যুবকের পিঠে ৪৮টি সেলাই। সাদা ব্যান্ডেজ। অজ্ঞান ছিলেন ১৫ ঘণ্টারও বেশি। যেন মৃত্যুর হাত ফসকে ফিরে এসেছেন তিনি। অপ্রিয় হলেও সত্য আঘাত যিনি করেছেন তিনি তারই প্রেমিকা। যাকে ভালোবেসেছেন দীর্ঘ প্রায় চার বছর। চুটিয়ে প্রেম করেছেন দুজনে। আজিমপুর থেকে পুরান ঢাকা, পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জ ছুটে বেরিয়েছেন। ঘর বাঁধার স্বপ্ন বুনেছেন। সেই প্রেমিককেই ছুরিকাঘাত করেছেন প্রেমিকা লাভলী ইয়াসমিন মিতা। ইডেন মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তিনি। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে কথা হয় আহত আল আমিনের সঙ্গে। স্বজনরা জানান, ঘটনার পর থেকে অজ্ঞান ছিলেন তিনি। জ্ঞান ফিরেছে গতকাল দুপুরে। আল আমিন জানান, বুধবার বিকালে ফোনে তাকে ফুলার রোডে যেতে বলেন মিতা। দীর্ঘদিন ধরেই সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছিলো তাদের। আল আমিনকে এড়িয়ে যেতেন মিতা। এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। মধুর সম্পর্ক ছিল দুজনের। আল-আমিনের পরিবারের সদস্যরাও বিষয়টি জানতেন। কিন্তু হঠাৎই পাল্টে যায় সব।
আল আমিন জানান, এ অবস্থাতেই বুধবার বিকালে আল আমিনকে ফোনে ডেকে নেন তিনি। মিতার কথানুসারেই ঢাবি জগন্নাথ হল সংলগ্ন ফুলার রোডের উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে যান আল আমিন। ঠিক তখনই ঘটে ঘটনা। মিতার পাশে দাঁড়ানো ছিল চার-পাঁচ তরুণ। এসময় ওই ছেলেরা মারধর করে আল আমিনকে। রক্ষা পেতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন তিনি। পাশে দাঁড়িয়ে তখনই তাকে ছুরিকাঘাত করেন মিতা। নিজের ভ্যানেটি ব্যাগ থেকে ছুরি বের করে পরপর দুটি আঘাত করেন তার পিঠে ও হাতের নিচে। রক্তে ভেসে যায় তার শরীর। এসময় ‘ছিনতাইকারী ছিনতাইকারী’ বলে চিৎকার করে পালাতে চেয়েছিলেন মিতা। তাৎক্ষণিকভাবে ঢাবি’র আশেপাশের ছাত্ররা মিতাকে আটক করলেও অন্যরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ মিতাকে আটক করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। ঘটনার পর জ্ঞান হারান আল আমিন। তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মিতা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিল তাদের। ব্রেকআপ হয়ে যাওয়ার পরও সম্পর্ক রাখতে চেষ্টা করছিলো আল আমিন। এতে অতিষ্ঠ হয়েই তাকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করেছে মিতা। এ ঘটনায় মিতাকে আসামি করে গতকাল মামলা করেছেন আল আমিনের ভাই আওলাদ হোসেন। মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আল আমিন-মিতার প্রেম সম্পর্কে জানতে চাইলে তাদের ঘনিষ্ঠরা জানান, পুরান ঢাকার ইসলামবাগে থাকেন আল আমিন। গত সাত বছর থেকেই ভাঙারির ব্যবসা করছেন। বিকালে আড্ডা দিতেন আজিমপুর এলাকায়। আজিমপুরেই থাকেন লাভলী ইয়াসমিন মিতা। সেখানেই পরিচয়। তারপর ফোনে কথা হতো। দেখা হতো। এভাবেই একসময়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যান তারা। ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর থানার রামচন্দ্রপুর বিশ্বাসপাড়ার গোলাম রসুলের মেয়ে লাভলী ইয়াসমিন মিতা। অন্যদিকে পুরান ঢাকার পশ্চিম ইসলামবাগের মৃত আলেক ব্যাপারীর ছেলে আল আমিন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn