এম. এ রাজ্জাক, তাহিরপুর-তাহিরপুর উপজেলার হাওররক্ষা বাঁধের কাজের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য, কৃষক মোফাজ্জল হোসেন এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। জানা যায়, উপজেলার মাটিয়ান, শনিসহ ছোট বড় ২৩টি হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ অনিয়ম দুর্নীতি, প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পিআইসি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই বাড়িতে দুইটি করে মোট চার টি পিআইসি, স্থানীয় কৃষকদের সুযোগ না দিয়ে বহিরাগত অযোগ্য, অদক্ষ ব্যক্তিদের কমিটিতে যুক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে হাওর পাড়ের কৃষকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। সময় মতো বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষকরা।

সূত্রে জানায়, উপজেলার শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পাটাবুকা গ্রামের জুনায়েদ মিয়া একাই দুইটি পিআইসি বাগিয়ে নিয়েছেন। পাশাপাশি তার চাচাত ভাইয়ের স্ত্রীও নিয়েছেন একটি পিআইসি। জুনায়েদ মিয়া বর্ধীত গুরমা ৫ নম্বর পিআইসি কমিটির সভাপতি। তার আপন ছোট ভাই  মুবাশ্বির ৬ নম্বর পিআইসি কমিটির সদস্য সচিব। তার চাচাত ভাইয়ের স্ত্রী নাজমা ৪ নম্বর পিআইসি কমিটির সদস্য সচিব। অন্যদিকে একই গ্রামের জিয়া উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে সুজাত চৌধুরী ৮ নম্বর পিআইসি কমিটির সদস্য সচিব, আরেক ছেলে এনায়েত হোসেন চৌধুরী ১১ নম্বর পিআইসি কমিটির সদস্য সচিব। ৪,৫,৬,৮,১১ নম্বর পিআইসি কমিটি উপজেলা এসও কে মোটা অংকের টাকা দিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগে উঠেছে।

শনি এবং মাটিয়ান হাওরে মোট পিআইসি ৮২ টি। এর মধ্যে মাঠিয়ান হাওরে ৩৯টি, শনির হাওর, ১০টি, গুরমার বর্ধীতাংশ ২৫টি মহালিয়া হাওরে ৪টি, হালির হাওরে ২টি এবং আঙ্গারওলী হাওর ২টি। নিয়ম অনুযায়ী ৩০ শে নভেম্বরের মধ্যে জরীপ কাজ শেষ করে ১৫ ডিসেম্বর বাধের কাজ শুরু হওয়ার কথা  এবং ২৮ শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে  শেষ হওয়ার কথা। দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, পাঠাবুকা গ্রামের মাসুক মিয়া জানান, ‘যাদের কাজ করার সামর্থ ও অভিজ্ঞতা নেই তাদের এবার পিআইসি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। এ ইউনিয়নের আমার ওয়ার্ডেই পিআইসি সবচেয়ে বেশি। কিন্তু কাজ দেয়া হয়েছে অন্য হাওরে লোাজনকে। অথচ এই হাওরে যাদের জমি আছে তাদেরকে পিআইসি কমিটি দেয়া হয়নি। এতে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ ঝুঁকিতে রয়েছে।

মাঠিয়ান হাওর পারের কৃষক, পরিবেশ কর্মী আব্দুল আমিন বলেন, প্রতি বছর নিতিমালা অনুযায়ী গনশুনানীর মাধ্যমে পিআইসি কমিটি গঠন করা হয়। এই বৎসর গনশুনানী করার পর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব (এসও) দালালের মাধ্যমে প্রকৃত কৃষককে বাদ দিয়ে এক লাখ টাকার বিনিময়ে তার প্রছন্দমতো লোকদের নিয়ে তিনি পিআইসি কমিটি গঠন করেন। যা নিতীমালা বহির্ভূত। হাওর বাঁচাও তাহিরপুর উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক তুজাম্মেল হক নাছরুম জানান, যদি কোন পিআইসি নিয়ে বিতর্ক কিংবা অভিযোগ ওঠে, তাহলে এগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা প্রয়োজন। প্রকৃত কৃষকরা যদি বাঁধের কাজ পায় তাহলে হাওরে কাজ ভাল হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব (এসও) মনির হোসেন বলেন, এমন একটি অভিযোগ আমার হাতেও এসেছে। সুনির্দিষ্ট প্রমান নিয়ে অভিযোগকারীদের তাঁর সঙ্গে দেখা করার উপদেশ দেন তিনি। বুধবার রাত সাড়ে সাতটায় উপজেলা কাবিটা স্কিম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভিনের মোবাইল নাম্বারে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn