স্বপন কুমার বর্মন-

বিশ্বম্ভরপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর বাঁধ ভেঙে ৫ হাজার হেক্টরের অধিক বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। খরচার হাওরে সমস্ত বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকের মাঝে বিরাজ করছে করুণ আহাজারি। কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। পরিবার-পরিজনের খাবার ও গো-খাদ্য নিয়ে মহাচিন্তায় পতিত হয়েছেন। সোমবার (০৩ এপ্রিল) সকাল থেকে খরচার হাওরের হরিমনের ভাঙাসহ আরো কয়েকটি পাউবো’র বাঁধ ভেঙে সমস্ত বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। হাওরপারের কৃষকদের ফসলহারা কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠছে। আঙ্গারুলী সনার হাওরসহ কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়- ৫২০০ হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে গেছে। তবে বাস্তবতায় এর পরিমাণ আরো অনেক বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

খরচার হাওরপারের মুক্তিখলা গ্রামের মছিউর রহমান জানান- ২৬ কেয়ার বোরো জমি তলিয়ে যাওয়ায় তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে সংসার চালাবেন এ নিয়ে তিনি হাওরপাড়ে বসে বসে মাথায় হাত দিয়ে কাঁদছেন। কৃষ্ণনগর গ্রামের কাজল বর্মণ জানান- তার একান্নভুক্ত পরিবারে মোট ৩৬ কেয়ার জমি চাষাবাদ করে পাউবো’র বাঁধ ভেঙে অকালে সমস্ত ফসল তলিয়ে নিয়ে যায়। এখন আমার এতোবড় পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে দিনযাপন করবো এবং গো-খাদ্যের অভাবে গরু-বাছুরকে কী খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখবো।

গত ৭-৮ দিন যাবৎ বৃষ্টি এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসা সত্বেও পাউবো, পিআইসিও ঠিকাদাররা অবহেলা, অনিয়ম-দুর্নীতি ও উদাসীনতা করে গেছে। হাওরের বাঁধ রক্ষার ব্যাপারে তাদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল না। শেষ মুহূর্তে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় কৃষক-জনতার স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁধ রক্ষার ব্যাপারে চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বাঁধের মূল ভিত্তিই ছিল দুর্বল। অবশেষে বাঁধগুলো চোখের সামনে ভেঙে যায়। এভাবে শত শত কৃষকের জমি অকালে তলিয়ে গিয়ে একমুঠো ধানও ঘরে তোলার আর কোন সুযোগ থাকলো না। পানি দ্রুত প্রবেশ করায় ক্ষতির পরিমাণ আরো ব্যাপক বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাউবো’র উদাসীনতা ও অনিয়ম-দুর্নীতির সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবি করে পাশাপাশি কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেবার জন্য এলাকায় কৃষক জনতার দাবি ওঠছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn