পদ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে প্রতিনিয়ত এক ধরনের মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী সম্ভাব্য নেতারা। এতে কেউ কেউ মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন পদ প্রত্যাশী নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভাপতি পদ প্রত্যাশী এক নেতা বলেন, ‘জবি ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০১২ সালের ৩ অক্টোবর। যে কমিটিতে অনেকটা কাকতালীয়ভাবে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নেতৃত্বে আসেন এফ এম শরিফুল ইসলাম ও এস এম সিরাজুল ইসলাম। এই কমিটি ১ বছরের জন্য গঠন করা হলেও তা প্রায় সাড়ে ৪ বছর স্থায়ী হয়েছিল। সর্বশেষ চলতি বছরের ৩০ মার্চ জবি ছাত্রলীগের প্রথম সম্মেলনের মাধ্যমে শরিফ-সিরাজ কমিটি বিলুপ্ত করা হলে আশার আলো দেখেছিলাম। কিন্তু আজ ৬ মাস পেরিয়ে গেল কিন্তু এখনো কমিটি দিতে পারল না কেন্দ্রীয় কমিটি। এতে হতাশায় আমার মানসিক অবস্থা বিশেষ ভালো নেই।’তিনি আরো বলেন, ‘যে ক্যাম্পাসে প্রায় একযুগ রাজনীতি করলাম সে ক্যাম্পাস এখন আর আসতে ইচ্ছে করে না। একদিকে পারিবারিক চাপ সহ্য করা আর অন্যদিকে কর্মীদের সান্ত্বনা দিতে দিতে মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করা বেশ কঠিন হয়ে পরেছে।’জবি ছাত্রলীগের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, পদ প্রত্যাশী নেতারা ক্যাম্পাসে নিয়মিত উপস্থিত না থাকলেও লবিং তদবিরের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন। অনেকে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা যেখানে যাচ্ছেন তাদের পিছু পিছু ছুটছেন।

জানা যায়, সদ্য সাবেক শরীফ-সিরাজ কমিটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় একাধিক অরাজকতার অভিযোগ থাকায় কেন্দ্রীয় নেতারা চাইছেন ক্লিন ইমেজধারী কেউ আসুক জবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এগিয়ে থাকা পদ প্রার্থীদের অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে সাংবাদিক পিটানো, মাদক গ্রহণ, অস্ত্র মামলার আসামি ও জেল খাটা কর্মী।সূত্রে জানা যায়, কমিটি গঠনের এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপর নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নেতা করতে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের চাপ এবং সর্বক্ষেত্রে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বের করে আনা সিন্ডিকেটে মতানৈক্যের অভাব রয়েছে। গত কিছু দিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের নেতা-কর্মীদের আড্ডাস্থলগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। ছাত্রলীগের আড্ডাস্থল ভিসি ভবন চত্বর, শহীদ মিনার, ভাষা শহীদ রফিক ভবন চত্বর, শান্ত চত্বর, কাঁঠাল তলা ও ছাত্রলীগের টেবিল (পোগজ স্কুলের পাশে) খালি পড়ে আছে। এখন এসবে আড্ডা জমিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের উদীয়মান আর প্রবীণ কোনো গ্রুপেরই শো-ডাউন দিতে দেখা যায়নি। নীরব হয়ে উঠেছে জবি ছাত্রলীগ। এখন অপেক্ষা শুধু নতুন নেতৃত্বের। তবে উদীয়মান নেতারা কেউ ক্যাম্পাসে না এলেও সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক চুপিসারে ক্যাম্পাসে এসে বিভিন্ন টেন্ডারের ব্যাপারে দৌড়ঝাঁপ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগ সিন্ডিকেট সদস্যদের পছন্দের প্রার্থীরা বাদ পরার কারণে কমিটি ঘোষণা করতে দেওয়া হচ্ছে না।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক কেন্দ্রীয় নেতা পরিবর্তন ডটকমকে জানান, কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চাইছেন দ্রুত কমিটি দিতে। সংগঠনের সাবেক নেতারা তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের দুটি শীর্ষ পদে বসানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন।এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগকে একাধিক বার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমি বা সোহাগ ভাই দুজনের কেউই এক সাথে ঢাকায় থাকতে পারছি না। এজন্য একটু দেরি হচ্ছে। আমরা ঢাকায় এসেই সিদ্ধান্ত নিব। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মানসিক অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো হওয়ারই কথা। আমরা যখন প্রার্থী ছিলাম তখন আমরাও এক ধরনের মানসিক চাপে ছিলাম।’ এদিকে ছাত্রলীগের সম্মেলনের আগে যারা শীর্ষ পদ প্রত্যাশী প্রার্থী ছিলেন সম্মেলনের পর তাদের অনেকেই লবিং তদবিরে পিছিয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। শেষ তথ্য পাওয়া পর্যন্ত শীর্ষ পদ প্রত্যাশীদের সংখ্যা ৫ জনে চলে এসেছে। এদের মধ্যে রয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান জুয়েল, গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক আপেল মাহমুদ, সমাজ সেবা বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল্লাহ ইবনে সুমন, উপ-প্রচার সম্পাদক আনিসুর রহমান শিশির, উপ-সমাজ সেবা বিষয়ক সম্পাদক মমিনুর রহমান মমিন, উপ-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক নাহিদ পারভেজ প্রমুখ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn