মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান নিয়েছে জাতিসংঘের সব থেকে ক্ষমতাশালী সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ট্রাম্প শিবির এ ধরনের প্রস্তাব দেয় নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে। হিংসা বন্ধ, রাখাইনে ত্রাণের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানান, ‘লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে মিয়ানমারেররাখাইন রাজ্যে সহিংসতার শিকার হয়ে। এই পরিস্থিতির গুরুত্ব মিয়ানমার সরকারকে বুঝতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশে ফেরার সাহস পাচ্ছে না। রাখাইন রাজ্যে যে সহিংসতা চলছে, তার নিন্দা করছি।’কেবল রোহিঙ্গাই নয়, অন্যসব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের ঘটনাতেও নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। নিক্কি হ্যালে জানান, ‘মিয়ানমারে নৃশংসতা ও হিংসার শিকার হচ্ছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো। কিন্তু এসব বিষয়ে তথ্য গোপন করছে মিয়ানমার সরকার। দেশটি গণতান্ত্রিক হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে সেটিও আমাদের মনে রাখতে হবে। অব্যাহত থাকতে হবে সেই চেষ্টাও।’ অং সান সু চির বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করে নিক্কি হ্যালে জানান, ‘মিয়ানমারে সহিংসতা যে চলছে না, আপনাদের সেই দাবি সত্য হলে রাখাইনে গণমাধ্যমকে ঢুকতে দেয়া হোক। পাশাপাশি মানবিক ত্রাণসহায়তা ঢুকতে দেয়া হোক। আর আমরা এও জানি যে, এ ধরনের পরিস্থিতি চলতে থাকলে কী হয়।’সে কারণে অবশ্যই আমাদের মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীসহ সব ধরনের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তিনটি প্রস্তাবও তুলে ধরেন নিক্কি হ্যালে। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সব নাগরিকের মানবাধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।’তিনি আরও বলেন, ‘রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর যারা সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে যেসব দেশ অস্ত্র সরবরাহ করছে, অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত রাখতে হবে তাদের।
দ্বিতীয়ত, মিয়ানমার সরকারকে সহিংসতাপূর্ণ এলাকায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা পাঠাতে হবে। আন্তর্জাতিক অন্যান্য সংস্থাকেও প্রবেশ করতে দিতে হবে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নিতে হবে। তাদের নিজ বাসভূমে স্বাগত জানাতে হবে।’রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন নিক্কি হ্যালে।তিনি বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সঙ্কটে আমরা বাংলাদেশের উদারতা দেখেছি। তারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে।’ কিন্তু বাংলাদেশের জন্য আরও সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। রাখাইনে বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন সম্প্রদায় একসঙ্গে বাস করে আসছে। কিন্তু সেখানে রোহিঙ্গারা এখন বৈষম্যের শিকার, তারা নাগরিকত্বের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। নিক্কি হ্যালের মতে, ‘আমরা সবাই ঈশ্বরের সন্তান। সবারই রয়েছে স্বাধীনতা নিয়ে নিরাপদে বসবাসের অধিকার। সবাই একসঙ্গে কাজ করব যেন ঈশ্বরের সব সন্তানই ভাল থাকে।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn