নাসরির রুমু :

পত্রিকা খুললেই প্রতিদিনের সব খবরের মাঝে একটি খবর সব সময় চোখে পডে সেটি হলো ধর্ষন খবর , যেনো সাধারণ নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এটা প্রতিরোধে প্রশাসনের কি পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটা প্রশাসনই বলতে পারেন ।আর আমরা দেখছি প্রতিদিনের পত্রিকায় প্রতিকারের করুন চিত্র। কিংবা আমরা সাধারণ জনগন কিভাবে তা গ্রহন করছি , সেটাও জানার বিষয়। গত কয়েকদিন আগের ঘটনা চট্টগ্রামের আকবর শাহ এলাকায় নয় বছরের শিশু মীম গণ ধর্ষনের শিকার আর গতকাল শুনেছি ঝিনাইদহের দশম ছাত্রী গণ ধর্ষনের শিকার , কতটা মর্মান্তিক আর জগন্যতম ঘৃন্য কাজ সেটা প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নেই। একাত্তর সালে জন্ম হয়নি বলে পাক সেনাদের এ রকম ঘৃন্যকর্ম চোখে দেখিনি শুধু শুনেছি। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মে আজ বার বার দেখছি সেই পৈশাচিক বর্বর কাহিনী গণ ধর্ষন, যা বার বার একাত্তরের হিংস্র পাকসেনাদের মনে করিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে ভাবি আসলে কি আমরা স্বাধীন? বাংলা কি সত্যি আমার , তোমার? এখনো আমাদের দেশের নারী , শিশুরা সেই ধরনের বিকার গ্রস্হ নর পশুদের দ্বারা আক্রান্ত। ভাবছি পাকিস্তানি নর পশুরা তাদের ভ্রুন এই মাটিতে রেখে গিয়েছিল কিনা?তা না হলে এই পশুদের রূপ বাংলার মানুষের মাঝে কেনো?

এরা কারা?
এর কোন সংস্কৃতির মানব?

হ্যা , এরা বাংলার মানুষ, তবে বাংলার সংস্কৃতিতে গড়ে ওঠা মানুষ নয়, আমাদের সংস্কৃতি এখন আর আগের মতো নেই , কুলুষিত অন্ধকার সংস্কৃতি। রক্ষক হয়েছে ভক্ষক।আমরা আজ অপসংস্কৃতির হাওয়ায় মাতোয়ারা।ইয়াবা সংস্কৃতিতে আমরা আজ আমাদের প্রজন্মকে ঠেলে দিয়েছি। ইয়াবায় আসক্ত আমাদের তরুণ প্রজন্ম।যে দেশের তরুণ সমাজ মাদকাসক্ত সে দেশের ভবিষ্যত কতটা অন্ধকার , তা আপনার আমার সবার বোধগম্য।একটু ভাবলে মনে হয় ,গভীর ভাবে ষড়যন্ত্রের নীল নকশা তৈরি করছে কেউ , যাতে আমরা ধ্বংসের দিকে ধীরে ধীরে ধাবিত হতে পারি।

আমাদের দেশে ধনী , গরীব সব স্তরের সন্তান মাদক ইয়াবার শিকার । পারিবারিক অশান্তি, বেপোয়ারা জীবন, প্রেমে ব্যার্থ মানসিক বিষন্নতা কারন যা হোক না কেনো , এক কথায় মানসিক হতাশার কারনে বেশির ভাগ মানুষ মাদকাসক্ত হয়ে পডে কিংবা কেউ বেছে নেয় আত্মহনন। সারা বিশ্বে ৫ থেকে ১৭ শতাংশ মানুষ বিষন্নতায় ভুগছে। ওয়ার্ল্ড মেন্টাল হেলথ সার্ভের প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতি বিশজন প্রাপ্ত বয়স্ক নর নারীর মধ্যে একজন বিষন্নতায় ভুগছে। বাংলাদেশে চার দশমিক ছয় শতাংশ মানুষ বিষন্নতায় ভুগছে।শিশুদের মধ্যে এক শতাংশ। বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ মানসিক চাপ গ্রস্ত অর্থাৎ বিষন্নতায় আক্রান্ত।এই রোগে আক্রান্ত পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি। মানসিক বিষন্নতা তরুন প্রজন্মের মাঝে প্রকট ভাবে দেখা যায় । বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রেমে ব্যর্থ তরুন তরুনী বিষন্নতায় ভুগে অনেক বেশি।
প্রেম , ভালবাসা কি ?

এই উপলব্ধি বোঝার আগে কিশোর বয়সের প্রেম , ভালবাসা নিয়ে মাতামাতি। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষন এটি সহজাত স্বাভাবিক। কিন্তু নেই এর বিশ্লেষন , বোঝার গভীরতা। শুধু আবেগ আর শরীর স্পর্শ প্রেম, যে প্রেমে নেই স্নিগ্ধতা কিংবা পবিত্রতা। শরীরের আবেগের যে প্রেম সে প্রেমের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার আগেই অল্প পথে শেষ হয়ে যায় । এখন ভালবাসার ক্ষেত্রে যোগাযোগ মাধ্যম গুলো অনেক আধুনিক। খুব সহজে প্রিয় মানুষটির খবরাখবর পেতে কষ্ট হয় না মোটেও। বলতে গেলে হাতের মুঠো ফোনের মধ্যে আবদ্ধ। অথচ যত বেশি যোগাযোগ তত বেশি অবিশ্বাস, দ্বন্দ , প্রতারণা। একের অধিক সম্পর্কের মহা উৎসব। অবাক হওয়ার বিষয় হলো এখনকার আধুনিকতায় ব্রেকাপ শব্দটি খুব সহজে স্মার্টলি প্রকাশ করা হয়,এরপর আবার আরেকটি সম্পর্কে নতুন মাত্রায় জডিয়ে পডে, যেনো মন আর শরীর নিয়ে ছেলেখেলা।এ ধরনের সম্পর্কের মানসিক চাপ অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পডে । মেনে নিতে পারে না ছল ছাতুরির এই খেলা , আক্রান্ত হয় মানসিক বিষন্নতায় । বেছে নেয় মাদক, কেউ আত্মহনন , কেউবা প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলে- যার পরিণতিতে কঠিন সব অপরাধ করে বসে। যার উদাহরণ -কয়েকদিন আগের ঘটনা , ইডেন কলেজের ছাত্রী তার প্রতারক প্রেমিককে খুন করে ছুরি হাতে দাঁডিয়ে পুলিশের অপেক্ষা করছিল । কতটা মানসিক বিষাদ গ্রস্হ হলে মানুষ এত বড় কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারে তা একটু চিন্তা করলে বোঝা যায়।এ ধরনের ঘটনা একটা দুটো নয় , হাজার হাজার আছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যে বিষয়টি সেটা হলো প্রেম করতে রাজি না হলে এসিড ছুঁড়ে মারা, কিডনাপ কিংবা ধর্ষন করে খুন । কি ভয়ঙ্কর রূপ?এসবের মূল কারন হচ্ছে মানসিক শিক্ষার অভাব ,যা সে তার পরিবার , স্কুল , আশে পাশের পরিবেশ থেকে পাওয়ার কথা।

আমাদের দেশে প্রেম ভালবাসার বিষয়টিকে খুব আড় চোখে দেখে , অথচ এ পথে চলেনি এমন মানুষের সংখ্যা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এটা একটা স্বাভাবিক বিষয। ভাললাগা , ভালবাসা থাকবে। এটা বয়:সন্ধিকালের পর ছেলে মেয়ের বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষন থাকা স্বাভাবিক।একে অন্যের প্রতি এই টান অনুভব হয় ।, কারো বাল্যকালে আবার কারো যৌবনে ,এমনও হয়েছে বৃদ্ধ বয়সে প্রেমে পডেছে। তবে সেটা সুস্হ মানসিক প্রেম। কিন্তু ছোটবেলা থেকে ছেলেমেয়েদের এ ব্যাপারে কঠিন শাসনের মধ্যে রাখা হয়, এমন ভাবে শাসন করা হয় যেনো এটি কঠিন অপরাধ।” নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকর্ষন “ – মানুষের সহজাত অভ্যাস। তাই স্কুল বয়স থেকে অনেকে স্কুল ফাঁকি দিয়ে , কেউ কলেজে কিংবা কেউ কর্মক্ষেত্রে গিয়ে প্রেম করে। কঠিন শাসনে নয় , যদি তাদের স্নেহের স্পর্শে বোঝানো যায় , তাহলে সে মা বাবার প্রতি মিথ্যে আচরন করবে না , করবে না ছল চাতুরি।

ভালবাসা কখনও অপরাধ না। তবে যদি সেখানে সম্মান, বিশ্বাস , সততা এবং একে অন্যের প্রতি যত্নশীল থাকে। স্নিগ্ধতা যা শরীর কে নয় মনকে স্পর্শ করে।আমরা যদি আমাদের পরিবার , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এসব বিষয় নিয়ে সন্তানদের কাউনসিলিং করি , তাদের বোঝানো হয় তাহলে এ বয়সের ছেলেমেয়েরা বিপদগ্রস্ত হবে না। এটা শাসন করার বিষয় না এবং অপরাধ না। প্রত্যেক মানুষের ভাললাগা বা ভালবাসার অধিকার আছে। তবে আমাদের সন্তানদের এসব বিষয় নিয়ে পরিবার থেকে এমন ভাবে বোঝানো উচিত যাতে তারা তাদের জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং অপরাধ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। দরকার সন্তানের প্রতি ভালবাসা তবে কঠিন শাসন নয়। কারন ভালবাসা সৃষ্টিকর্তার দান ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn