আনোয়ার আলদীন- আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বেগম জিয়া গত শনিবার নেতাদেরকে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। আবার দলের হাইকমান্ড বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবেন না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার হতে হবে। সেই বিকল্প পদ্ধতির সরকারের জন্য তাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে। সংলাপ-আলোচনায় বসতে হবে। দলের সিনিয়র নেতারাও বলছেন একেক সময় একেক কথা। কেউ কেউ বলছেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে তারা নির্বাচনে যাবেন। আবার অনেকে বলছেন,পরিবেশ না হলে নির্বাচনে যাবেন না। ফলে মাঠের নেতাদের কাছে স্পষ্ট কোনো বার্তা নেই। প্রকৃতপক্ষে আগামী নির্বাচন ঘিরে বিএনপি কি করতে চায়- সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে দলের বিভিন্ন ক্যাটাগরির নেতাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করছেন বেগম জিয়া। তার এই বৈঠকের কয়েকটি উদ্দেশ্য আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো নেতা-কর্মীদের সারাদেশে সক্রিয় করা এবং আগামী কর্মকৌশল নির্ধারণ। ইতোমধ্যে জাতীয় স্থায়ী কমিটি, ২০ দলীয় জোট ও নির্বাহী কমিটির সর্বোচ্চ পদে থাকা ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার বৈঠক করেছেন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে। এরপর যুগ্মমহাসচিব-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রতিটি বৈঠকে করণীয় সম্পর্কে বেগম জিয়া নেতাদের কাছে শুনছেন বেশি, বলছেন কম।
 বিগত বৈঠকগুলোতে দায়িত্বশীল নেতারা বেগম জিয়াকে পরামর্শ দিয়েছেন বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার, নির্বাচনকালে সেনা মোতায়েন, ইসির নিরপেক্ষতা, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ না হলে নির্বাচনে যাওয়া হবে ক্ষতিকর। বেগম জিয়াকে সারাদেশ সফর করার জন্যও পরামর্শ দেন তারা। লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর সড়ক, কক্সবাজার সফর এবং সোহরাওয়ার্দীর জনসভায় বিপুল জনসমাগমের কথা তুলে ধরে নেতারা বলেছেন, এখন দেশের বিভাগগুলোতে সফর করলে পুরোপুরি চাঙ্গা হয়ে উঠবে দল।
 জানা গেছে, বেগম জিয়া দলীয় নেতাদেরকে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিলেও শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন করবে না তারা। ইভিএম বাতিল ও নির্বাচনকালে সেনা মোতায়েন না করলেও বিএনপি নির্বাচন বয়কট করবে। পাশাপাশি এই নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে দলের ঐক্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বিবদমান নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন বেগম জিয়া। দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু জানান, গত শনিবার দলের ভাইস  চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠকে দ্রুত জেলা কমিটিগুলোর পুনর্গঠন শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। যেসব জেলায় বিরোধ আছে তা চিহ্নিত করে শিগগিরই মীমাংসা করার জন্য বলেছেন। যারা দলে বিভেদ-বিশৃংখলা করবে তাদের বহিষ্কার করা হবে বলে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বৈঠকে চেয়ারপারসনের কয়েকটি জেলা সফর নিয়েও আলোচনা হয়। বুলু বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন ম্যাডাম। সংগঠন শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন। নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে, এটি খুব সাধারণ বিষয়। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নির্বাচনই চূড়ান্ত। কিন্তু নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার, সেনা মোতায়েন, ইসির নিরপেক্ষতা, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ না হলে কিভাবে নির্বাচনে যাবে?
নেতারা জানান, বেগম জিয়া নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে যার যার নির্বাচনী এলাকায় যোগাযোগ বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রত্যেক ভাইস চেয়ারম্যানকেই তাদের নিজ নিজ জেলায় সভা ও সমাবেশ করার পরামর্শ দিয়েছেন। সংগঠন গোছাতে বলেছেন। তিনি বলেছেন,নিরপেক্ষ সরকার না হলে নির্বাচন প্রহসনের হবে। নীল নকশার নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। প্রয়োজনে আন্দোলনে যাব।
 এর আগে গত বুধবার বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বেগম জিয়া। সেখানে বর্তমান সরকারের মেয়াদের তিন মাস আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবির পক্ষে জনমত গড়ে তোলা হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। সরকার দাবি না মানলে রাজপথে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানান জোটনেত্রী। রংপুরসহ ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও যাবে বিএনপি।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn