নতুন তিন মন্ত্রী ও এক প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে দপ্তর বণ্টনের পাশাপাশি পুরনো চারজনের দায়িত্ব বদলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের মেয়াদের চার বছরের মাথায় এসে মন্ত্রিসভার এই রদবদলে পুরনো যে তিন মন্ত্রীর দপ্তর বদলেছে, তাদের সবাই সরকারের শরিক দলের নেতা। এ সরকারের শুরু থেকে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তাকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে পাঠিয়ে বিমান ও পর্যটনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নতুন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামালকে।
২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি এ সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের সময় জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে পরিবেশ ও বন এবং জাতীয় পার্টির (এরশাদের) প্রেসিডয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এবার তাদের দুজনের দায়িত্ব পাল্টে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ পরিবেশে এবং মঞ্জু পানিসম্পদের দায়িত্বে এসেছেন। মন্ত্রী হিসেবে নতুন শপথ নেওয়া মোস্তাফা জব্বার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন, যা অনেকটা অনুমিতই ছিল। হজ নিয়ে মন্তব্যের কারণে ২০১৪ সালের অক্টোবরে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিত্ব হারানোর পর খালিই ছিল এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পদটি।মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা নারায়ন চন্দ্র চন্দ পদোন্নতি পাওয়ার পর ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হয়েছেন। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে আসা মুহাম্মদ ছায়েদুল হক মারা গেলে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পদটি শূন্য হয়।
সরকারের দেড় বছরের মাথায় ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন তারানা হালিম। তাকে এবার পাঠানো হয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়ে। আর নতুন প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী পেয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের দায়িত্ব। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী এবং প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন মারা গেলে ২০১৬ সালের ১৯ জুন প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে সমাজকল্যাণে পাঠানো হয়। এবার তিনি মন্ত্রী হিসেবে পেলেন রাশেদ খান মেননকে। নারায়ন চন্দ্র চন্দ, মোস্তাফা জব্বার, শাহজাহান কামাল ও কেরামত আলী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে শপথ নেন।
বুধবার দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম দপ্তর বণ্টন এবং রদবদলের তথ্য সাংবাদিকদের জানান। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি ৪৯ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করে এ সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছিল; যার মধ্যে ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও দুইজন উপমন্ত্রী।এর দেড় মাসের মাথায় এ এইচ মাহমুদ আলী মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু পান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। আর হজ নিয়ে মন্তব্যের জন্য অক্টোবরে মন্ত্রিত্ব খোয়ান লতিফ সিদ্দিকী। ২০১৫ সালের ৯ জুলাই আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে দেওয়া হয় স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব। এর পরের সপ্তাহে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসিকে মন্ত্রী এবং তারানা হালিম ও নুরুজ্জামান আহমেদকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়। ওই দিন মন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি পান আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং ইয়াফেস ওসমান। আর ১৬ জুলাই সৈয়দ আশরাফকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ২০১৬ সালের ১১ মে। এরপর ২০১৬ সালের ১৯ জুন খাদ্য থেকে প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে পাঠানো হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। গত বছরের শেষ দিকে এসে ১৬ ডিসেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের মৃত্যু হয়। নতুন চারজনকে নিয়ে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা এখন ৫৩ জনে দাঁড়িয়েছ। তাদের মধ্যে ৩৩ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুইজন উপমন্ত্রী। এছাড়া মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বে আছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে আছেন আরও পাঁচজন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn