প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সোমবার এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন কামাল হোসেন, রফিক-উল হক, এম আমীর-উল ইসলাম, মইনুল হোসেন, এ এফ হাসান আরিফ ও ফিদা এম কামাল। বিবৃতিতে তারা বিচার বিভাগের উপরে নির্বাহী বিভাগের আধিপত্য ও হস্তক্ষেপমুক্ত একটি পরিবেশ তৈরি করার আহ্বান জানান। বিচারপতি এস কে সিনহা প্রধান বিচারপতি থাকাকালে আটকে থাকা বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধি তার পদত্যাগের পর গত মাসে প্রণীত হয়। ছয় আইনজীবীর বিবৃতিতে এই প্রসঙ্গ ধরে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণে মাসদার হোসেন মামলাটির কথা স্মরণ করে সংবিধানের মূল ধারার বিচ্যুতির কথা বলা হয়। “মাসদার হোসেন মামলার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি পুনঃস্মরণ করতে গিয়ে দেখা যায় যে অধস্তন আদালতের ক্ষেত্রে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিধি প্রণয়নে সংবিধানের মূলধারার বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়। এটা গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। কারণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্বকীয় অবস্থানের জন্য সংবিধান যে সুরক্ষা দিয়েছে, তা সংরক্ষণ/বাস্তবায়ন করা সর্বোচ্চ আদালতের দায়িত্ব।”

বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধি সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী করায় আপত্তি জানান এই আইনজীবীরা, যে অনুচ্ছেদটি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের অর্থাৎ কর্মবিভাগের চাকরির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বিবৃতিতে বলা হয়, “অধস্তন আদালতে বিচার বিভাগীয় পদে নিয়োগ, নিয়ন্ত্রণ, পদোন্নতি প্রদান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ শৃঙ্খলা বিধান সংক্রান্ত বিষয় সংবিধানে দুটি অনুচ্ছেদ ১১৫ ও ১১৬ তে পৃথকভাগে বিচার বিভাগের অংশে প্রণীত আছে। “তথাপি উক্ত আইন প্রণয়নের মাধ্যমে অধস্তন বিচার বিভাগের বিচারকদের নির্বাহী বিভাগের অধস্তন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যা ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির লঙ্ঘনসহ মাসদার হোসেন মামলার রায়ের সাথেও সাংঘর্ষিক।” শৃঙ্খলা বিধি প্রণয়নের পর সমালোচনা উঠলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, মাসদার হোসেন মামলায় আদালতের নির্দেশনা অনুসারেই এই শৃঙ্খলাবিধি করা হয়েছে, এতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কোনো মতেই ক্ষুণ্ন হয়নি।

এটি আটকে রাখার জন্য এককভাবে বিচারপতি সিনহাকে দায়ী করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তার পদত্যাগের পর অস্থায়ী প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারকদের সঙ্গে আলোচনা করেই বিধি প্রণয়ন হয়েছে। এর বিপরীতে ছয় আইনজীবীর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়’ এবং সুপ্রিম কোর্টের দুটি বিভাগের (আপিল বিভাগ ও হাই কোর্ট বিভাগ) সঙ্গে ‘যথাযথ পরামর্শ’ ছাড়াই তা প্রণয়ন করা হয়েছে। “অধস্তন আদালতে বিচারক নিয়োগ ও বদলি বিষয়ের বিধিমালা দীর্ঘ কালক্ষেপনের পর নির্বাহী বিভাগ ও মন্ত্রণালয় এমন একটি সময়ে স্থানান্তরিত হয়েছে, যখন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য এবং যা সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের সাথে প্রয়োজনীয় অর্থবহ পরামর্শ ব্যতীত প্রণয়ন করা হয়েছে।”

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলে আসছেন, সংবিধানে ১১৬ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির যে ক্ষমতা, সেটা ‘কেড়ে নিতে’ চাইছিলেন বিচারপতি সিনহা। সংবিধান রক্ষায় তাতে তিনি বাধা দেন। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে আছে- বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচারবিভাগীয় দায়িত্বপালনে রত ম্যাজিষ্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল- নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরীসহ) ও শৃঙ্খলাবিধান রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত থাকবে এবং সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাহা প্রযুক্ত হবে। শৃঙ্খলা বিধি প্রণয়নের প্রতিক্রিয়ায় আমীর-উল ইসলাম বলেছিলেন, “রাষ্ট্রপতি পরামর্শ করবেন সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে। এখানে কোনো মন্ত্রণালয় আসার স্কোপ নেই। তারা ১৩৩ অনুচ্ছেদের (কর্মবিভাগের নিয়োগ ও শর্তাবলি) অধীনে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে নিয়ে গেছে। “কিন্তু করবার কথা ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে। রাষ্ট্রপতি ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এখানে (প্রকাশিত গেজেটে) কোনো কাজ সম্পাদন করেছেন বলে লেখা নেই। কিন্তু ১১৬ অনুচ্ছেদের অধীনেই রুলসটি করার কথা।” বিবৃতির বিষয়ে ব্যরিস্টার আমীর বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালন উপলক্ষে আমিসহ সুপ্রিম কোর্টের ছয় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজকে বিবৃতি দিয়েছি।” প্রতি বছরের ১৮ ডিসেম্বর ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিবস’ পালন করা হবে বলে সম্প্রতি সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বিদায়ী বছর ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি থাকায় এবার তা পালিত হবে ২ জানুয়ারি। আইনজীবীদের বিবৃতিতে বলা হয়, “এমন একটা সময়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে যখন এদেশের বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ অভিভাবক প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য।” বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রথম কার্যক্রম শুরু করে বলে দিনটি স্মরণ করতে এই দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয় সুপ্রিম কোর্ট। সূত্র: বিডিনিউজ

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn