ফয়সল আহমদ রুহেল : শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মো. গুল আহমেদ। তাঁর বাবার আশা ছিল সন্তান ভাল একটা জায়গায় পৌঁছানোর। বাবার সেই স্বপ্নও পূরণ করেন। মানুষ গড়ার কারখানায় কাটান দীর্ঘ ৩১ বছর। তিনি সারা জীবন নীতি নৈতিকতার শিক্ষা দিয়েছেন। কোনো অন্যায়-অনিয়ম সহ্য করতেন না। জীবনের শেষপ্রান্তে এসেও অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দেননি। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মো. গুল আহমেদ শুধু জামালগঞ্জ নয় সুনামগঞ্জ জেলা জুড়েই পরিচিত এবং এলাকায় সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

জন্ম :  শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মো. গুল আহমেদ ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজার ইউপি’র শুকদেবপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। পিতা মো. মখছুদ আলী ও  মাতা মোছা. রুপজান বিবি। পিতার পেশা ছিল গৃহস্থী। মো. গুল আহমেদ ৫ ভাইবোনদের মধ্যে সবার ছোট। বর্তমানে তিনি জামালগঞ্জ  (তেলিয়াপাড়া) বসবাস করছেন।

শিক্ষাজীবন : মো. গুল আহমেদ ১৯৫৯ সালে নিজ গ্রামের শুকদেবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শিক্ষার প্রথম হাতেখড়ি। এখান থেকেই ১৯৬৪ সালে প্রাইমারী শিক্ষা শেষ করেন। এরপর তিনি জামালগঞ্জ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যায়ে (বর্তমান জামালগঞ্জ সরকারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়) ৬ষ্ট শ্রেণী ভর্তি হন। তারপর ৭ম শ্রেণীতে সুনামগঞ্জ এইচ,এস,পি স্কুল থেকে ভর্তি হন। ওই স্কুল থেকে ১৯৭০ সালে কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হন।

১৯৭৪ সালে কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় সুনামগঞ্জ মহাবিদ্যালয় হতে মানবিক বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৮০ সালে সুনামগঞ্জ মহাবিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।  ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএড পরীক্ষায় আপার সেকেন্ড ক্লাস পান। এরপর ১৯৯৪ সালে এম এড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আই,ই,আর থেকে সেকেন্ড ক্লাস পান। 

কর্মজীবন : মো. গুল আহমেদ ১৯৮১ সালের ১ নভেম্বর বালিজুরী এইচএ, উলুম সিনিয়ির মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক পদে প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন। ওই প্রতিষ্ঠানে তিনি ১৯৮৩ সালের ৩০ নভেম্বর ছিলেন। পরে প্রধান শিক্ষক পদে ভীমখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৮৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি যোগদান করেন। ওই বিদ্যালয়ে ২৯ বছর শিক্ষকতার পর ২০১৩ সালের ৩০ মার্চ অবসরে চলে যান। তিনি দুই প্রতিষ্ঠানে মোট ৩১ বছর শিক্ষকতা পেশায় নিষ্টার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

বর্ণাঢ্য জীবন :  মো. গুল আহমেদ তাঁর বর্ণাঢ্য শিক্ষা জীবনে এসএসসি পাশ করার পর লেখাপড়া ছেড়ে দেন। তাঁর বাবার আশা ছিল ছেলেকে ভাল একটা জায়গায় পৌঁছানো। বাবার চেষ্টায় আবার পড়ালেখা শুরু করেন তিনি। মো. গুল আহমেদ প্রধান শিক্ষক পদে যাওয়ার পর বাবার স্বপ্ন পূরণ করেন। তিনি এলাকার কয়েকজন বন্ধুকে নিজের পড়ার ফাঁকে ফাঁকে প্রাইভেট পড়িয়ে এসএসসি পাশ করান। পরে তারা পর্যায়ক্রমে ডিগ্রি পাশ করেন। শিক্ষাজীবন শেষে কেউ হাইস্কুলে কেউ প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এছাড়া মো. গুল আহমেদ শিক্ষকতা জীবনে তিনি অনেক ছাত্রকে বিনা বেতনে প্রাইভেট শিক্ষা দেন। তাঁর সুনামধন্য অনেক ছাত্র ডাক্তার, ভাল ভাল পদে আছেন। এই গর্ববোধের আত্মতৃপ্তি স্যারের জীবনের পরম প্রাপ্তি। তিনি কয়েকবার অন্য স্কুলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু অত্র এলাকার মানুষ মিছিল বের করে হেড স্যারকে এই স্কুল থেকে যেতে দেননি।  মো. গুল আহমেদ বিদ্যালয় যোগদান করার পূর্বের  স্কুলের একটা মামলা ছিল। শেষ করার জন্য ঘুষ দেন না বলে তাঁকে হয়রানি করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। এক বছরের বেতন বাতিল হয় তবুও তিনি ঘুষ দেননি।

দায়িত্ব পালন : মো. গুল আহমেদ জামালগঞ্জ উপজেলার শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন। এছাড়া নিজ উপজেলার দুর্নীতি দমন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করন। এই উপজেলায় ঢাকা আহসানিয়া মিশনের সভাপতি, বরুন রায় স্মৃতি পরিষদের সভাপতি। শুকদেবপুর দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি, রামনগর হাইস্কুলের সভাপতি ছিলেন। মো. গুল আহমেদ এর চেষ্টায় রামনগর হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ১৯৮৩ সালে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। ফলাফলে ২১৩ ভোটে ফেল করেন। 

পারিবারিক : শিক্ষক মো. গুল আহমেদ তিন সন্তানের জনক। ১ম মেয়ে ফারহানা নুছরাত ইস্পা, গণিতে মাস্টার্স সিলেট এমসি কলেজ থেকে সম্পন্ন করেন। ২য় ছেলে আহমেদ সাকী, নটরডেটম কলেজ, ঢাকা থেকে আইএসসি এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে ঢাকা বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (বিসিএস ১ম শ্রেণী )। ৩য় আহমেদ জাকী, দর্শনে অনার্স-মাস্টার্স এমসি কলেজ। বর্তমানে ব্যবসা ও এলএলবি ফাইনাল পরীক্ষার্থী। ২০২৩ সালে অবসরপ্রাপ্ত গুণী শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশন সুনামগঞ্জ জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়নে জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় জামালগঞ্জ উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলার ২৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)।

উল্লেখ্য, ২৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জনকে আর্থিক সহযোগিতা এবং জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকে ভুষিত করবে সংস্থাটি। মো. গুল আহমেদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিজের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে দেখেছেন। তাঁর শিক্ষকতা জীবনের সাফল্য ছাত্রছাত্রীরা। মো. গুল আহমেদ খুব সৎ ও আদর্শবান ব্যক্তি হিসেবে শুধু জামালগঞ্জ নয় সুনামগঞ্জ জেলা জুড়েই পরিচিত। শিক্ষকতা জীবনে হাজারো পিছুটান থাকলেও তিনি পিছপা হননি নিজের দায়িত্ব পালনে। বর্তমানে এই  আদর্শ শিক্ষক জীবন সায়াহ্নে। বিগত ৫ বছর যাবত অসুস্থ অবস্থায় বিছানায়। তিনি সব কথা ঘুছিয়ে বলতে পারেন না এবং কথাগুলোও অস্পষ্ট। অতীতের স্মরনীয় তেমন কিছু মনে আসছে না। এলাকার শিক্ষক সমাজ, বড় বড় রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিবর্গ থেকে শুরু করে এলাকার সাধারণ জনগণ এখনও দেখতে আসেন শিক্ষা গুরু মো. গুল আহমেদকে। পাশাপাশি স্যারের অনেক ছাত্রছাত্রীরা সবসময় খোঁজ খবর নেন ও সুযোগ পেলে দেখতে আসেন। আমরা আদর্শবান শিক্ষকের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn