দীন ইসলাম-

বহুল আলোচিত তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এর ৫৭ ধারা বাতিল করতে যাচ্ছে সরকার। একই আইনের ৫৫, ৫৬ ও ৬৬ ধারাও বাতিল করা হচ্ছে। ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮’ এর খসড়া ভেটিংয়ে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে। নীতিগত অনুমোদন হওয়া আইনটি আজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের  জন্য উঠবে। মন্ত্রিসভার জন্য পাঠানো সার সংক্ষেপে দেখা যায়, আইসিটি আইনের অজামিনযোগ্য ৫৭ ধারা বাতিল হলেও নতুন আইনে ৫৪ ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এ ধারায় অপরাধের গুরুত্ব ও দণ্ডের মাত্রার ভিত্তিতে কিছু অপরাধকে আমলযোগ্য ও অ-জামিনযোগ্য এবং কিছু অপরাধকে অ-আমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য করার কথা বলা হয়েছে।

পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৮ (১) (ক) কে আদালতের সম্মতি সাপেক্ষে আপোষযোগ্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো আইনের ২১ ধারায় শাস্তির কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এ আইনের অধীনে অপরাধের শাস্তি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার প্রস্তাব করা হলো। এর আগে নীতিগত অনুমোদনের জন্য খসড়া আইনের ১৫(৫) ধারায় বলা হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা, প্রচারণা ও মদত দেয়ার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ কর্তৃক ভেটিংকৃত খসড়ায় ‘জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল’ গঠনের কথা বলা হয়েছে। ভেটিং অনুযায়ী কাউন্সিলের কাঠামো তৈরি করে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের জন্য পাঠিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। নতুন আইনের ধারা ৬২ তে বলা হয়েছে, এ আইনটি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এর ধারা- ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ বিলুপ্তি হয়ে যাবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫২ ধারায় বলা হয়েছে, আইনটি টেকনিক্যাল প্রকৃতির বিধায় বিচারকাজ চলাকালে বিচারক প্রয়োজনীয় মনে করলে কোনো ডিজিটাল অপরাধের টেকনিক্যাল বিষয়ে বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে পারবেন। একই আইনের ৫৭ ধারায় মহাপরিচালক কর্তৃক ক্ষমতা অর্পণ সংক্রান্ত একটি নতুন বিধান যোগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২২শে আগস্ট ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৬ এর বিলের খসড়া মন্ত্রিসভা বৈঠকে উত্থাপন করা হয়। ওই সময় মন্ত্রিসভা কিছু পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে আইনটিতে নীতিগত অনুমোদন দেয়। মন্ত্রিসভার পর্যবেক্ষণের আলোকে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে তিনটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া আইসিটি বিভাগের সহায়তায় অংশীজনদের নিয়ে দুইটি কর্মশালা হয়। এ কর্মশালায় খসড়া আইনটি প্রয়োজনীয় সংশোধন/পরিবর্তন ও পরিমার্জন করে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮’-এর খসড়া তৈরি করে। ওই খসড়াটি লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ ভেটিং করে গত ১৮ই জানুয়ারি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে পাঠায় তারা। ওই খসড়াটি গত ২৩শে জানুয়ারি মন্ত্রিসভা বৈঠকের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। ভেটিংকৃত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নয়টি অধ্যায় ও ৬৩টি ধারা রয়েছে। এর মধ্যে ২১টি সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আপিল ট্রাইব্যুনাল, ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম, উপাত্ত ভাণ্ডার, এজেন্সি, কম্পিউটার সিস্টেম, কাউন্সিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব, পুলিশ কর্মকর্তা, মানহানি ও ম্যালওয়্যারসহ ১২টি নতুন সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নীতিগত অনুমোদনের জন্য উত্থাপিত আইনে সাতটি অধ্যায় ও ৪৫টি ধারা ছিল। এছাড়া ৩৭টি সংজ্ঞা ছিল। এর মধ্যে আইসিটি আইনে সংজ্ঞা থাকায় বে-আইনি, আইনানুগ প্রবেশাধিকার, ই- প্রকিউরমেন্ট, ই-পেমেন্ট, উপাত্ত দূষণ, কনটেন্ট, গ্রাহক তথ্য, ট্রাফিক ডাটা, ডিজিটাল পর্নোগ্রাফিসহ ২০টি সংজ্ঞা বাদ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আপাতত আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল হচ্ছে, তবে ফিরে আসছে ৫৪ ধারা। নতুন ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮’ এ ৫৪ ধারায় অ-জামিনযোগ্য বিষয়গুলো বলা হয়েছে।  

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn