ছাতক সংবাদদাতা :: কলকাতায় জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া আবদুস সামাদ ওরফে সামসেদ মিয়া ওরফে তানভীর (২৬) ছাতকের দোলারবাজার ইউনিয়নের কাটাশলা গ্রামের কলমদর আলীর ছেলে। নয় ভাই, তিন বোনের মধ্যে সে ৬ষ্ঠ। ছাতক মঈনপুর বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি পাস করার পর সামাদ মিয়া সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ভর্তি হয়। সেখান থেকে ডিপ্লোমা পাস করে। পরবর্তীতে বুয়েটে ভর্তি হয় বলে পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, আবদুস সামাদের বাবা কলমদর আলী দীর্ঘদিন মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী ছিলেন। কয়েক বছর আগে একেবারেই দেশে চলে আসেন তিনি। সামাদের চার ভাই ইতালিতে বসবাস করেন। তার পরিবার এলাকার স্বচ্ছল ও শিক্ষিত পরিবার হিসেবে পরিচিত। কলমদর আলী বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন ছিল ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে, ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু মঙ্গলবার জানতে পারি, ছেলে জঙ্গি সন্দেহে কলকাতায় গ্রেফতার হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সামাদ সিলেটে লেখাপড়া করতো। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসতো। কিন্তু প্রায় দেড় বছর আগে একদিন বাড়ি থেকে যাওয়ার পর তার কোনো খবর কেউ পাচ্ছিলো না।’বাংলাদেশ পুলিশের বরাত দিয়ে কলকাতার মিডিয়া জানিয়েছে, সামাদ আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সক্রিয় সদস্য। তবে তার জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়ার কোন খবর জানে না পরিবার। কলকাতায় গ্রেফতারের পর বিষয়টি আলোচনার জন্ম দেওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা দল আবদুস সামাদের বাড়ি পরিদর্শন করেছে। তারা তার পরিবার ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলেছে। তার ও তার পরিবারের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে সম্পৃক্ততার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ।
জানা যায়, সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে অধ্যয়নকালীন সময়ে ১ম পর্ব থেকে ৩য় পর্ব পর্যন্ত সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখা শিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুব আহমদের সাথে সিলেট পলিটেকনিকের একতা হলে থাকতো। সেখান থেকেই সে জঙ্গিবাদে ঝুঁকতে পারে বলে অনেকের ধারণা। আবদুস সামাদের প্রতিবেশী শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর আগে তাকে দেখেছিলাম। বাড়িতে খুব কমই আসতো। এলাকার মানুষ হিসেবে আমরা তাকে একজন মেধাবী ও ভদ্র ছেলে হিসেবেই জানি। সে এমনভাবে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়বে আমাদের কল্পনায়ও ছিল না।’ সামাদের সহপাঠী ও একই গ্রামের বাসিন্দা সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘এসএসসি পর্যন্ত সামাদ আমাদের সঙ্গে পড়ালেখা করেছে। পরে সে সিলেট যাওয়ায় তার সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক ছিল না। তবে দীর্ঘদিন পর পর সে অল্প সময়ের জন্য বাড়িতে আসতো। বাড়িতে আসলেও তার আচরণে আমরা তেমন কিছু লক্ষ করতে পারিনি।’
সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের সামাদের সহপাঠী মুহেল খান বলেন, ‘সামাদ খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। তার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল লাস্ট সেমিষ্টারের পরিক্ষার হলে। এরপর থেকে যোগাযোগ নেই।’ তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের শেষ দিকে সামাদের মধ্যে বেশকিছু পরিবর্তন দেখা যায়। বন্ধুবান্ধবদের সে এড়িয়ে চলতে থাকে। ২০১৪ সালের দিকে একদিন কল করে সামাদ তাকে অনলাইনে জঙ্গিবিরোধী লেখালেখি না করতে বলে। তখন থেকেই আমার সন্দেহ হয়েছিল।’ সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার বরকতুল্লাহ খান বলেন, ‘কলকাতায় আল কায়েদা জঙ্গি সন্দেহে সুনামগঞ্জের এক যুবক গ্রেফতারের খবর পাওয়ার পরই আমরা সেখানে পুলিশ পাঠিয়েছি। সামাদ সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। তার নিজের ও পারিবারিক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাও খোঁজা হচ্ছে।’
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn