রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, আবাসিক হলে সিট বাণিজ্য আর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায়ই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন তারা। নেতাকর্মীদের এমন অপকর্মে সংগঠনটি ইমেজ সংকটে পড়ছে। তবে খোদ দলীয় সিনিয়র নেতারা বলছেন- কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কাউন্সিল না দেয়ায় এসব উশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে নেতাকর্মীরা। জানা যায়, রুয়েটের আব্দুল হামিদ হলে বৃহস্পতিবার রাতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় ওই হলে ব্যাপক ভাঙচুর ও বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় নেতাকর্মীরা। রাতভর সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বৃহস্পতিবার রাতেই জরুরী সিদ্ধান্তে রুয়েট শাখার কমিটি স্থগিত করে। এর আগে ২৩ জানুয়ারি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রুপের কর্মীদের উপর হামলা চালায় সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মীরা। এতে ১১ জন আহত হয়। এদিকে, সাম্প্রতি রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।মঙ্গলবার বিকালে রাবি ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার সভাপতি আল-আমিন আকাশ আহত হন। ওইদিন রাতে মঈনুল ইসলাম নামে নাট্যকর্মীকে বেধড়ক মারধর করেন রাবি ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কানন ও কলা অনুষদের যুগ্ম-সম্পাদক ঝলক। এর প্রতিবাদে গত দুই দিন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। 

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অংশ নেন রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন, মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতি সম্পাদক কামারউল্লাহ সরকার, রাজশাহী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ ঘোষ প্রমূখ। তারা সবাই নাট্যকর্মীকে মারধরে জড়িতদের বহিস্কার দাবি জানান। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও রাবি ছাত্রলীগ এখনও এঘটনায় কোনো পদক্ষেপ নেয় নি। ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহী আগমনকে কেন্দ্র করে রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মী অনিক মাহমুদ বনিসহ দু’জনকে ছুরিকাঘাত করা হয়। বনি দাবি করেন- রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বিরোধের জেরেই এ হামলা চালানো হয়েছিল। এর আগে গত বছরের ১০ জুলাই ছাত্রলীগের বাস ভাঙচুরের ছবি তোলায় ডেইলি ষ্টারের সাংবাদিককে মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া আবাসিক হলগুলোতে সিট বাণিজ্য, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ আলাদাভাবে কক্ষ ভাগ করে নেয়া, চাঁদা আদায়, মাদক সেবন ও ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপকর্মের ঘটনা ঘটাচ্ছে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। রাবি ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখনও হল কমিটি দেয়া হয়নি। অনুষদ কমিটি দেয়া হলেও সেখানে শিবিরের অনুপ্রবেশকারীরা স্থান পেয়েছে। এছাড়া জুনিয়র কর্মীরা সিনিয়র নেতাদের আশ্রয়-প্রশয়ে উশৃঙ্খল হয়ে উঠেছে। তারাই এ ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। যাতে ছাত্রলীগের ইমেজ ক্ষুন্ন হচ্ছে। দ্রুত কাউন্সিল দিয়ে নতুন কমিটি দেয়া হলে এ ধরনের অপকর্ম রোধ করা সম্ভব হবে।
রাবির আওয়ামীপন্থী বেশ কয়েজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ছাত্রলীগকে মনে রাখতে হবে তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন। এ রকম বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো থেকে নিজেদের বিরত রাখতে না পারাই সংগঠনটি ইমেজ সংকটে পড়ছে। শিক্ষার্থীরা এখন ছাত্রলীগের নাম শুনলে ভয় পাই। যা যেকোনো সংগঠনের জন্য অশনিসংকেত। জানতে চাইলে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে সবসময় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি। ভুল বোঝাবুঝির জন্য কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো মীমাংসা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।’ তবে এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn