মাঈনুল ইসলাম নাসিম : এতিম (ইয়াতিম) শব্দটি আরবি। এর অর্থ একাকী বা নিঃসঙ্গ। মাতা-পিতা বা অভিভাবকহীন এমন সব নিঃসঙ্গ অনাথ শিশুদের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের সুস্বাস্থ্য ও সুচিকিৎসা এমনকি সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত করে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সংস্থা ডিসট্রেস্ড চিলড্রেন এন্ড ইনফ্যান্টস (ডিসিআই) ইন্টারন্যাশনাল। আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করায় এতিম শিশুদের মুখে হাসিও ফুটছে আজ। কানেকটিকাটের বিখ্যাত ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী গবেষক ড. এহসান হক এবং ড. ব্রায়ানের হাত ধরে ১৫ বছর আগে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই যাত্রা শুরু করে ডিসিআই। তারপর সবই ইতিহাস।

বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, নেপাল ও নিকারাগুয়ার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরও ভাগ্য বদলে দিচ্ছে আজ ড. এহসানের হাতে গড়া ডিসিআই ইন্টারন্যাশনাল। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ডিসিআই পরিচালিত বেশ কিছু প্রকল্পের আওতায় সেবা পাচ্ছে প্রায় হাজার দেড়েক সুবিধাবঞ্চিত শিশু। ডিসিআই পরিচালিত উল্লেখযোগ্য একটি প্রকল্প হচ্ছে রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে সান চাইল্ড হোম (অরফানেজ) প্রজেক্ট, যেখানে (ছবিতে দৃশ্যমান) অনাথ এই শিশুরা মা-বাবার কোলে বেড়ে ওঠার সুযোগ না পেলেও সবাই কিন্তু ইতোমধ্যে হয়ে উঠেছে একেক জন প্রবল মেধাবী ও সৃজনশীল। অন্য সবার মতোই তারাও নিয়মিত রাজধানীর বিভিন্ন পাবলিক স্কুলে যাচ্ছে, বরং গ্রাম বাংলা থেকে নিয়ে আসা এই শিশুরাই সবচাইতে ভালো ফলাফল করছে ক্লাসে।

ডিসিআই পরিচালিত ‘সান চাইল্ড হোম’ অনাথ আশ্রম তথা আধুনিক এই এতিমখানায় প্রায় অর্ধ শতাধিক শিশু আজ বেড়ে উঠছে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে। সব কৃতিত্ব ড. এহসান ও ড. ব্রায়ানের সাথে কাজ করা বিশ্বব্যাপী অভিজ্ঞ টিমের। বিশেষ করে ডিসিআই সিনিয়র এডভাইজর হিসেবে আছেন টেক্সাস ভিত্তিক বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ইউএসএ’র প্রেসিডেন্ট মাসুদ চৌধুরী, তার আন্তরিকতায় ডিসিআই আজ সমীহ জাগানিয়া একটি সংস্থা। এর সাথে বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশীদের সম্পৃক্ত করতে ড. এহসান এবং মাসুদ চৌধুরী ২০১৬ সালের নভেম্বরে মালয়েশিয়াতে যোগ দেন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন (আয়েবা) আয়োজিত ‘প্রবাসী বিশ্ব সম্মেলন’ ১ম বাংলাদেশ গ্লোবাল সামিটে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের অক্টোবরে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিসিআই আয়োজিত শিশু অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইউরোপ থেকে অংশগ্রহণ করেন আয়েবা মহাসচিব কাজী এনায়েত উল্লাহর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল।

কানেকটিকাট সম্মেলনে অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়, ইউরোপ-আমেরিকা একযোগে কাজ করবে বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে। অঙ্গীকার মোতাবেক ২০ জানুয়ারি ২০১৮ রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ডিসিআই পরিচালিত সান চাইল্ড হোম (অরফানেজ) প্রজেক্ট পরিদর্শন করেন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের (আয়েবা) মহাসচিব কাজী এনায়েত উল্লাহ, যিনি একাধারে ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউবিও) সভাপতি। ডিসিআই পরিচালিত মানবিক কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। অরফানেজ প্রজেক্ট পরিচালনায় সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি আয়েবা ও ডব্লিউবিও’র তরফ থেকে। প্রসঙ্গত, গ্রাম বাংলায় দারিদ্রতা দূরীকরণের পাশাপাশি অভাবগ্রস্থ শিশুদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেয়া সহ বাংলাদেশে শিশুশ্রম বন্ধেও নিরলস কাজ করছে ডিসিআই ইন্টারন্যাশনাল (www.distressedchildren.org)। ডিসিআই জানে, শিশুরা হাসলেই হাসবে বাংলাদেশ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn