রংপুরের চাঞ্চল্যকর অ্যাডভোকেট রথিশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে বাবু সোনা হত্যা মামলার রায়ে আদালত স্নিগ্ধা ভৌমিক ওরফে দীপাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে রংপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এ বি এম নিজামুল হক এ রায় ঘোষণা করেন। এডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে বাবু সোনা জেলা আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টের ট্রাষ্টি, জাপানী নাগরিক হোসিও কোনি ও মাজারের খাদেম রহমত হত্যা মামলার আইনজীবী। মামলায় রায় ঘোষণায় আদালতে হাজির করা হয় বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। আদালতে হাজির ছিলেন বাবু সোনার ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক ও ছেলে দীপ্ত ভৌমিক। আদালত রায় ঘোষণার সময় বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় উপস্থিত সকলের দৃষ্টি ছিল তার দিকে। মৃত্যুদণ্ডের রায় শুনে আদালতে নিশ্চুপ থাকেন স্নিগ্ধা ভৌমিক। নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকে মাথা নিচু করে রাখতে দেখা য়। বিচারকের কক্ষে প্রবেশ ও বিচার কাজ শেষে প্রিজন ভ্যানে নেয়ার সময় তিনি স্বাভাবিকভাবে হেঁটে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রায় ঘোষণার সময় এজলাশ কক্ষে উপস্থিত দীপা ভৌমিকের মাঝে কোন অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ করা যায়নি। চেহারায় কিছুটা ক্লান্তি ভাব লক্ষ করা গেলেও এই নৃশংস ঘটনায় জড়িত থেকে কোন অনুশোচনা ভাবও লক্ষ করা যায়নি। এ সময় তিনি কান্নাকাটিও করেননি। পুলিশি প্রহরায় স্বাভাবিক চলাচল করেন তিনি। তবে বিচারক রায় শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বাবু সোনার ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক ও ছেলে দীপ্ত ভৌমিক। মুত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর বাবু সোনার ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক সুবল বলেন, আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। পুলিশ প্রশাসন যে তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছেন এবং বিজ্ঞ আদালত অতি দ্রুত পর্যায়ে স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষে যে রায় ঘোষণা করেছে আমি বাদী হিসেবে এবং পরিবার হিসেবে সন্তোষ প্রকাশ করছি। তিনি বলেন, এ রায়কে আমরা খুশি বলবো না, কারণ আমার দাদাকে তো আর ফিরে পাব না। আমাদের মধ্য মণি ছিলেন তিনি, আমাদের মাথা ছিলেন তিনি। সেজন্য রায়ে আমরা খুশি, কিন্তু তাকে ফেরত না পাবার যে বেদনা সেটাতে অনেক অনেক অনেক মর্মাহত।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৯ মার্চ বৃহস্পতিবার রাতে রংপুর বারের সহকারি সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক বাবুসোনাকে ১০টি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর তার লাশ তাজহাট মোল্লাপাড়ায় প্রেমিক শিক্ষক কামরুলের ভাইয়ের নির্মাণাধীন বাড়ির ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখা হয়। পরবর্তীতে ৩ এপ্রিল মধ্যরাতে বাবুসোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার ওরফে দীপাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব আটক করে। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন এবং লাশের অবস্থান সম্পর্কে তাদের জানান। সেই সূত্র ধরে ওইদিন রাতে মোল্লাপাড়ার একটি বাড়ির মেঝে খুঁড়ে নিহত আইনজীবী বাবুসোনার গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাবুসোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার ওরফে দিপা, প্রেমিক শিক্ষক কামরুল ইসলাম, বাবুসোনার সহকারি মিলন মোহন্ত, ছাত্র মোল্লাপাড়া এলাকার সবুজ ইসলাম ও রোকনুজ্জামানকে গ্রেফতার করে। তদন্তে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা ও তার প্রেমিক কামরুল তাকে হত্যার কথা স্বীকার করে। তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে শ্বাসরোধে হত্যার কথা জানায় তারা। পরে কামরুলের বড় ভাইয়ের নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে পুঁতে রাখা লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দুই আসামি গ্রেফতারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn