলিং মিশনে’ আরো কয়েকজন যোগ দিয়েছিল। তবে তাদের নাম এখনো জানায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশকে দেয়া স্বীকারোক্তিতে কনিকা জানায়, খুন করার পর শাহ আলমের লাশ স্যুটকেসবন্দি করে গুম করার চেষ্টা করেছিল। লাশ স্যুটকেসে ভরার করার পর একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে কনিকা। সিএনজি করে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। সুবিধাজনক কোনো স্থান না পেয়ে সেটি ছেড়ে দিয়ে আরেকটি সিএনজি ভাড়া করে। তারপর সবুজবাগ থানাধীন মাদারটেক লেগুনা স্ট্যান্ডের কাছে একটি স্থানে শাহ আলমের লাশ অটোরিকশায় রেখে কৌশলে সটকে পড়ে কনিকা। সেখান থেকে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। মর্গে রাখার দু’দিনের মাথায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা সেখান থেকে লাশ শনাক্ত করেন। এরপর পরিবারের দেয়া তথ্যমতে পুলিশ কনিকাকে খোঁজা শুরু করে। গ্রেপ্তারের পর কনিকা খুনের কথা স্বীকার করেছে বলে পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন শাহ আলমের মেয়ে মলি। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সৈকতকেও আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। মলি জানান, তার ভাই সৈকতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল কনিকার। বিষয়টি নিয়ে প্রায়ই ঝামেলা হতো। নিহত শাহ আলমও চাইতেন ছেলে সৈকত যেন কনিকার কাছ  থেকে সরে এসে ঠিকঠাক সংসারে মনোযোগ দেয়। কিন্তু কনিকার প্রতি এতটাই দুর্বল ছিল যে, সৈকত কিছুতেই সরে আসতে পারছিল না। এমনও সময় গেছে, কনিকা বাসায় এসে আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দিতো। এসব নিয়ে প্রায়ই সংসারে অশান্তি চলতো শাহ আলমের। পরিস্থিতি সামাল দিতে নিহত শাহ আলম ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। খিলগাঁও তালতলার মোবাইলের দোকান বিক্রির টাকা, ৩ মাসের ঘর ভাড়ার সঙ্গে বাকি টাকা যোগ করে তা জনশক্তি ব্যবসায়ীদের হাতেও তুলে দেন তিনি। বাবা শাহ আলমের শর্ত অনুযায়ী দুই মাস ধরে কনিকার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখেন সৈকত। এতে ক্ষেপে যায় কনিকা। এই আক্রোশ থেকেই শাহ আলমকে খুন করা হয়েছে বলে ধারণা তাদের।
নাসরিন জাহান মলি আরো বলেন, তার বাবা নিখোঁজের পরদিন রাতে মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন তারা। কিন্তু শাহ আলমের মৃত্যুর খবর ঘটনার পরদিন সকালে মলিরা না জানলেও কনিকা বাসায় এসে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, কাকার মৃত্যুর জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি সন্দেহ হয় তাদের। রাতে লাশ শনাক্তের পর বিষয়টি জানাজানি হলে বাসায় মোবাইল ফোন রেখে গা-ঢাকা দেয় কনিকা। এদিকে কনিকার বিষয়ে মলি আরো জানান, আমার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল কনিকার। তবে সেটা শুধুই পরিচয়ের খাতিরে। এলাকায় একসঙ্গে বড় হয়েছি। আর পরবর্তীতে আমার ভাইয়ের সম্পর্কের কথা জেনে শুধু ওই ব্যাপারে খোঁজখবর রাখতেই যোগাযোগ করতাম কনিকার সঙ্গে। এই মেয়ের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড এলাকার সবাই জানেন । ওর মা মাদক মামলাসহ দশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। কনিকা ডিজে পার্টিতে গিয়েও নাচতো। এছাড়া যতদূর জানি মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিল। যেদিন আমার বাবাকে খুন করে বেনাপোল চলে যায় সেদিন, ভাইয়াকে ফোন করে কনিকা। ভাইয়াকে বলে ‘আমি তোর বাপকে খুন করি নাই। তাও আমাকে ফাঁসাইছস।’ কনিকা তার আসল নাম হলেও বাইরে অনেকে তাকে সানিহা সারাহ নামেও চেনেন। গ্রেপ্তার করে কনিকাকে এরই মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, শাহ আলম ভূঁইয়া খুনের ঘটনায় কনিকা নামের একটি মেয়েকে আমরা আটক করেছি। এরই মধ্যে আদালতে নেয়ার পর তিনি খুনের কথা স্বীকার করেছেন। তবে এ মামলাটি নিয়ে আমরা এখনই কিছু বিস্তারিত বলছি না। আরো তদন্তের বাকি রয়েছে। তদন্তের স্বার্থেই সব বলা যাচ্ছে না।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn