অবশেষে মুঠো খুলে দেখাল যুক্তরাজ্য। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বিচ্ছেদের বিল (ব্রেক্সিট নামে পরিচিত) হিসেবে চার হাজার কোটি পাউন্ড পর্যন্ত দিতে রাজি দেশটি। আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বিচ্ছেদ বিল সম্পর্কে মনোভাব জানাতে একপ্রকার সময় বেঁধে দিয়েছিল ইইউ। এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদের সভায় বিচ্ছেদ বিল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয় থেরেসা মের সরকার। এই পরিমাণ অর্থে ইইউ কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হয় কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়। বিচ্ছেদ-পরবর্তী বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে সমঝোতা শুরু করতে মরিয়া যুক্তরাজ্য। কিন্তু সেই সমঝোতা শুরুর আগে বিচ্ছেদ বিল, যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ইইউ নাগরিকদের ভবিষ্যৎ ও আয়ারল্যান্ড সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে চূড়ান্ত সমাধানের শর্ত দেয় ইইউ। এর মধ্যে দুটি বিষয়ে অগ্রগতি হলেও আলোচনা থমকে যায় ব্রেক্সিট বিল প্রশ্নে। ইইউর বাজেটে যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুত অর্থ, যুক্তরাজ্যস্থ ইইউর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে স্থানান্তর এবং যুক্তরাজ্যে কর্মরত ইইউ কর্মীদের পেনশনসহ নানা খরচ যুক্ত এই ব্রেক্সিট বিলে। ইইউর পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট অর্থ চাওয়া হয়নি। যুক্তরাজ্যও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু জানায়নি এত দিন। তবে এর আগে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ইইউ বাজেটে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতিশ্রুত অর্থ দিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন, যার পরিমাণ প্রায় দুই হাজার কোটি পাউন্ড।

যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত নিতে হবে ইইউভুক্ত দেশগুলোর সম্মেলনে। ব্রেক্সিট বিল নিয়ে অগ্রগতি না হওয়ায় গত মাসে অনুষ্ঠিত ইইউ সম্মেলনে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর আবার বসছে ২৮ দেশের এই সম্মেলন। এ সম্মেলনে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা শুরুর অনুমোদন পেতে ব্রেক্সিট বিল নিয়ে সমঝোতায় আসার সময় বেঁধে দেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। বিবিসি জানায়, ব্রেক্সিট বিল নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব বা ঘোষণা দেবে না যুক্তরাজ্য। সমঝোতার সফল পরিণতির শর্তে কেবল এই অর্থ দেবে দেশটি। তবে সব অনিশ্চয়তা ছাপিয়ে ব্রেক্সিট কার্যকরের পথেই হাঁটছে উভয় পক্ষ। সোমবার সদস্যভুক্ত ২৭টি দেশের (যুক্তরাজ্য ছাড়া) ইউরোপিয়ানবিষয়ক মন্ত্রীরা ভোটাভুটির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত দুটি প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ গন্তব্য নির্ধারণ করেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্রেক্সিটের পর ইউরোপিয়ান ব্যাংকিং অথরিটির কার্যালয় যাবে ফ্রান্সের প্যারিসে এবং ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি যাবে হল্যান্ডের আমস্টারডামে। যাত্রার শুরু থেকে প্রতিষ্ঠান দুটির কার্যালয় লন্ডনে আছে। ২০১১ সালে চালু হওয়া ব্যাংকিং অথরিটিতে ১৫০ জন লোক কর্মরত। আর ১৯৯৫ সালে চালু হওয়া মেডিসিন এজেন্সিতে কাজ করেন ৯ শতাধিক কর্মী। এসব কর্মসংস্থানের পাশাপাশি প্রতিবছর প্রতিষ্ঠান দুটিতে আসা হাজারো দর্শনার্থীকেও হারাবে লন্ডন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn