বিশেষ প্রতিবেদক–বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা হয়েছে ‘বাইচান্স মানে ভাগ্যক্রমে’। গয়েশ্বর রায় এ কথা বলে শুধু স্বাধীনতার সকল অবদানকে অস্বীকার করে থেমে থাকেননি। দেশের সংবিধানকেও বলছেন অপরিকল্পিত। ক্ষমতায় গেলে সংবিধান পাল্টানোর হুমকিও দিয়েছেন।

গয়েশ্বরের বক্ত্যবে অনেকে নাখুশ। তার উপর ক্ষ্যাপেছেন কেউকেউ। অনেকের প্রশ্ন দীর্ঘ সংগ্রাম ও ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ এ সব তাহলে কি ছিলো?

গয়েশ্বরের বক্তব্য নিয়ে যে যাই বলুক “বাইচান্স” বলার পিছনে কিন্তু তার যুক্তি আছে। বিএনপির দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে “বাইচান্স” কথাটা আংশিক সত্য। গয়েশ্বর রায়’রা এতদিন বড় গলায় বলে আসছিলেন বিএনপি’র প্রতিষ্টাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। কিন্তু সবাই জানে তিনি ‘বাইচান্স’ মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যদি ‘বাইচান্স’ হয়। জিয়াউর রহমান যে “বাইচান্স স্বাধীনতার ঘোষক এবং বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধা সেটাতো আর প্রমানের অপেক্ষা রাখেনা।

প্রসঙ্গক্রমে “বাইচান্স” নিয়ে আরো একটু কিছু বলতে হয়। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগে বিএনপির গয়েশ্বরের মতো কিছু বটেশ্বর আওয়ামীলীগার আছে। দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাষায় যারা “কাউয়া”। এ সব “কাউয়া”দের কাম কাজ দেখলে সত্যি লজ্জা লাগে। এদেরকে অনেকে আবার বলেন “হাইব্রিড”। এমনি একজন হচ্ছেন,আমাদের সুনামগঞ্জ ১ আসনের “বাইচান্স” সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। দল না করে ২০০৮ সালের “বাইচান্স” তিনি এমপি বনে যান। সেই থেকে এ নিয়ে ৩ বারের এমপি। এই “বাইচান্স” এমপির খুব সখ “বঙ্গবন্ধু” ছবির সাথে নিজের ছবি দেখার। সেই সাধ শুধু একার নয়। জেগেছে তার পিচ্ছি ভাইয়েরও।

নকশা পরিবর্তন করে সরকারী অর্থায়নে নির্মিত বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে তাই বসিয়েছেন দুই ভাইয়ের ছবি। হাইকোট বাদ না সাধলে বংশের বাকী সবার ছবি হয়তো একেএকে বসিয়ে দিতেন।

আমাদের অঞ্চলে একটা কথা আছে-“পাইছে পরের ধন বাপ-পুতে গায় কীর্তন।” সরকার ১০ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছে উনারা কীর্তন গাওয়ার জন্য। মোয়াজ্জেম- মোজাম্মেল দুই ভাই। নাম যেমন ছন্দময়। জুটিও তেমন মধুময়। একজন এমপি। অন্যজন্য উপজেলা চেয়ারম্যান। এলাকায় উনারাই সর্বেসর্বা। ক্ষমতাশালী -ক্ষমতাবান। একজন নামের আগে লাগান ইঞ্জিনিয়ার (কারিগর)। পদ না পদবী এটা জানিনা। শুনেছি “ভকেশনাল” সনদ প্রাপ্ত এই তথাকথিত ইঞ্জিনিয়ার নাকি এক সময় চাকুরী করতেন। কারিগরি না করেও নামের সাথে তিনি কারিগর বলতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। বীরদর্পে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব এমপি হয়েও তাই কারিগর হয়ে রইলেন।

দুই হাজার ৮ সালের আগে এই ইঞ্জিনিয়ার সাহেব জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু উচ্চারন না করলেও তিনি এখন আওয়ামী লীগারের চেয়ে বড় আওয়ামীলীগার। বঙ্গবন্ধু আর প্রধানমন্ত্রীর ছবির কাতারে তার ছবি থাকাটা তার অধিকার।

অসুবিধা কি? নিজের টাকায় ১টা নয় হাজারটা ‘ম্যুরাল’ বানিয়ে নিজের ও নিজের পরিবারের সবার ছবি বসিয়ে দিন। কার বুকের পাটা আছে কিছু বলে।

উনার আরো কিছু সুনাম আছে। সুশ্রী দ্বিতীয় স্ত্রী প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা না করে উনার ক্ষমতা বলে মাসের পর মাস সরকারী বেতন ভাতা আত্মসাৎ করেছেন। করোনা কালীন সময়ে এমপি সাহেব এলাকার স্কুল শিক্ষার্থীদের ১ বছরের বকেয়া বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার কথা আজও শুনিনি।

দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক কাদের ভাইয়ের বর্ণিত “কাউয়া” কবে দল মুক্ত হবে? কাদের ভাইয়ের কাছে জানতে ইচ্ছে করে। কাদের ভাইয়ের আরেকটা প্রখ্যাত ডায়লগ “ভালো হয়ে যাও মাসুদ।” “মাসুদ”‘রা কি তা হলে কখনো ভালো হবেনা?

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn