সোহেল সারোয়ার চঞ্চল-দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। শেষ পর্যন্ত অমোঘ নিয়তির কাছে হার মানতেই হলো তাঁকে। হাসপাতালের বেডে ধুঁকতে থাকা বাদল রায় পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যাবেন, এমন আশঙ্কা-মানসিক প্রস্তুতি অনেকের মধ্যেই ছিল। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি যাবেন, সেটা কারো কল্পনায় ছিল না। লিভার ক্যান্সার বাদল রায়ের শরীরে অনেক আগেই বসত গড়েছিল। যদিও দিন দশেক আগে হঠাৎ সেটি ধরা পড়ল। এমন সময় জানা গেল, যখন মরণঘাতী লিভার ক্যান্সার ফোর স্টেজে চলে গেছে। চিকিত্সার সময়ও পাওয়া যায়নি। কদিন আগে শারীরিক অবস্থার এতোই অবনতি হলো যে, কাছের মানুষদের চিনতে পারছিলেন না জাতীয় দলের সাবেক তারকা বাদল রায়। কিংবদন্তির চিরবিদায়ে ক্রীড়াঙ্গনের সবার স্মৃতির মানসপটে কত ছবির ভিড়। ১৯৭৭ সালে মোহামেডান ফুটবল দলের করুণ অবস্থা। দলগঠন করতে নতুন খেলোয়াড়দের মধ্যে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আনা হয় বাদল রায়কে। সেই যে ৭৮ সালে সাদাকালো জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন আর কোনো দিন মোহামেডান ছেড়ে চলে যাননি। মোহামেডানই ছিল তার ঘরসংসার, সব ভালোবাসা। মোহামেডানে খেললেও আবাহনীর ফুটবলার এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার ছিল নিখাদ ভালোবাসার সম্পর্ক। তারপরও লিগে খেলার জন্য কখনো আবাহনীতে নাম লেখাননি তিনি।

৮১ সালে মোহামেডানের অধিনায়কের দায়িত্ব পান বাদল রায়, প্রথম ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হয় সাদাকালো শিবির। ৮৩, ৮৪, ৮৫ সালে আবাহনী প্রথম বিভাগ লিগে হ্যাটট্টিক চ্যাম্পিয়ন হয়। পরের বছর ৮৬, ৮৭ এবং ৮৮ সালে মোহামেডানকে হ্যাটট্টিক চ্যাম্পিয়ন করেন বাদল রায়। ৮২ সালে সালাম মুর্শেদীর ২৭ গোলের রেকর্ডে বাদলের অবদান ছিল অনেক। ১৪ গোল করে নিজে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। ছিলেন জাতীয় দলের অধিনায়ক। মোহামেডান ছেড়ে ম্যানেজার হয়েছিলেন। ৯৯ কাঠমান্ডু সাফ গেমস ফুটবল খেলতে গিয়ে বাংলাদেশ দলের মধ্যে কোন্দল। ঢাকা হতে দ্রুত বাদল রায়কে পাঠানো হয়েছিল সংকট নিরসনে এবং বলা বাহুল্য তার নেতৃত্বগুণে স্বর্ণপদক নিয়ে ঢাকায় ফিরেছিল বাংলাদেশ দল। তিনি শুধু একজন কিংবদিন্ত ফুটবলারই ছিলেন না। দক্ষ সংগঠকও ছিলেন। অমায়িক এবং খুবই মিশুক। মানুষকে আকর্ষণ করার দারুণ ক্ষমতা ছিল। শত্রুও একবার তার কাছে এলে ভক্ত হয়ে যেত। অসাধারণ গুণের মানুষ ছিলেন। ক্রীড়াঙ্গনের যে কোনো অনুষ্ঠানে বাদল রায়ের বক্তব্য মুগ্ধ হয়ে শুনতেন সবাই। রবিবার সন্ধ্যায় তাই সবার মুখে মুখে ফিরছে, যেকোনো সংকটে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো ক্রীড়াঙ্গনের বজ কণ্ঠ, ফুটবলে অন্তঃপ্রাণ এক কিংবদন্তিকে হারালো বাংলাদেশ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn