ফাহমিদা নবী-জীবনের প্রত্যেকটা টুকরো টুকরো ঘটনাই একেকটা অনুধাবন। কেউ বোঝে, কেউ বোঝে না। স্বভাবের মিলে ভাব হয়, কিন্তু বন্ধুত্ব বা ঘর স্থায়ী হয় কি? অনুধাবন এক বিশাল সম্পদ। তার গভীরেই যদি যেতে পারি আমরা, তাহলেই সবটাই জয়ের গল্প…। কিন্তু জয়টাকে ধরে রাখার জন্য যে আয়োজন, তার জন্য আমরা কি সঠিক কাজটা করছি?নানা রকম মানুষের সঙ্গে মানুষ সম্পৃক্ত, কেউ মা, কেউ বাবা, কেউ স্বামী-স্ত্রী, কেউ সন্তান, কেউ ভাইবোন, কেউবা বন্ধু অথবা কেউবা আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতজন। নানান মন, নানান পরিস্থিতি, ধৈর্য সহ্যের বিষয় জড়িত। নানান মতের মানুষ থাকে একই পরিবারের মধ্যেও। একই ছাদের নিচে থাকা মানুষের মধ্যে আচরণগত কিছু ছাড় তাই তো ভীষণ প্রয়োজন। সেই আগের দিন তো এখন নেই, নেই যৌথ পরিবার! এক টুকরা ছাদের খুশি এখন দুর্লভ বিষয়। পরিবারগুলো ছোট ছোট হয়ে গেছে। সেখানে দুজন মানুষের মাথার ছায়া এখন নিজেরাই। তাই তো আরো বুদ্ধিদীপ্তভাবে সহজ শান্তির পরশ বোলানো প্রয়োজন। মানুষ তো ভালো থাকতেই চায়, সমাজ সভ্যতার সৌন্দর্যকে নিয়েই, ভালোই বাসতে চায়, আনন্দেই থাকতে চায়। দুঃখকে জয় করতে চায়। কিছু মানুষ সমমনা, কিছু মানুষ সমমনা নয়, তবু চলতে হয় একই সঙ্গে। একই সঙ্গে নিত্যদিনে চলতে হয়, বুঝতে হবে তীব্র ভালোবাসাবোধ তাদের এক করে রাখে।

কিন্তু বিতর্ক বাঁধে কখন?
যখন বোঝাপড়াহীনতায় জীবন চলতে থাকে তখনই। যখন কেউ একজন অকারণ কিছু জ্ঞান বা উপদেশের পাহাড় জমায়। তখন অন্যপক্ষ কখনও বোঝাপড়া করে, কখনও মেনে নিয়ে, কখনও সহ্য ক্ষমতা বাড়িয়ে চলতে থাকে। মানুষের সহ্য ক্ষমতার একটা বিশাল ভূমিকা আছে, আবার এই সহ্য ক্ষমতার বিপরীতমুখী বেদনাও বিদ্যমান। এই সহ্য ক্ষমতাকে কতক্ষণ ধরে রাখা সম্ভব? মানুষ মাত্রই মিলেমিশে থাকতে চায়। মানসিকভাবে উন্নত মানুষ তার নীতির ঘরকে উন্নত করে, তাকে ঘিরেই সবার সঙ্গে ভালো থাকার চেষ্টা করে। আর কিছু মানুষ থাকে যারা সহজকে সহজভাবে দেখতে বা গ্রহণ করতে পছন্দ করে না, তখনই গণ্ডগোলটা লেগে যায় অকারণেই। যেসব মানুষ, সবসময় অন্যকে উপদেশ বা জ্ঞান দিতে ভালোবাসেন, তারা নিজে উপদেশ শুনতে পছন্দ করেন না। এই অমিলটা বোঝাপড়ার। অনেক সময়, বেশি উপদেশ বা জ্ঞান ব্যর্থতাও বয়ে আনে, যাকে উপদেশ দিচ্ছে, তার একই কথা বারবার শোনার অবস্থা সবসময় বিদ্যমান থাকতে নাও পারে। কতবার একই বক্তব্য মাথায় নেওয়া সম্ভব? কেনইবা বারবার একই কথা শোনাতে হবে?
যে বোঝার সে তো একবারে না হোক, দু’তিনবার শোনার পর সচেতন হবেই। বিশ্বাস রাখতে হবে। তাকে বারবার সচেতনতার জ্ঞান দিতেই থাকলে, সে তো স্বাভাবিক আচরণেই ভয় পেয়ে যাবে। সাধারণ কথা বলাটাও বন্ধ হয়ে যাবে। একসঙ্গে বসবাসে একসময় বিরক্তি নীরবে ঠাঁই নেবে। কী বলা উচিত আর কী বলা উচিত নয়, তাই ভাবতেই যদি জীবন চলে যায়, তাহলে একই ছাদের নিচে একসঙ্গে থাকাটা কঠিন হয়ে যায় একসময়। এই সমস্যাটা কেন হয়? তাহলে যে উপদেশ দিচ্ছে তারই কি অনুধাবনের সমস্যা? সে কি আত্মনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে? এতো অভিযোগ কেন? ভালোবাসা কি তার কাছে ব্যর্থ কোনও গল্প? নাকি ভালোবাসায় ফাঁকিটা তারই? নাকি নিজের মতো করেই পুরো ঘরকে আত্মকেন্দ্রিকতায় ভরে রাখতে চায়? শুধু নিজস্ব মতামতই প্রধান? হারানোর ভয় কি তাকে তাড়া করে বেড়ায়? যে হারানোর ভয়ে চলে সেই তো সব হারায়!
সম্পর্কের সরলতা কি সেখানে কঠিন কোনও ব্যাকরণ তৈরি করছে? সহ্য করা কঠিন হয়ে যায় এই সম্পর্কগুলো। বোঝাপড়ার অবস্থান ক্ষীণ হয়ে পড়ছে? সহ্য ক্ষমতার অবস্থান কোথায়? বেশি সহ্য করলে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তা হলো তিক্ততা। যখন মানুষ সহ্যের তিক্ততায় পৌঁছে যায়, তখনই অতিরিক্ত শাসনে থাকা মানুষগুলো, খুব ব্যর্থ হয়ে যায় অথবা সাহসী উন্নতির দিকে এগিয়ে যায়। মানুষের জীবনে ন্যায় হয় বা হয় না। তবে যেকোনও একটা হয়, খুব ভালো অথবা মন্দ। ভালোবাসার সম্পর্কের জন্যই তো মানুষ প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে। খুব আপন মানুষদের সঙ্গে! বেদনাদায়ক হলেও, সত্যটা সেখানেই। খুব কষ্ট থেকেই সহজ মানুষগুলো বাঁচতে শিখে যায়, স্বপ্নকে বাঁচায়! এই অনুধাবন অনেক কঠিন করে দেয় সহজ মানুষগুলোকে। অথচ প্রথম থেকেই যদি একটু অনুভব নিয়ে চলতো অতিরিক্ত জ্ঞান দেওয়া মানুষগুলো, তাহলে বাঁচতে শিখতে হতো না, এমনিতেই আনন্দে বাঁচতো সবাই, সাবলীলতায়, স্বতঃস্ফূর্ততায় মিলেমিশে, প্রাণবন্ততার চার দেয়ালে। কে চায় অতিরিক্ত হিসেবি জীবন? কে চায় সম্পর্কের দূরত্ব? সরল অংককে জটিল করে লাভ কী?কারণ, দুইয়ের সঙ্গে দুইয়ের যোগফল পাঁচ হবে না। তাই যে পাঁচ খোঁজে তার সঙ্গে তাল মেলানো যায় কিন্তু যোগসাধন সম্ভব নয়। তাই হাসো, ভালোবাসো, অনুধাবন করো, জীবনকে জয় করো- কৃতজ্ঞতা জানাও, ভুল থেকে শেখো। কারণ, আমরা জীবন থেকে পালালেও স্বপ্ন থেকে দূরে যেতে পারি না কখনোই। তাই মিলে থাকি, মিলিয়ে চলি। আকাশটা অনেক বড়, তারচেয়ে বড় মন। মানতে চেষ্টা করি তাতে ভালোটাই বিদ্যমান। সবাই নিজস্ব আত্ম-উপলব্ধিতে বিচক্ষণ হই। এই কামনা। প্রিয় ছাদ থেকে আকাশ দেখি…। লেখক: সংগীতশিল্পী
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn