ব‌রিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসায় হামলার জেরে পু‌লিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন। ওই বিবৃতিতে ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত’ শব্দদ্বয় ব্যবহারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। এক ভিডিওবার্তায় ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত’ কারা, তা বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কাছে জানতে চেয়েছেন এ ব্যারিস্টার।

নিজের ফেসবুক পেজে শুক্রবার রাতে ‘রাজনীতিবিদরাই বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আমলারাই সবসময় সুবিধাবাদী হয়’ শিরোনামে আপলোড করা ভিডিওবার্তায় সুমন উল্লিখিত প্রশ্ন করেন। ভিডিওবার্তায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বলেন, “আজকে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে দুই-তিনটি কথা বলতে আসছি। আপনারা জানেন যে বরিশালের ঘটনা নিয়ে কোনো কথা বলার ইচ্ছা আমার ছিল না। কিন্তু আজকে আমলাদের যে অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের একটি প্রেস রিলিজ দেখলাম, যেটায় বলা হয়েছে ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের বিচার হবে।’ তখন আমার মনে হয়েছে দুই-তিনটা কথা বলা দরকার।”

তিনি বলেন, ‘আপনারা কাদেরকে রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত বলছেন? আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছেলে জনপ্রিয় মেয়র (যিনি নৌকার নির্বাচন করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, একজন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন) তাকে? তাদেরকে আপনারা রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত বলেন, যে মানুষগুলো বাংলাদেশের সৃষ্টি করল; যে মানুষ বাংলাদেশের সৃষ্টি করতে গিয়ে নিজের পরিবারের অনেকগুলা মানুষকে হারিয়েছে? ‘আমি আপনাদেরকে বলতে চাই, এই পরিবারের কাউকে যদি আপনারা রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত বলেন, তাহলে তো আমরা যারা রাজনীতি করি তাদের কোন ভ্যালুই থাকবে না।’

বরিশাল সদরের ইউএনওর বিষয়ে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘আপনারা একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন, এই ইউএনও সাহেব দাবি করেছেন তিনি একসময় ছাত্রলীগ করতেন এবং তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক ছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করতে চাই, আপনি যদি সত্যিই দলের ভালো চাইতেন তাহলে যদি কোনো কারণে কোনো অন্যায় হয়ে থাকে, তাহলে আপনি এটাকে মিটমাট করতে পারতেন। আপনি চাইলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দিতে পারতেন।’ অ্যাডমিন অ্যাসোসিয়েশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনি এমন একটা পরিবারের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত’ তকমা দিচ্ছেন! আপনারা কি জানেন যে, এই তকমায় যাদের প্রাণে আওয়ামী লীগ তারা আস্তে আস্তে হারিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের লোকজনকে যদি আপনারা এই তকমা দেন, তাহলে আর কী বলব?”

এ আইনজীবী বলেন, “আপনারা কিন্তু সারা জীবনের সুবিধাভোগী। আজকে যদি দল ক্ষমতায় না থাকে তাহলে এই পরিবারের (আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ) সদস্যরাই বন্দুকের মুখে থাকবে। আপনাদের কোনো সমস্যা হবে না। আপনি ইউএনও থেকে এডিসি হবেন, ডিসি হবেন। আপনি জয় বাংলার পরিবর্তে তখন ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বলবেন।” তিনি আরও বলেন, ‘বারবার বলে আসছি আমাদের দায়িত্ব আমাদের বুঝতে দেন। আপনারা আপনাদের দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। মায়ের চেয়ে যখন মাসির দরদ বেশি হয়ে যায়, তখন সন্দেহের কারণ হয়। মা তো মা, মাসি তো মাসিই। মায়ের দায়িত্ব যখন মাসি নিতে চায় তখনই এর পরিণাম ভালো হয় না।

‘আপনারা যদি মাসির জায়গা থেকে মায়ের ভূমিকা পালন করতে চান তাহলে কিন্তু আপনারা আমাদের সর্বনাশ করবেন। ইতিহাস বলে, আপনারা কোনোদিন ক্ষতিগ্রস্ত হন না। আপনারা কোনো না কোনোভাবে লাভবান হবেনই। সেই ফেরাউনের আমল থেকে নাকি আমলাদের কোনভাবে লস করানো যায় না। তারা কোনো না কোনোভাবে লাভবান হবে; লস হয় রাজনীতিবিদদের। ‘তাই আমি একটা কথা বলতে চাই, আর পানি ঘোলা করবেন না। এখন যে যেভাবে আছে এটাকে কন্ট্রোল করেন, নিয়ন্ত্রণ করেন। না হলে এর পরিণতি কিন্তু সুফল বয়ে আনবে না।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn