০৬ জুলাই ২০২১, মঙ্গলবার। শেষ বিকেলে একজন (শাকিল আহমদ) একটি বই দিয়ে গেলেন। বইটির নাম ‘সময়ের স্মৃতিতে বহুমাত্রিক প্রতিভা মুহাম্মদ অব্দুল হাই’। তখন ঘড়িতে সময় হয় তো ছ’টার কাঁটা পেরিয়ে গেছে। বইটির বহর এতো বড়ো হবে কল্পনাও করিনি। সম্পাদক ইমানুজ্জামান মহী হাই স্যারের একান্ত স্বজনদের একটি করে নাতিদীর্ঘ পরিচিতি বইটিতে সন্নিবেশিত করে দিয়েছেন। কোনও স্মারকগ্রন্থে যাঁর স্মৃতিচারণ করা হয় তাঁর সঙ্গে এমন সংশ্লিষ্টজনের পরিচিতি প্রকাশের ব্যাপক উদ্যোগের যথার্থতা বিবেচনার আগে কার কার পরিচিতি প্রকাশ পেলো একনজর দেখে নিচ্ছিলাম। সেখানে দেখলাম বন্ধু সুফিয়ানের পরিচিতিটাও তোলে দেওয়া হয়েছে। পাশে একটি সাদাকালো ছবি ছাপিয়ে লেখা হয়েছে, ‘ওয়াহিদুর রহমান (সুফিয়ান)’। এই বন্ধনীমুক্ত ‘ওয়াহিদুর রহমান’কে, এক অর্থে বলা যায়, আমি চিনি না, তাঁকে সব সময়ই ভুলে থেকেছি এবং অপরিচিত ঠেকেছে। মনে রেখেছি আদি অকৃত্রিম, এখানে বন্ধনীবদ্ধ, ‘সুফিয়ান’কে।

বইটি উল্টেপাল্টে দেখছিলাম। সুফিয়ানের ছবিটায় যখন চোখ গেল, স্বাভাবিক ভাবেই এই ছবির রেশ ধরে সুফিয়ান নামের আমার বন্ধুটি ভাবনার জগতে পূর্ণদেহায়ববে হাজির হয়ে তার মনোহর হাসিটি উপহার দিল। কীছুক্ষণের জন্যে হলেও আমি বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে একটি ভাবনার জগতে চলে গেলাম। সে এক অন্যরকম জগত, অপরূপ তার প্রকৃতিপরিসর । সেখানে ক্ষণে ক্ষণে শুধু একটি বিশেষ মুখকে ঘিরে শতসহস্র স্মৃতির অবিরাম পল্লবায়ন, পার্থিব জীবনকে অপার্থিব এক বাস্তবতায় প্রত্যক্ষ করা, নতুন এক পৃথিবীতে পরিভ্রমণ। এও এক অন্যরকম অদ্ভুত বাস্তব ঘরকালজিয়া (ঘরকাতরতা+নাস্টালজিয়া) । কখনও কখনও এই রকম ঘরকালজিয়াতে (নস্টালজিয়াতে) নিজেকে সমর্পণ করে দিতে ভীষণ ভীষণ ভালো লাগে। ভাবনার পরিযায়িতায় সে এক অপরূপ ভেসে যাওয়া। অসম্ভব এক স্বপ্নসুখ। আহা জীবন এতোটা মধুর। চোখ বুঝে দূরের কাউকে একান্ত কাছে পাওয়ার এমন প্রকরণ আয়ত্ব করতে পেরেছে বলেই, বোধ করি এই মানুষ প্রজাতি নিজেকে অন্যান্য জীবপ্রজাতি থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে, আরও আরও বেশি করে মানুষ হতে পেরেছে।

ঘরকলজিয়ার এই পরাবাস্তবতা থেকে ফিরে এসে বলতে হয়, আমার ভাবনার জগতের এই মানুষটি, সুনামগঞ্জ পৌরসভার আরপিননগরের তালুকদার বাড়ির সুফিয়ান, সত্যি সকলের চেয়ে আলাদা এক মানুষ, অন্য রকমের, তুলনাহীন। অন্য কারও কাছে সে এইরকম ‘তুলনাহীন’ কী না জানি না, অন্তত আমার কাছে সে তুলনারহিত, অনেক অনেক দিক থেকে। সুফিয়ানের তুলনা কেবল সুফিয়ান, সে একজনই।

সবচেয়ে ভালো লাগেছে, যখন কালেভদ্রে কখনো দেখা হলে দুই ডানা মেলে আমাকে বন্দি করে নিয়েছে তার কবোষ্ণ আলিঙ্গনে, বুকের কাছাকাছি এবং অকিৃত্রিমভাবে মনে হয়েছে, মা পাখির বিশাল স্নেহোষ্ণ ডানার তলে আমি চিরতরে বন্দি হয়ে গেছি, যে বন্দিত্বে অনন্ত সুখ আছে। এমন সময় তুই-তুকারি করে কথা বলার তুবড়ি ছুটানো মাদকতার মধ্যে জীবনটা অন্যরকম এক মাত্রা নিয়ে উপস্থিত হতো । সত্যি সে জীবনের রঙরকমভাবটা আটপৌরে নয়, অবর্ণনীয় অন্যকরম, সে এক একান্ত সুন্দর, কেবল দু’জনে দু’জনার। এই অন্যরকম আবেশের দোলনায় জীবনকে দোলিয়ে দিয়ে অলিঙ্গনে বেঁধে রেখেই ভালোমন্দ সুখদুঃখের সকল খবর নিয়েছে, অথবা কখনও অতীতের কোনও ঘটনার স্মৃতি নিয়ে আমাকে খোঁচিয়ে ক্ষ্যাপাতে চেয়েছে। সে ক্ষেপানোর রকমসকমটাও আদপাদমস্তক মাত্রাছাড়া, পরিমিতির বোধকে প্রবল ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিয়ে জীবনকে নিয়ে মস্করা করার এক প্রচণ্ডতা। সে আর এক মধুর তাণ্ডব। কখনও বা কথার তুবড়িতে রসিকতার রুমাল উড়িয়ে তথাকথিত শালীনতার সীমা মিসমার করে দিয়ে হেসেছে প্রাণ খোলে দরাজ হাসি। অথচ সে আমার চেয়ে কম করে হলেও পাঁচ/ছয় বছরের ছোট ছিল। আমার জন্ম ২৮ আগস্ট ১৯৫৬, আর সুফিয়ানের ১ জানুয়ারি ১৯৬২। বয়সের এই তফাৎটাকে সে তুলোর মতো তুচ্ছ করে উড়িয়ে দিয়েছিল বন্ধুত্বের অফুরন্ত উদ্দামতা আর অসম্ভব রকমের ভালোবাসার তুফান ছুটিয়ে দিয়ে। এমন বেপরোয়া, পরিমিতিবোধের ধার ধারে না, অথচ কী করে জানি না বার বার হৃদ্যতার সংজ্ঞা হয়ে উঠে, এমন পরম বন্ধু আমার এ শহরে একজনই ছিল। তার নাম সুফিয়ান।

জানতাম বন্ধুটি আমার অনেক দিন যাবৎ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে, সান্ত¦না দুই মেয়ে এক ছেলের সঙ্গে স্ত্রীসমবিব্যহারে তবু বেঁচে ছিল। মাঝে মাঝে যখন তার অসুস্থতার খবর শুনতাম কেন জানি তখন আমার প্রায়ই মনে হতো এই মানুষটি তার জীবনটাকেই এমন এক বেপরোয়া প্রকরণের সাঁচে ঢালাই করে নিয়েছে যে, নিজেরই অজান্তে, যেখানে তার নিজের দেহের প্রতি কোথায় একটি আত্ম-অবহেলার অনিবার্য প্রক্রিয়া জায়মান আছে। ২০১৬ সালে হৃদযন্ত্রের জটিলতাকে সামাল দিয়েছে রিং বসিয়ে। আবার ২০১৭ সালে এসে তার মস্তিষ্কে চিকিৎসাশাস্ত্রেরও অজানা এক ব্যাধি এসে বাসা বেঁধেছে এবং শেষ পর্যন্ত জগৎ-সংসারকে দাপিয়ে বেড়ানো দাপুটে মানুষটিকেই শয্যা নিতে হলো, তাও বাকহারা হয়ে। এমনি ব্যাধিগ্রস্ত শয্যাশয়ী বন্ধুর কথা মনে পড়তে মুহূর্তেই আমার এতোক্ষণের ঘরকালজিয়ার নিমজ্জন-পরিসরে উজ্জীবিত আনন্দের অমরাবতী ভেঙে চুরমার হয়ে গেলা। একেই বোধ করি বলে, স্বর্গ থেকে অধঃপাতে পতনের ঘটনা এবং তৎপ্রেক্ষিতে প্রকৃতপ্রস্তাবে একধরণের বিষণ্নতা আমাকে গ্রাস করে নেয়, নিরানন্দের হিম স্পর্শে বিমর্ষতার প্রবল চাপ অনুভূত হয়। হঠাৎ করেই কান্নার উদ্রেক হলে সামলে উঠার প্রবল চেষ্টায় ব্যতিব্যস্ত হই। কিন্তু আমি কাঁদলাম না, আমি আমার বন্ধুর সুস্থতা কামনা করতে করতে বাস্তবে ফিরে আসতে শুরু করলাম, এবং তখন পাশেই বিছানায় রাখা আমার মুটোফোনটি বেজে উঠলো, পর্দায় অনুজ পঙ্কজের (দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরের সম্পাদক পঙ্কজ দে) নাম।

ও পাশ থেকে পঙ্কজের বিমর্ষ কণ্ঠ ভেসে এলো। ‘সুফিয়ান ভাই নেই।’ একধরণের তড়িৎ-বিষণ্ন-স্তব্ধতায় নিমজ্জিত হতে হেতে শুনলাম, ‘কীছুক্ষণ আগে মৃত্যু হয়েছে’। এই ধরণের একটি বার্তা পরিবেশন করে কয়েক মুহূর্তের বিরতির পর পঙ্কজ ফিরে এলো তার সাংবাদিকতার স্বাভাবিক কর্তব্যসাধনের দৈনন্দিনতায়। একজন সম্মানিত সাধারণ নাগরিক, যিনি কিনা জেলা পরিষদের একজন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান (২০০৩Ñ২০০৮ পর্যন্ত), একটি ইউনিয়নের (লক্ষণশ্রী) দুই দুইবারের চেয়ারম্যান, এমন একজন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধিকে মরোণোত্তর শ্রদ্ধা জানানো পঙ্কজের পেশাগত দায়িত্ব। পেশাগত সে-দায়িত্ব তাকে পালন করতেই হবে, কিন্তু সেই সঙ্গে তাকে ভুলে গেলে চলবে না, সুফিয়ান একজন বামপন্থী ঘরানার রাজনীতিক সন্তান। এই রাজনীতিক-আদর্শিকতার-পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় সাংবাদিকতাসংশ্লিষ্ট পেশাগত দায়িত্বেরও অধিক একটি দায়িত্ব তার কাঁধে ভর করে আছে আগে থেকেই, সেটাও অবশ্য আর এক অলঙ্ঘনীয় দায়িত্ব। বঙ্গবন্ধু-পরবর্তী মোশতাক-জিয়া-এরশাদ-দোষাবহ জটিল রাজনীতির পরিসরে, অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্টের বঙ্গবন্ধুহত্যা পরবর্তী সময়ে সুনামগঞ্জের রাজনীতিক পরিসরে, যে-বামরাজনীতির আদর্শের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া সে (পঙ্কজ) নিজে, সুফিয়ানও তাই। এই রাজনীতিক চক্রমণের পরিসরে জায়মান রাজনীতিক-আদর্শিক-শিক্ষানিকেতনের প্রথম গুরু প্রসূনকান্তি রায় ও দ্বিতীয় গুরু নজির হোসেন। এই দুই গুরুর শিষ্যত্বের সুবাদে তারা দু’জনই (পঙ্কজ ও সুফিয়ান) সতীর্থ। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে সুফিয়ান সম্পৃক্ত থেকেছে এবং আওয়ামী লীগে যোগদানের আগে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের জেলা শাখার সভাপতি ছিল। সুতরাং সতীর্থের প্রতি মরণোত্তর কর্তব্য সাধনেরও ছেঁড়া-যায়-না-এক-বাধ্যবাঁধকতার সুতোয় বাঁধা তার (পঙ্কজের) সাংবাদিকতা। মুঠোফোনে কথা বলার সময় এটা (দু’জনের এই রাজনীতিক সম্পর্কের প্রসঙ্গটি) পুরোপুরিই হৃদবোধ হচ্ছিল। তখন আমার মুঠোফোনের ঘড়িতে সন্ধ্যা ৭টা ১১ মিনিট। ফোন ছাড়ার আগে আগামী কাল সুফিয়ানকে নিয়ে একটি লেখা অবশ্যই দেয়ার জন্যে দাবি জানাতে ভুললো না পঙ্কজ। মনে মনে ভাবলাম, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে আর সাংবাদিক-সম্পাদক লেখা চায়।

সুফিয়ানের সঙ্গে আমার পরিচয়প্রসঙ্গের কোনও নির্দিষ্ট ক্ষণ তারিখ উল্লেখ এখানে করা সম্ভব নয় এবং এসব ক্ষেত্রে যা হয়, অর্থাৎ যথারীতি মনেও নেই। তবে এর একটা ঐতিহাসিক পরিসরপরিপ্রেক্ষিত অবশ্যই ছিল, যেমন যে-কোনও সংঘটপঞ্চের (সংঘটন+প্রপঞ্চ) থাকে। সেটার (সুফিয়ানের সঙ্গে আমার পরিচয়প্রসঙ্গের) পটভূমিটি নিতান্ত ছোট তো নয় বরং যথার্থ অর্থে পরিসরব্যাপকতায় বিশাল এবং বিস্তারিত সন্নিবেশনের উপযুক্ত ক্ষেত্র নয় অদ্যকার লেখটি। কেবল বলি ১৯৭৮-এর দিকে রাজনীতির মাঠের বনবাদাড় তোলপাড় করে ফেরা কমরেড নজির হোসেন ঘরনি এনেছেন তাঁর ঘরে। আর ষোলঘর এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়ের উত্তরে একটি কুঁড়েঘর বা পর্ণকুঠির তোলেছেন, শ্বশুরের ধানী জমিতে পোতা জাগিয়ে। এর পরপরই রাজনীতির মাঠ সরগরম করে তোলেছেন বামপন্থীরা। বরুণদার (প্রসূনকান্তি রায়ের) নেতৃত্বে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সম্পাদক নজির হোসেন তাঁর যাবতীয়যতসব সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ভাসান পানির আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। অমর চাঁন দাস, নির্মল ভট্টাচার্য, চরিত্রকান্ত চক্রবর্তী, বিজন সেন রায়, মইনুদ্দিন আহমদ জালাল, জহির উদ্দিন সোনা মিয়া, পাণ্ডব দে, মিলনকান্তি দে, মালু মিয়া, রমজান শিকদার, বারেক মিয়া, আব্দুশ শহীদ, আব্দুশ শহীদ মাস্টর, আবুল খয়ের, হোসেন মিয়া, আইযুব বখত জগলুল, প্রমুখ একদঙ্গল ছাত্র-জনতা-কর্মী বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশার হাজার হাজার ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক-জেলের সঙ্গে ভাসান পানির আন্দোলনের শরিক। এঁদের কেউ কেউ ছিলেন সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়নের বাইরের কোনও কোনও রাজনীতিক দলের লোক। এঁদেরই একজন ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাহসী ও বেপরোয়া কর্মী সুফিয়ান। ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে সুফিয়ানের সঙ্গে আমি ছিলাম না সত্যি কিন্তু সিপিবির সদস্য হওয়ার পর ভাসান পানির আন্দোলনে তার সহকর্মী ছিলাম, সব সময় একসাথে কাজ না করলেও একই লক্ষ্যে একই কাজ করেছি, সে-সুবাদে হৃদ্যতা আরও বেড়েছে, প্রগাঢ়তা লাভ করেছে।

তখন নজির হোসেনের কুঁড়েঘরটি প্রকৃতপ্রস্তাবে ছিল জেলার সকল বামপন্থী (অবশ্যই মস্কোপন্থী, পিকিংপন্থী নয়) রাজনীতিক কর্মের সদর দফতর, অথবা বলা ভালো রাজনীতিক অখড়া । এই বাসাটিই ছিল (বছর কয়েক যেতে না যেতেই কুঁড়ে ঘরের পাশে একটি অর্ধসমাপ্ত ইটকংক্রিটের দালানও দাঁড়িয়ে গিয়েছিল) সকল কমিউনিস্ট নেতা ও ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের অলিখিত কার্যালয়। আমিও একদা এই বাসারই বাসিন্দা ছিলাম স্বীয় ভাই, ভাবি ও ভাবির ভাইবোনদের সঙ্গে একজন হয়ে। রাজনীতির স্বার্থে উৎসর্গীকৃত এই আখড়াতেই এই জেলার সকল মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট নেতাকর্মী ও ছাত্র উনিয়নের কর্মীদের সঙ্গে কম বেশি কিংবা ভাসাভসা পরিচয় ঘটেছে আমার। সুফিয়ানের সঙ্গে পরিচয়টিও তখনই এখানেই ঘটে। ছাত্র ইউনিয়নের ভীষণ উদ্যমী ও সাহসী এই কর্মীটি লেতিফেতি কেউ যে ছিল না তার প্রমাণ মেলে সে ভাসান পানির আন্দোলনে আলফাত উদ্দিন আহমদ মোক্তার সাব ও নজির হোসেনের সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছিল এবং বেশ কীছু দিন জেলে খেটেছে।

‘কীছুক্ষণ আগে মৃত্যু হয়েছে’ ফোনে পঙ্কজের কথিত বাক্যটি যাচাই করতে গিয়ে পরে জেনেছি, সুফিয়ানের চলে যাওয়ার সময়টি বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট এবং তখন সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। সে-তার তালুকদার বাড়ির নিভৃত শয্যায় জীবমৃত হয়েও টিকে ছিল, হয় তো আরও কীছু দিন তার প্রিয় পরিজনের সঙ্গে কাটিয়ে যেতে পারতো। তার একটি ছেলে দুইট মেয়ে ও স্ত্রী সমবিব্যহারে। তাদের স্পর্শ, তাদেরকে চোখ ভরে দেখা, জীবনের এই প্রাপ্তি বোধ করি তার জন্যে কম ছিল না। কিন্তু তা হলো না। এই ‘হলো না’-র পেছনের মূল কারণ তার পুরোনো ব্যারাম নয়, করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) আক্রমণ। বাকহারা অসহায় বলতে গেলে নির্জীব একটি মানুষ যে নিভৃত একটি শয্যায় বলতে গেলে লুকিয়ে রেখেছিল নিজেকে, সেটা একধরণের জননিরোধ (কোরেন্টাইন) ছিল বলেই তো মনে হয়। সেখানেও করোনা ভাইরাস তাকে খোঁজে বের করেছে। কী আর করা ! হৃদপিণ্ডের অসুখ, মস্তিষ্কে অজানা ব্যাধির আক্রমণ তার সয়েছিল, কিন্তু করোনার আক্রমণ বড় নির্মম, কঠিন ও অব্যর্থ, সইলো না।

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn