লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন ভবনে বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্রিটিশ পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। মামলার প্রয়োজনে ঘটনাস্থলের আলামত ও হাইকমিশন থেকেও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে তারা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায়ের বিরুদ্ধে স্থানীয় সময় বুধবার এক দল বিক্ষোভকারী লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়ে হামলা চালায়। কিছু আসবাব ভাঙার পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুর করে বিক্ষোভকারীরা। দীর্ঘক্ষণ এ অরাজকতা চলার পর পুলিশ এসে বিক্ষোভ ভেঙে দেয়। বিএনপির এক নেতাকে গ্রেফতার করে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিক্ষোভে উপস্থিত নেতাকর্মীরা খুবই আক্রমণাত্মক হতে পারেন- এমন একটি সতর্কবার্তা আমরা আগেই দিয়েছিলাম পুলিশকে। তবে মানুষের নাগরিক অধিকার বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে এমন সহিংস হামলার ঘটনা ছিল তাদের কাছে অকল্পনীয়। তাই সাধারণ রেওয়াজ অনুযায়ী আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াই পুলিশ সদস্যরা ওইদিন ডিউটি করতে আসেন। শেষ পর্যন্ত আমাদের আশঙ্কা সত্য হয়েছে।’

হাইকমিশন সূত্র জানায়, ব্রিটেনের মতো একটি সভ্য দেশের বিদেশি একটি মিশনে এমন একটি প্রকাশ্য হামলা কল্পনাও করতে পারেনি দেশটির পুলিশ। বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিএনপি কর্মীদের হামলায় তাই অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। এমন একটি অবাঞ্ছিত ঘটনার জন্য হাইকমিশনে দুঃখ প্রকাশ করতে এসে মেট্রোপলিটন পুলিশের স্থানীয় প্রধান এমন মনোভাবই প্রকাশ করেন বলে সমকালকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় ব্রিটিশ পুলিশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য এ ঘটনায় অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলেই মনে করছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। আর তাই হাইকমিশনে হামলার এ ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে তারা। ডিপ্লোম্যাটিক এলাকায় অন্য একটি দূতাবাসে হামলার বিষয়টি ব্রিটিশ পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। ব্রিটিশ ফরেন অফিস জানতে চায়, এ ঘটনা তাৎক্ষণিক উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ না পূর্ব পরিকল্পিত। পুলিশ বিষয়টি এই দৃষ্টিকোণ থেকেই তদন্ত করছে। হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ। হাইকমিশন ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ঘটনার ‘মূল ইন্ধনদাতা’ দাবি করে তাকে গ্রেফতারের আহ্বান জানানো হয় ব্রিটিশ পুলিশের কাছে। সংগঠনের সভাপতি সুলতান শরীফের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে দলের নেতারা বক্তব্য দেন।

এদিকে, শুক্রবার আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রেফতার বিএনপি নেতা পুলিশকে জানান, তারেকের নির্দেশেই তারা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ঘটনার পরে বাংলাদেশ হাইকমিশন তারেক রহমানকে প্রধান আসামি করে ৫০ জনের বিরুদ্ধে লন্ডন পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করে। বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে পত্রিকাটি জানায়, বিদেশি দূতাবাসে হামলার বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে পুলিশ। প্রধান আসামিকে গ্রেফতারের কথা পুলিশ বিবেচনা করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রিটেনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন  বলেন, ‘মামলা হয়েছে, কী হয়নি এ বিষয়ে বলার মতো পরিস্থিতি এখনও হয়নি। হলেই আপনাদের জানাব।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn