যে কোনো বিষয় খুঁজে বের করতে সার্চ ইঞ্জিনগুলোর তীব্র গতি মানুষের স্মৃতিশক্তির ক্ষতি করছে। বিশেষ করে মস্তিষ্কের যে অংশ তথ্য জমা রাখে, সে অংশের ব্যবহার দিন দিন কমছে মুহূর্তেই জানা-অজানা কাঙ্ক্ষিত তথ্য খুঁজতে এখন মানুষ ক্লিক করছে সার্চ ইঞ্জিনে। কিন্তু সম্প্রতি এক মার্কিন লেখক দাবি করেছেন, যে কোনো বিষয় খুঁজে বের করতে সার্চ ইঞ্জিনগুলোর তীব্র গতি মানুষের স্মৃতিশক্তির ক্ষতি করছে। বিশেষ করে মস্তিষ্কের যে অংশ তথ্য জমা রাখে, সে অংশের ব্যবহার দিন দিন কমছে।’দ্য শ্যালোস: হোয়াট দ্য ইন্টারনেট ইজ ডুয়িং টু আওয়ার ব্রেইনস’ বইয়ের লেখক নিকোলাস জি কার। প্রযুক্তি বিষয়ক এ লেখক বইটিতে ইন্টারনেট কীভাবে পরিবর্তন আনছে সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন। ইন্টারনেট কীভাবে মানুষকে প্রতিফলিত চিন্তা থেকে বিরত রাখছে সে বিষয়ে জোরালো আলোচনা করেছেন। এর প্রধান কারণ হলো মানুষ এখন ইন্টারনেট যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত তাদের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করে থাকে। ক্ষুদ্র বার্তা, টুইট এবং কমেন্ট করতে মানুষকে বেশি চিন্তা করতে হয় না এবং প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতেও সময় নেয় না।

তিনি বলেন, যারা সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটে যুক্ত থাকেন, সব সময় পোর্টেবল বিনোদন মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যুক্ত থাকেন তারা প্রতিনিয়ত দৈনন্দিন প্রতিফলনমূলক চিন্তাভাবনা থেকে দূরে সরে যান। আমরা যত বেশি ক্ষুদ্র এবং দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে অভ্যস্ত হচ্ছি, একইভাবে আমরা ক্ষুদ্র এবং দ্রুত চিন্তাভাবনায়ও অভ্যস্ত হচ্ছি। আর এটিই আমাদেরকে প্রতিফলনমূলক চিন্তাভাবনা থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে। তার দাবি, ইন্টারনেট জগৎ আমাদের মস্তিষ্কের অংশবিশেষকে নিত্যদিনের স্বাভাবিক কাজকর্ম থেকে বঞ্চিত রাখছে। এর কারণ হচ্ছে খোঁজ সেবার সহজলভ্যতা। লেখালেখির পাশাপাশি ব্লগসাইট রাফটাইপ ডটকম পরিচালনা করেন নিকোলাস। তার মতে, গুগলের মতো সাইটগুলোর ব্যবহার প্রণালি আরও জটিল করা উচিত।

কিন্তু হচ্ছে তার উল্টোটা। কেননা, সফটওয়্যার নির্মাতারা দিন দিন এসবের ব্যবহার প্রণালি সহজ থেকে সহজতর করে তুলছেন। গুগল তার খোঁজাখুঁজির সেবাকে এখন এতটাই সহজ করেছে যে, কাঙ্ক্ষিত শব্দ লেখা শেষ হওয়ার আগেই হাজির হয় খোঁজের বিষয়বস্তু। ফলে কোনো কিছু খুঁজতে মানুষের মস্তিষ্ক এখন আর আগের মতো কাজ করার সুযোগ পায় না। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য গুগলের প্রশংসাও করেন নিকোলাস কার। কিন্তু প্রখ্যাত এই লেখকের মতে, গুগল আমাদের স্মৃতিশক্তি ব্যবহার করা থেকে দূরে রাখতে চাইছে। কেননা, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তথ্যও মুহূর্তেই খুঁজে দিচ্ছে সংস্থাটি। শুধু গুগল নয়, স্যাটেলাইটনির্ভর পথনির্দেশক যন্ত্রেরও সমালোচনা করেছেন নিকোলাস। তিনি মনে করেন, মানুষ এখন দিন কয়েক আগে যে রাস্তা দিয়ে গিয়েছিল, তার কথাও মনে রাখতে পারে না। কারণ মস্তিষ্কের রাস্তার স্মৃতি ধরে রাখার ক্ষমতা হ্রাস করছে জিপিএস প্রযুক্তি।

নিকোলাস জি কার তার বইয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়েও লিখেছেন। তিনি বলেন, যেসব মানুষ ঘনঘন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এবং বার্তা আদান-প্রদান করে থাকেন তারা কোনো বিষয়ের গভীরে গিয়ে চিন্তা করেন না। এজন্য তাদের চিন্তার কোনো প্রতিফলনও ঘটে না এবং সেটি তার নৈতিক জীবনের গুরুত্বে প্রভাব ফেলে।

১৯৮৬ সালে হিউলেট প্যাকার্ড, সংক্ষেপে এইচপি প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রথম সার্চ ইঞ্জিন আবিষ্কৃত হয়। ১৯৯০ সালে ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি থেকে সার্চ ইঞ্জিন উন্নয়নে কার্যক্রম শুরু হয়। লাইকস নামক সার্চ ইঞ্জিন আবিষ্কৃত হয় ১৯৯৩ সালে। এটি ছিল একটি ইউনিভার্সিটি প্রজেক্ট। ১৯৯৪ সালে চালু হওয়া প্রথম পূর্ণ টেক্সট ওয়েব সার্চ ইঞ্জিনের নাম ওয়েবক্রলার। জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন ইয়াহু প্রতিষ্ঠিত হয় একই বছর। এর পরের বছর ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সার্চ ইঞ্জিন আলতাভিস্তা। বর্তমানে ব্যাপক জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn