সাথিরা জাকির জেসি। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা লালমনিরহাটের পাটগ্রামে তাঁর জন্ম।প্রত্যন্ত এলাকায় জন্ম হলেও ছোট বেলা থেকেই বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার সাচিন টেন্ডুলকারের নাম জানতেন জেসি।টেন্ডুলকারের ব্যাটিং তাঁর খুব ভালো লাগতো। খুব একটা খেলা দেখা হতো না। কারণ গ্রামে স্যাটেলাইট সংযোগ ছিল না।তবে প্রায়ই তিনি রেডিওতে চৌধুরী জাফরুল্লাহ শরাফতের ক্রিকেট ধারাভাষ্য শুনেছেন।তখন থেকেই তাঁর মনে স্বপ্ন তৈরি হয় টেন্ডুলকারের মতো ক্রিকেটার হওয়া। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব?লালমনিরহাটের পাটগ্রামে জেসি যখন ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন দেখতেন, তখন তখন তার চারপাশে কেউ চিন্তা করেনি যে মেয়েরা ক্রিকেট খেলবে।ছোট বেলায় জেসি দেখেছেন, তাঁর চারপাশে মেয়েরা কিছু খেলা খেলতেন, যেগুলো মেয়েদের জন্য উপযোগী বলে মনে করা হতো । কিন্তু সেসব খেলা জেসিকে কখনোই টানেনি।২০০১ সালে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে ভর্তি হন তিনি।কিন্তু সেখানে ভর্তি হওয়া তাঁর জন্য মোটেও সহজ ছিল না।“আমি যখন অ্যাপ্লাই করলাম তখন আমার কার্ড আসেনি। কারণ বাংলাদেশে তখন মেয়েদের কোন ক্রিকেট টিম ছিল না। সেজন্য বিকেএসপিতে মেয়েদের কোন ক্রিকেট ছিল না,” বলছিলেন জেসি।
কিছুদিন অপেক্ষার পর যখন বিকেএসপিতে ভর্তির জন্য কার্ড আসছিল না , তখন বাবাকে নিয়ে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থেকে সাভারের বিকেএসপিতে আসেন তিনি।

বিয়ের পর সন্তান নিয়েও খেলা চালিয়ে গেছেন জেসি

কিন্তু বিকেএসপি কর্তৃপক্ষ জানালো মেয়েদের ক্রিকেট দল না থাকায় জেসিকে ক্রিকেটের জন্য নেয়া সম্ভব হচ্ছে না ।শারীরিক কিছু পরীক্ষার পর বিকেএসপির প্রশিক্ষকরা জেসিকে পরামর্শ দিলেন যে টেনিস কিংবা শুর্টিং-এ সে ভর্তি হতে পারে।পরবর্তীতে ক্রিকেট দল গঠন করা হলে জেসি সেখানে যোগ দিতে পারবে বলে আশ্বস্ত করেন বিকেএসপি’র কর্মকর্তারা।উপায় না দেখে তখন শুটিং-এ ভর্তি হলেন জেসি। কিন্তু তাঁর মন থাকতো ছেলেদের ক্রিকেট খেলার মাঠে।ক্রিকেটের প্রতি জেসির তীব্র আগ্রহ দেখে ছেলেদের ক্রিকেটে তাকে সপ্তাহে একদিন ক্রিকেট প্রশিক্ষণ দিতেন।তখন সপ্তাহে একদিন তিনি ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলতেন। বিকেএসপিতে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করলেও তখন সেখানে মেয়েদের কোন ক্রিকেট টিম গড়ে উঠেনি।২০০৭ সালে এইচএসসি পরীক্ষার সময় জেসি জানতে পারেন, ঢাকায় মেয়েদের একটি ক্রিকেট লীগ শুরু হবে। তখন তিনি ঢাকা জেলা মহিলা ক্রিকেট দলে নাম লেখালেন।সে লীগে ভালোই পারফর্ম করেছিলেন জেসি। এরপর জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয় তাঁর।কিন্তু পরিবারের ইচ্ছা ছিল ভিন্ন ধরণের। জেসির মা-বাবা চেয়েছিলেন তিনি যেন ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু জেসি চেয়েছিলেন পড়াশুনার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলায় মনোনিবেশ করতে। ২০১৬ সালে তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন।জেসি বলছিলেন, তাঁর বিয়ে হওয়ার পর থেকে অনেকেই ধারণা করেছিলেন যে তিনি আর ক্রিকেট খেলতে পারবেন না।” একটা মেয়ের বিয়ে হয়ে যাবার পর সে ক্রিকেট খেলবে, এ বিষয়টা অনেকই সহজভাবে নেয় না।”

২০১৪ সালে আইসিসি টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ট্রফি হাতে জেসি

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলে একজন ভারতীয় নারী কোচ এসেছিলেন।জেসির বিয়ের পর সে নারী কোচ তাঁকে দল থেকে বাদ দেন। অজুহাত হিসেবে জেসির বিয়ের বিষয়টি সামনে এসেছিল।কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। ভালো খেলা দেখিয়ে তিনি আবারো জাতীয় দলে ফিরে আসেন। বিয়ের পর এক সন্তানের জননী জেসি তাঁর খেলা চালিয়ে গেছেন। একই সাথে তিনি ক্রিকেটের কোচ হিসেবে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। তিনি বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় ক্রিকেট কোচিং এবং ক্রিকেট বিষয়ক অনুষ্ঠান করেন।বিবিসি

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn