বিশেষ প্রতিবেদকঃ   অনেক জল্পনা কল্পনার পর শেষ হলো সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। দলের নতুন নেত্বত্বে এবার নতুন চমক এসেছে। নতুন কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব নুরুল হুদা মুকুট আর সাধারণ সম্পাদক পদে এসেছেন সহ-সভাপতি নোমান বখত পলিন। দু’জনের বাড়ী শহরের পশ্চিম পাড়ে। জেলা আওয়ামীলীগের ইতিহাসে এই মনে হয়  ২য়বার সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক দু’জনই শহরের পশ্চিম অঞ্চল তেঘরিয়া ও আরপিনগর থেকে নির্বাচিত হলেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৫৬ সালে প্রথম প্রতিষ্টা করেন সুনামগঞ্জের আওয়ামীলীগ সে দলের প্রথম সভাপতি ছিলেন তেঘরিয়ার দেওয়ান আনোয়ার রাজা চৌধুরী এবং সাধারন সম্পাদক ছিলেম আরপিন নগর পাড়ার মুহাম্মদ আবদুল হাই (পৃষ্টা ১৯২ সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রাজনীতি, কল্লোল তালুকদার) ৬৭ বছর পর তারই পুনরাবৃত্তি ঘটলো ২০২৩ সালের ফেব্রোয়ারীতে।

সম্মেলনের আগে মুকুট ও পলিন আলোচনায় থাকলেও বেশীর ভাগ নেতাকর্মিদের ধারনা ছিলো হয়তো পুরাতন নের্তৃত্ব বহাল থাকবে। দলের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার পরিবর্তনের ধারা বাহিকতায় সুনামগঞ্জের জেলা নের্তৃত্বেরও পরিবর্তন হলো বলে অনেকে ভাবছেন। নতুন নেতাদের নাম ঘোষনার সাথেসাথে শান্তনা পুরুস্কার  হিসাবে সদ্য সাবেক সাধারন সম্পাদক জাতীয় কমিটির সদস্য পদে ও সদ্য সাবেক সভাপতি বর্ষিয়ান নেতা আলহাজ্ব মতিউর রহমানকে কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কাউন্সিলর সদস্য  হিসাবে ঘোষনা দেন কেন্দ্রীয় সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সম্মেলনের প্রধান অতিথি আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এই ঘোষনাকে কেউকেউ মনে করছেন ব্যারিস্টার ইমন ও মতিউর রহমানের জন্য এই পদ ছিলো শান্তনা পুরুস্কার। যদিও ব্যারিস্টার ইমনের প্রশ্নের উত্তরে প্রধান অতিথি বলেন, “কেন্দ্রীয় কমিটির উপরে ক্ষমতা জাতীয় কমিটির” কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্র জাতীয় কমিটি কিংবা উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্যদের কার্যত তেমন কোন ক্ষমতা নেই। দলের সিদ্ধান্ত গ্রহনে তাদের কোন উল্লেখযোগ্য ভুমিকা নেই। জাতীয় কমিটি ও উপদেষ্টা কাউন্সিলে সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকে পাঠিয়ে দিয়ে আসলে স্থানীয় ভাবে তাদেরকে নির্বাসিত করা হয়েছে বলে ধরা যায়। জেলা কমিটিতে পদ পদবী পাওয়ার তাদের আর কোন সুযোগ থাকলো না।

দীর্ঘ দিন দলের সাথে আনুগত্য ও বর্তমান জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি থাকার কারনে সভাপতি হিসাবে মুকুটের দাবীর গ্রহন যোগ্যতা থাকলেও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পলিন ছিলেন সে ক্ষেত্রে একদম নতুন মুখ। মূলতঃ তিনি একজন আমেরিকা প্রবাসী। সেখানকার নাগরিক হিসাবে অনেক বছর কাটিয়ে কয়েক বছর আগে দেশে এসে রাজনীতিতে সচল হয়েছেন। বিগত কমিটিতে তার বড় ভাই মরহুম আইয়ূব বখত জগলুল সহ-সভাপতি ছিলেন। বেশী দিন হয়নি তাকে তার ভাইয়ের শূন্য পদে কমিটিতে”কো-অপ” করা হয়। প্রবাসী হবার আগে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। আওয়ামীলীগের জেলা কমিটিতে স্থান পাওয়ায় ডলারের মায়া ছেড়ে তিনি দলের কর্মকান্ডে  সক্রিয় হন। তার সাম্প্রতিক কর্মকান্ড হয়তো হাই কমান্ডের নজরে  পড়ে। সে কারণে তরুন বয়সে আওয়ামীলীগের মতো এতো বিরাট দলের গুরুত্বপুর্ণ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পদে তিনি স্থান করে নিতে পেরেছেন।

অনেকে হয়তো মনে করতে পারেন সম্পাদক হবার পিছনে তার উপর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের আশীর্বাদ  ছিলো।  তবে সম্মেলন মঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতা ওবাদুল কাদের কাছে তিনি নিজেকে যে ভাবে পরিচয় দিতে শুনা গেছে তাতে স্পষ্টতো বুঝা যায় তাদের একে অপরের সাথে হয়তো কখনো ঘনিষ্ঠ ভাবে তেমন সাক্ষাৎ হয়নি। পলিনের সাধারণ সম্পাদক হবার পিছনে দলের প্রতি তাদের পারিবারিক অবদান এবং স্বাধীনতার পক্ষে ভুমিকাও অগ্রাধিকার পেয়েছে বলে রাজনৈতিক সচেতনরা মনে করছেন।

দীর্ঘ সাত বছরপর অনুষ্ঠিত  হলো দলের জেলা সম্মেলন। শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাপ্ত হলো। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান সভাপতিত্বে অনুষ্টিত এই সভার সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও শফিউল আলম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুশফিক হোসেন চৌধুরী ও আজিজুস সামাদ আজাদ, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন, সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য শামীমা আক্তার খানম প্রমুখ।সম্মেলন উপলক্ষে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হন নেতা-কর্মীরা। দুপুর ১২টার আগেই পুরো মাঠ নেতা-কর্মীদের সরব উপস্থিতিতে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের পর সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। এরপর আর সম্মেলন হয়নি। ওই সম্মেলনের দিন দলের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জেলা কমিটির সভাপতি পদে মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পদে এনামুল কবির ওরফে ইমনের নাম ঘোষণা করেন। সাবেক সংসদ সদস্য মতিউর রহমান তখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন। এনামুল কবির ছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক। এর প্রায় দুই বছর পর ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn