সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বহুল আলোচিত মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীর কর্মকাণ্ডকে সন্দেহজনক বলে মনে করছেন সিলেট বিএনপির একটি প্রভাবশালী অংশ। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ গড়ে তোলর অভিযোগ তুলেছেন তারা। মেয়র আরিফের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছেন সিটি কর্পোরেশনের বিএনপির দলীয় কাউন্সিলররা। তাাদের দাবি সিলেট সিটিতে আরিফের পরিবর্তে মেয়র পদে নতুন প্রার্থী। সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে  আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ ওঠে চলতি বছরের শুরুতেই। এ বিষয়ে সিলেট মহানগর বিএনপি দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির কাছে চিঠিও পাঠায়। এসব চিঠির অনুলিপি ওইসময় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছেও পৌছে দেওয়া হয়। সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাছিম হোসাইন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির কোনো সদস্যই আরিফের বিরুদ্ধে কোনো চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেননি। তবে স্থানীয় নেতারা জানান, সিলেট মহানগর বিএনপির প্যাডে লেখা পাচ পৃষ্ঠার ওই  চিঠিতে আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ তোলা হয়। এসব অভিযোগের মধ্যে ছিল, নেতাকর্মীদের সঙ্গে ‘বিমাতাসুলভ’ আচরণ।উপজেলা নির্বাচনে সিলেট সদর ‍ও সুরমা উপজেলায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন আঁতাত গড়ে তুল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বিপক্ষে কাজ করা এবং  স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘণিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে সিটি কর্পেোরেশনের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী অাবুল মাল আবদুল মুহিতকে সংবর্ধনা দেওয়া। মেয়র আরিফের বিরুদ্ধে আরেকটি গুরুতর অভিযোগ হলো, তিনি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার বাদী সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার সামাদ দহরম-মহরম সম্পর্ক গড়ে তোলা, তাদের একে অন্যকে মিস্টিমুখ করানোর ছবিও ওই চিঠিতে যুক্ত করা ছিল বলে সূত্র জানায়।

আগামী ৩০ জুলাই সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর পরই সিলেট সিটির মেয়র পদে নতুন প্রার্থীর দাবি তুলেছে স্থানীয় নেতারা। সিলেট মহানগর বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা বুধবার রাতে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেন, দল থেকে আরিফকে পুনরায় মেয়র পদে প্রার্থী করা হলে তারা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।  বৈঠকে ,মেয়র পদে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমের সমর্থনেসিটি কর্পোরেশনের বিএনপির দলীয় কাউন্সিলররা অংশ নেন।বৈঠকে বিএনপির ১৬জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৩জনই উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে নির্বাচিত ৩জন প্যানেল মেয়রও ছিলেন। এনিয়ে নগরজুড়ে তোলপাড় চলছে। বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, বৈঠকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় মেয়র আরিফের যোগাযোগ রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ময় বদরুজ্জামান সেলিম তিনি নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দল এবং কাউন্সলরদের জন্য কাজ করার প্রতিজ্ঞাও করেন বদরুজ্জামান সেলিম। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার ও প্যানেল মেয়র (১) রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার ও প্যানেল মেয়র (২) এডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরী, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলার ও প্যানেল মেয়র (৩) এডভোকেট রুখশানা বেগম শাহনাজ, ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার দিনার খান হাসু, ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার আব্দুর রকিব তুহিন, ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার সিকান্দার আলী, ১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জল, ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার রাজিক আহমদ, ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সৈয়দ তৌফিকুল হাদী ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সালেহা কবির শেপী।

প্রসঙ্গত, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে মেয়র আরিফের গোপন আঁতাত অভিযোগ দলের হাইকমান্ডকে জানাতে  গত এক বছর ধরেই তৎপর নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম।বর্তমানে তিনি ওমরা পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন। এরপর তিনি লন্ডন যেতে পারেন। তিনি মেয়র নির্বাচন করতে আগ্রহী।  তবে আসন্ন এই নির্বাচনে আরিফুল ইসলামই বিএনপির দলীয় মনোনয়নে এগিয়ে রয়েছেন বলে কেন্দ্রীয়ভাবে আলোচনা আছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn