অভিবাসন নিয়মের বিতর্কিত বিষয়গুলো গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে যুক্তরাজ্য। গত এক সপ্তাহে অভিবাসন নীতির দুটি বিতর্কিত বিষয় বাদ দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার নবনিযুক্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ জানিয়েছেন, অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাংক হিসাব বন্ধ করার যে নিয়ম চালু করা হয়েছিল, সেটি স্থগিত করা হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে চালু হওয়া ওই নিয়মের কারণে অভিবাসন বিভাগের প্রদান করা তালিকা দেখে অবৈধ ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব বন্ধ করতে হতো ব্যাংকগুলোকে। এর আগে গত সপ্তাহে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ (এনএইচএস) এবং অভিবাসন বিভাগের (হোম অফিস) মধ্যকার বিতর্কিত চুক্তিটি বাতিল ঘোষণা করা হয়। ওই চুক্তির আওতায় অভিবাসন বিভাগ অবৈধ অভিবাসীরা চিকিৎসা নিচ্ছে কি না, সেটি নজরদারি করত। স্বাস্থ্য বিভাগের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সম্ভাব্য অবৈধ অভিবাসীদের অবস্থান চিহ্নিত করে তাঁদের পাকড়াও করত। দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ে এসব বিতর্কিত নিয়ম প্রণয়ন করেছিলেন। অবৈধ অভিবাসীরা যাতে যুক্তরাজ্যে বসবাস করতে না পারেন, সে জন্য তিনি বাসাভাড়া, চিকিৎসা, চাকরি, ব্যাংক হিসাব খোলাসহ যাবতীয় কাজে অভিবাসনের বৈধতা যাচাইয়ের নিয়ম বাধ্যতামূলক করেন। তাঁর চালু করা অভিবাসন নীতির মূল্য লক্ষ্যই ছিল অবৈধদের জন্য ‘বৈরী পরিবেশ’ সৃষ্টি করা। যাতে অবৈধ ব্যক্তিরা বাঁচার উপায় না পেয়ে নিজ থেকেই যুক্তরাজ্য ছাড়ে।

থেরেসা মের ওই সব বিতর্কিত নিয়মের কারণে যুক্তরাজ্যে দশকের পর দশক ধরে বসবাস করছেন, এমন অনেকেই অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হন এবং চরম ভোগান্তিতে পড়েন। উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারি নামে পরিচিত এ ঘটনা যুক্তরাজ্যের বিতর্কিত অভিবাসন নীতির অমানবিকতা ও নিষ্ঠুরতাকে সামনে নিয়ে আসে। উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির ক্ষত সামাল দিতে সরকার গত এক সপ্তাহে দুটি বিতর্কিত নিয়ম বাদ দিল। গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সামনে প্রথমবারের মতো হাজির হন নবনিযুক্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। তিনি বলেন, উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারি থেকে দেখা গেছে, ভুলবশত অনেক বৈধ নাগরিক অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। অবৈধ ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব বন্ধের ক্ষেত্রেও একই ঝুঁকি রয়েছে। তাই নিয়মটি ইতিমধ্যে স্থগিত করেছেন তিনি। সাজিদ জাভিদ অভিবাসন নীতিকে ন্যায়সংগত করে ঢেলে সাজানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির জের ধরে ইতিমধ্যে অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নের গোপন লক্ষ্যও বাদ দিয়েছে সরকার। মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটি এত দিন বিদেশি সহপাঠীদের বিষয়ে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের মতামত চেয়ে একটি জরিপ চালাত। ওই জরিপকে অনৈতিক আখ্যা দিয়ে বাতিল ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটিগুলোর সংগঠন ‘ইউনিভার্সিটি ইউকে’। মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটি সরকারের স্বরাষ্ট্র বিভাগকে অভিবাসন নীতি প্রণয়নে পরামর্শ দেয়। বিতর্কিত অভিবাসন নীতিগুলোর বিষয়ে সংগঠনটির সমর্থন ছিল। ‘ইউনিভার্সিটি ইউকে’র পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই জরিপে মারাত্মক ত্রুটি রয়েছে। স্থানীয় শিক্ষার্থীরা তাঁদের অশ্বেতাঙ্গ সব সহপাঠীকে বিদেশি শিক্ষার্থী বলে ধরে নিতে পারেন। অথচ অশ্বেতাঙ্গ অনেকেই ব্রিটিশ নাগরিক। তা ছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি যেসব স্থানীয় শিক্ষার্থী বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন, তাঁরাই জরিপে বেশি বেশি অংশ নেন। সব মিলিয়ে জরিপটির উদ্দেশ্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিন্ন চোখে দেখা। তাই ইউনিভার্সিটিগুলো মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটির এই জরিপের কাজে আর থাকছে না। মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটি বলেছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্য করা জরিপের উদ্দেশ্য নয়। তবে জরিপটির কাজ ইতিমধ্যে গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে তারা স্বীকার করে

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn