আহমাদুল কবির- আশরাফুল নামের এক বাংলাদিশি শিক্ষার্থী অবিচারের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বন্ধুর সঙ্গে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন আশরাফুল। পুলিশ আশরাফুলকে গ্রেপ্তার করে ৩ নভেম্বর। ওই সময় নিজের আইডি কার্ড দেখিয়ে পরিচয় দেন। পাসপোর্ট কেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়েছে, তারও ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। গ্রেপ্তার করে সোজা হাজতে পাঠানো হয়। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনেও হাজির করা হয়নি! রেষ্টুরেন্টে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের সময় মোহাম্মদ আশরাফুল গনি নামের ওই শিক্ষার্থীর পাসপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ছিল। ভিসা নবায়নের জন্য তিনি জমা দিয়েছিলেন। রেস্টুরেন্টে পুলিশকে সে বিষয়ে অবহিত করেও ছাড় পাননি তিনি। পরীক্ষার আগে প্রায় এক মাস কাটাতে হয়েছে জেলে!

মালয়েশিয়ার জাতীয় সংবাদ সংস্থা থেকে শুরু করে কয়েকটি বেসরকারি গণমাধ্যমেও বিষয়টি এসেছে। আশরাফুল ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ার ইনোভেটিভ ইন্টারন্যাশনাল কলেজ থেকে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে পড়ালেখা করেন। ২০১৮ সালে এই অধ্যায় শেষ করে পরের বছর ভর্তি হন সিটি ইউনিভার্সিটিতে। ইনফরমেশন টেকনোলজির ওপর ব্যাচেলর ডিগ্রি করছেন জানা গেছে। আশরাফুলের বন্ধুরা বিষয়টি জানার পর আদালতে পাসপোর্ট জমা দেন। পরে জামিন দেয়া হয়। সেই জামিনের বিরুদ্ধে পুলিশ আবার চ্যালেঞ্জ করেছে!

আশরাফুলের আইনজীবী রাজপাল সিং বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিদেশি নাগরিকদের প্রতি মালয়েশিয়ার এমন আচরণকে তিনি ‘অবিচারের ক্ষুদ্র উদাহরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এদিকে সিটি ইউনিভার্সিটি এই খবর পেয়ে সি পার্ক থানায় নিজেদের প্রতিনিধি পাঠায়। ছাত্র কল্যাণ বিভাগের কর্মকর্তা জামালুল্লাহিল আলিয়াস পাসপোর্ট জমা দেন। কিন্তু তাতেও পুলিশ সাড়া দেয়নি। বলা হয়, আরো তদন্ত করা হবে! এভাবে দশদিন কেটে যায়। ১৩ নভেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আশরাফুলকে হাজির করা হয়। আশরাফুল শুনানির দাবি জানালে পাঠানো হয় কারাগারে।

আরো তিনদিন পর তার এক বন্ধু বিষয়টি শুনে সঙ্গে সঙ্গে তিনি আইনজীবী নিয়োগ করেন। এরপর ২৫ নভেম্বর আবার তাকে আদালতে তোলা হয়। আদালত পরীক্ষার কথা শুনে ৬ হাজার রিঙ্গিতের বিনিময়ে জামিন দেন। সঙ্গে বলে দেন, প্রতি মসে একবার করে সি পার্ক থানায় হাজিরা দিতে হবে। সিটি ইউনিভার্সিটি ইতিমধ্যে আশরাফুলের ভিসা নবায়ন করেছে। আবার মামলাটির শুনানি হবে ৫ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর আশরাফুলের জামিন আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করেছেন। এর শুনানি হবে আগামী সোমবার।

ইতোমধ্যে প্রায় এক মাস জেল খাটা আশরাফুল যখন পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা করবেন, তখন তাকে ভাবতে হচ্ছে মামলা নিয়ে। আইনজীবী বলছেন, জামিন চ্যালেঞ্জ করা একটা হাস্যকর বিষয়। যেখানে পাসপোর্ট দেয়া হয়েছে, সেখানে আর কথা থাকতে পারে না। আশরাফুলের বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয়ায় এখন বেশ আলোচনা চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্থানীয়রা তাকে সমর্থন জানিয়ে প্রশাসনের প্রতি জানাচ্ছেন ক্ষোভ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn