সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়। এরপর ম্যাসেঞ্জারে মিষ্টি আলাপন। শুরু হয় প্রেম। একপর্যায়ে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন। তারপর শুরু প্রতারণা। একপর্যায়ে হাতিয়ে নেয়া হয় লাখ লাখ টাকা। এমন প্রতারকচক্রের প্রতারণার ফাঁদে পড়ছেন দেশের যুবক থেকে শুরু করে মাঝ বয়সীরা পর্যন্ত। টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য প্রতারকচক্রের সব থেকে বড় হাতিয়ার অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ফুটেজ।এই ফুটেজ দিয়ে ব্ল্যাক মেইল করেই চলে তাদের প্রতারণার কাজ। সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমন প্রতারকচক্রের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। তবে প্রতারণার শিকার বেশির ভাগ ব্যক্তিই মান-সম্মানের ভয়ে বিষয়টি গোপন করে যান। সে জন্য সব ঘটনার প্রকাশ পায় না। সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে এই চক্রের সদস্য দুই বোনকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

সূত্র মতে, গত ২৪ আগস্ট গভীর রাতে মোহাম্মদপুরের হাজী মকবুল হোসেন কলেজ রোডের ৪ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় মোসাম্মৎ ফারজানা ববি দৃষ্টি (২৪) ও মোসাম্মৎ নাতাশা আক্তারকে (২১)। সম্পর্কে তারা দুইজন বোন। পুলিশ জানায়, মনু মোহাম্মদ, আনিসুর রহমান ও জুবায়েত ইসলাম নামে তিন ব্যক্তির দায়ের করা অভিযোগের পর বিষয়টি তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ। একপর্যায়ে সব প্রমাণ পাওয়ার পরই ঢাকা মহানগর দক্ষিণে ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মো: বাহাউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। তবে এই চক্রের মূল হোতা জাহিদ হোসেন সানিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ দিকে গ্রেফতার হওয়া দৃষ্টি ও নাতাশাকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ওই জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে প্রতারণার নানা তথ্য। ভুক্তভোগী ওই তিনজনের কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত এই চক্রের মূল হোতা জাহিদ সানি। তার অধীনে থাকা স্কুল-কলেজে পড়া ছাত্রীদের দিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এরপর ফেসবুক প্রোফাইল দেখে ওই সুন্দরীদের দিয়ে ব্যবসায়ী ও উচ্চপর্যায়ের চাকরিজীবীদের সাথে বন্ধুত্ব করা হয়। ম্যাসেঞ্জারে চলতে থাকে মিষ্টি আলাপচারিতা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে গভীর প্রেমে।এরপর অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের জন্য আহ্বান করা হয়। প্রতারকচক্রের পছন্দ মতো জায়গায় নিয়ে শারীরিক সম্পর্কের সময় গোপনে মোবাইলে কিংবা কলম ক্যামেরার মাধ্যমে অশ্লীল সেই ভিডিও ফুটেজ ধারণ করা হয়। পরে তা দিয়ে ফেসবুক বন্ধুদের জিম্মি করে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। টাকা দিতে না চাইলে শুরু হয় ভয়ভীতির হুমকি। পুলিশ জানায়, অনেকেই লাজ-লজ্জার ভয়ে টাকা দিয়ে তাদের কাছ থেকে বেঁচে আসতে চান। আবার কোনো কোনো চক্রের সদস্যরা ফাঁদে ফেলে বিয়ে করতে চাপ সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে বিয়ে হয়ে গেলে দেনমোহরের মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে সটকে পড়ে।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, এই নারীদের ব্যবহার করছে মূলত কিছু পুরুষ। প্রেমের সম্পর্ক গড়া থেকে শুরু করে শারীরিক সম্পর্কের জায়গা পছন্দ করা, ভিডিও করা, এরপর সেটা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা থেকে শুরু করে টাকা কালেকশন সব কিছুই করে থাকে পুরুষ সদস্যরা। তেমনই একজন সানি। সানিকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। তাকে ধরতে পারলে ওই চক্রের সম্পর্কে আরো তথ্য পাওয়া যাবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn