জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হলে দল কীভাবে চলবে এবং আন্দোলনের রূপরেখা কী হবে তা চূড়ান্ত করতে ব্যস্ত নীতিনির্ধারকরা। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দলের নেতৃত্ব দেওয়ার বিধান থাকলেও তিনি দেশে না থাকায় ভিন্ন চিন্তাও রয়েছে। দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ‘আপদকালে’ বিএনপির ৭ সিনিয়র নেতার সমন্বিত সিদ্ধান্তে দল চলবে। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। সব সিদ্ধান্ত স্থায়ী কমিটিতে অনুমোদন নিতে হবে। এর আগে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে দেশে এনে আপদকালীন নেতৃত্বে দেওয়ার আলোচনা উঠেছিল। তবে বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেটি হচ্ছে না। কারণ জোবায়দার বিরুদ্ধেও কয়েকটি মামলা রয়েছে। রাজনীতিতে সক্রিয় হলে তাকে বেকায়দায় পড়তে হতে পারে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ মামলার রায়ে কী হয় তা নিয়ে যেমন চিন্তিত, তেমনই তা মোকাবিলায় আন্দোলনে নামার প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি। নেতারা মনে করেন, এবার ব্যর্থ হলে দলগতভাবে বিএনপির ভবিষ্যৎ হুমকিতে পড়বে।

জানা গেছে, রায়কে কেন্দ্র করে দলের সব পর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। রোববার রাতে ২০-দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিকালে গুলশান কার্যালয়ে দলটির নেতারা যৌথসভা করেছেন। আগের দিন শনিবার রাতে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছে। আজ গুলশান কার্যালয়ে আবার স্থায়ী কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন তিনি। অনুমতি সাপেক্ষে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হতে পারে। আগামীকাল মঙ্গলবার মামলার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন দলটির নেতারা। এদিকে, রোববার দুপুরে এক আলোচনাসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অন্যায়ভাবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় হলে যে আন্দোলন হবে তা সরকার পতনের আন্দোলন হবে। আমরা তার মুক্তি দাবি করব না। সরকারের পতন করেই আমরা এদেশে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাব। এদেশের মানুষ জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। তিনি আরও বলেন, অন্যায়ভাবে যদি কোনো রায়ের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে জেলের অভ্যন্তরে ঠেলে দেওয়া হয় তা হলে বিএনপির সিনিয়র নেতারা সবাই স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তারবরণ করে জেলে যেতে প্রস্তুত।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক নেতা গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, এই মামলায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হলে, আমরা কি তখন কান্নাকাটি করব? ঘরে বসে থাকব? না, খালেদার মুক্তির আগেই সরকারের পতন ঘটাব। বিএনপি সরব হলে সিডরের চেয়েও ভয়ঙ্কর হবে। তিনি বলেন, ভিত্তিহীন মামলায় দেশনেত্রীর সাজা হলে আমরা কিছু করি বা না করি দেশের মানুষ কিছু করবে না এটা কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যায় না। গণতন্ত্রের স্বার্থেই গণতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়ার জন্য রাজপথে নেমে আসবে। খালেদা জিয়ার সাথে সাথে দেশের গণতন্ত্রও কারাবন্দি হয়ে পড়বে। দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, সরকার যে কোনোভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে বাইরে রাখতে চাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অযোগ্য করতে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে সামনে রেখে মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করবে। ইতোমধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার রাষ্ট্রদূত এবং প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার মামলা যে ভিত্তিহীন সে সম্পর্কে ব্রিফ করবেন।

জানা গেছে, জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে মাঠের নেতাদেরও মতামত নেওয়া হবে। সেখান থেকে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় কৌশল এবং রায়পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। দিনব্যাপী এই বৈঠকের জন্য আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এই বৈঠকে নেতাদের বক্তব্য শেষে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন। যদি তার সাজা হয় কীভাবে দল পরিচালিত হবে, আগামী নির্বাচনে দলের ভূমিকা কী হবে তা তুলে ধরবেন। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল এবং ৬ আগস্টের পর নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে সম্মেলনের পর ৫০২ সদস্যের এই কমিটির সভা এখন পর্যন্ত হয়নি। সূত্র: আমাদের সময়

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn