মুহিত চৌধুরী:দেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সিলেটে এই সংগঠনটি তাদের আদর্শ ও গতিপথ কি হারিয়ে ফেলেছে? এমন প্রশ্ন আজ সুধী জনের। মাঠে নেই ছাত্রদল নেই শিবির আছে একছত্র আধিপত্য ছাত্রলীগের। তা হলে কেন তারা একে অন্যকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করছে? নি:শেষ করে দিচ্ছে অসংখ্য মা-বাবার স্বপ্ন? সিলেটের সাবেক ছাত্র নেতারাও ছাত্রলীগের বর্তমান কর্মকান্ডে হতাশা প্রকাশ করেছেন। ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে দেখা যায় সিলেটে অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে কমপক্ষে ৯ জন ছাত্রলীগকর্মী তাদের নিজ সংগঠনের কর্মীদের হাতে খুন হয়েছে। তারা হলেন উদেয়েন্দু সিংহ পলাশ, জাকারিয়া মোহাম্মদ মাসুম, আব্দুল্লাহ অন্তর, কাজী হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুল আলী, আব্দুল্লাহ ওরফে কচি, সুমন চন্দ্র দাশ এবং তানিম খান। ২০১০ সালের ১২ জুলাই সিলেট নগরীর টিলাগড়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে ছুরিকাঘাতে খুন হন উদেয়েন্দু সিংহ পলাশ। এমসি কলেজের গণিত বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগকর্মী ছিলেন উদয়েন্দু সিংহ পলাশ। ২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটাই ছিল ছাত্রলীগের হাতে প্রথম প্রাণহানীর ঘটনা। ১৩ সেপটেম্বর ২০১৭ ছাত্রলীগের হাতে খুন হলেন জাকারিয়া মোহাম্মদ মাসুম (২২)। ছোট ভাইকে জিম্মি করে মোবাইল ফোনে ডেকে এনে নিজ দলের ক্যাডাররা তাকে খুন করে।১০ জুলাই ২০১৬ সালে নগরীর পাঠানটুলায় একটি বাসার দখল নিয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হামলায় খুন হন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আব্দুল্লাহ অন্তর।

২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি সিলেট সফরে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগের দিন নিজ দলের ক্যাডারদের হামলায় নিহত হন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ ৪র্থ বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী কাজী হাবিবুর রহমান হাবিব। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৪ ছাত্রকে বহিস্কার করে। ২০১৫ সালের ১২ আগস্ট অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে মদন মোহন কলেজে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী আবদুল আলী। এ ঘটনায় পুলিশ ছাত্রলীগ ক্যাডার প্রণজিৎ দাশ ও আঙ্গুর মিয়াকে গ্রেফতার করে। ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই মদিনা মার্কেটে একটি অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল নিয়ে নিজ দলের ক্যাডারদের হামলায় খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল্লাহ ওরফে কচি। ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর শাহাজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মী সুমন চন্দ্র দাশ। সর্বশেষ গতকাল ৭ জানুয়ারি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সিলেটের টিলাগড়ে প্রতিপক্ষের হামলায় ছাত্রলীগ কর্মী তানিম খান নিহত হোন।

২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর প্রকাশ্য দিবালোকে টিলাগড় মসজিদ সংলগ্ন রাস্তার সামনে অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে ছাত্রলীগের খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী ওমর আহমদ মিয়াদ। নিহত মিয়াদ সিলেট এমসি কলেজে বিএসএস এবং লিডিং ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ের ছাত্র ছিলেন। সিলেটের আওয়ামীলীগ নেতারা এ সব হত্যাকান্ডের জন্য বিব্রত বোধ করছেন। তারা বলছেন এইসব হত্যাকান্ডের পিছনে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য নেই। মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান দৈনিকসিলেটডটকমকে বলেন, ‘সত্যি বলতে কি আমরা খুবই বিব্রত। এতোগুলো মেধাবী প্রাণ এভাবে অকালে ঝরে যাবে। কী জবাব দেবো মা-বাবাদের যারা তাদের নাড়ী ছেঁড়া ধন হারিয়েছে। তিনি বলেন আরো বলেন, এ অবস্থা মেনে নেয়া যায়না। রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবে কিন্ত্তু প্রতিহিংসা থাকা উচিৎ নয়। আমি আশাবাদী অচিরেই আমার অভিভাবক, ছাত্রনেতা, রাজনীতিবিদ,আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই অবস্থার উন্নতি ঘটাবো। মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আসাদ উদ্দিন আহমদ দৈনিকসিলেটডটকমকে বলেন, এসব হত্যাকান্ড সত্যি দু:খজনক। দ্রুত এগুলো বন্ধ হওয়া জরুরী। আগামী ৩০ জানয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিলেট আসছেন তাই ৩০ তারিখের পর আমার সকল পক্ষকে যুক্ত করে এই সমস্যার একটা সমাধান খুজে বের করবো। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকেও সম্পৃক্ত করা হবে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন,সিলেটে ছাত্রলীগ মুলত ৫ ভাগে বিভক্ত এরা হলো রঞ্জিতগ্রুপ, আজাদগ্রুপ, আসাদগ্রুপ, নাদেলগ্রুপ, নাসিরগ্রুপ। এখানে দলীয় স্বার্থ থেকে ব্যক্তি স্বার্থইকেই প্রাধান্য দেয় হয়। আর এজন্য দলের ভাবমুর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তারা আরো বলেন নিজেদের মধ্যে এই অনৈক্য থাকার কারনে এক সময় প্রতিক্রিয়াশীল চক্র মাথাঝাড়া দিয়ে উঠতে পারে। একজন অভিভাবক দু:খভারাক্রান্ত কন্ঠে বলেন, আমারা সন্তানদের শিক্ষার জন্য স্কুল-কলেজে পাঠাই। ভাইয়ের বুকে ভাইয়ের ছুরি চালানোর জন্য নয়। বন্ধ হোক এই হত্যাযজ্ঞ, বন্ধ হোক রাজনীতির এই নির্মম খেলা।

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn