প্রকৃতি অস্বাভাবিক আচরণ করছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক, উদ্বেগের। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই প্রকৃতি এ অস্বাভাবিক আচরণ করছে। ফলে সামনের দিনগুলিতে বৃষ্টিপাতে হাওরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাওরাঞ্চলে বন্যার প্রকোপ বেড়েই চলেছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবগুলো হাওরে বাঁধ ভেঙে বন্যার পানি ঢুকে ফসল ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিলেটসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টি কমতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। ফলে এটা অনুমেয় যে, হাওরে বন্যার প্রকোপ আরো প্রবল হবে। এ বৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাওরাঞ্চলের মানুষ। বন্যা প্রলম্বিত হলে তাদের দুর্ভোগ আরো বাড়বে। এদিকে, বঙ্গোপসাগর উত্তাল, বইছে ঝড়ো হাওয়া।

গ্রীষ্মে অস্বাভাবিক এই বৃষ্টিপাতের চিত্র বেশ ভয়াবহ। এই এপ্রিল মাসে তিরিশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ মাসে এখন পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮ হাজার ৯০৪ মিলিমিটার। স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ধরা হয় ৪ হাজার ৫৩ মিলিমিটার। এবছরে এখন পর্যন্ত বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চাইতে ১১৯.৭ শতাংশ বেশি। গত বছরের চিত্র ছিল একেবারে উল্টো। গত বছরে ছিল বৃষ্টিহীনতা। অত্যধিক গরম।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, এখনকার অতিবৃষ্টি ও এর আগের বছরে গরম বৃদ্ধি পাওয়া— দুটোই আশঙ্কাজনক। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতিতে এ অস্বাভাবিকতা দেখা দিচ্ছে। এর জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। দেরি করবার সময় নেই। ড. আইনুন নিশাত আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কথা হচ্ছে প্রকৃতির অস্বাভাবিকতা। সে অস্বাভাবিকতা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এবছর অতিবৃষ্টি এবং বিগত বছরে অনাবৃষ্টি দেখছি। এ পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশে এপ্রিলে এর চেয়েও বেশি বৃষ্টি হয়েছিল সর্বশেষ ১৯৮৭ সালে। সেটি ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৭৬ শতাংশ বেশি। গত ৩৭ বছরে আট বার এপ্রিল মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ১৯৮১ সালের এপ্রিলে স্বাভাবিকের তুলনায় ১৬৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছিল। পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) উপ-নির্বাহী পরিচালক মমিনুল হক সরকার বলেন, এই অতিবৃষ্টি আর অনাবৃষ্টি অস্বাভাবিক। প্রকৃতির এই অস্বাভাবিক আচরণ জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্যগুলোর দিকেই নির্দেশ করে।

জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণ নিয়ে ড. আইনুন নিশাত বলেন, দেখা যাচ্ছে গ্রীষ্ম ছোট হয়ে গেছে। জ্যৈষ্ঠতে বৃষ্টি হচ্ছে। জুন-জুলাই বৃষ্টি হয়; কিন্তু সে মাসে বৃষ্টি কম হচ্ছে। বরং আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি প্রলম্বিত হচ্ছে। শরত্ ও হেমন্ত হারিয়ে এক হয়ে গেছে। শীত কমে গেছে। মাত্র ১৫-২০ দিন শীত অনুভূত হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে ষড়ঋতুর দেশে গ্রীষ্ম-বসন্ত ও হেমন্ত প্রকৃতি থেকে হারিয়ে গেছে। এ সবকিছুই জলবায়ু পরিবর্তনের একেকটি নির্দেশক। তাই এখনকার অতিবৃষ্টি ও এর আগের বছরে গরম বৃদ্ধি পাওয়া— দুটোই আশঙ্কাজনক। আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। দেরি করবার সময় নেই।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn