রবিউল ইসলাম- বাংলাদেশ ৪, অস্ট্রেলিয়া ৫। স্কোরলাইন দেখে খটকা লাগতে পারে! অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সিরিজে জয়ের পর কী করে পিছিয়ে বাংলাদেশ? প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে জিতলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আগের চার মুখোমুখিতে বাংলাদেশ সবকটিতেই হেরেছিল। ৪-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ শুরু করেছিল স্বাগতিকরা। ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জেতার পর তাই এখন স্কোরলাইনটা অমনই।

১৫ বছর ধরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ। এতোদিন চলে গেলেও এবারই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। গত ১৫ বছরে চারবার অজিদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেললেও সব ছিল বিশ্বকাপে। জয়হীন থাকা বাংলাদেশ প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে নেমেই অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ ব্যবধানে হারিয়েছে। চতুর্থ ম্যাচটি না হারলে এই মুহূর্তে স্কোরলাইন থাকতো ৫-৪!

দুই দলের সিরিজ শুরু হওয়ার আগে মাহমুদউল্লাহরাও হয়তো কল্পনা করেনি ব্যবধান এমন হবে! তবে কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে, বোলারদের পরিকল্পনামাফিক বোলিংয়ে সাফল্য এসেছে। সেই সঙ্গে ফিল্ডারদের সহযোগিতাও ছিল উল্লেখ করার মতো। তবে বোলিং-ফিল্ডিং দারুণ হলেও নিজেদের কন্ডিশনে ‘পারফেক্ট’ ব্যাটিং করতে পারেনি বাংলাদেশ। ধারাবাহিকভাবে ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হওয়ার খেসারত দিয়েছে চতুর্থ ম্যাচে।

সোমবার দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান নাঈম শেখ ও শেখ মেহেদী হাসানের দারুণ শুরুর পরও মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় ১২২ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। পুরো সিরিজে বোলার ও ফিল্ডাররা সাপোর্ট না দিলে কঠিন পরিস্থিতিতেই পড়তে হতো স্বাগতিকদের। আগের ম্যাচগুলোর চেয়ে সোমবারের জয়টি আরেকটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। টানা তিন ম্যাচ হেরে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের পরিকল্পনা অনেকটাই ধরে ফেলেছিল। চতুর্থ ম্যাচে একাদশে পরিবর্তন এসে সাফল্যও পেয়েছিল তারা। শেষ ম্যাচে তো চারজন স্পিনার নিয়ে মাঠে নেমে বাংলাদেশকে চেপে ধরতে চেয়েছিল। যদিও বাংলাদেশ দুর্দান্তভাবে অস্ট্রেলিয়ার পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়েছে। পুরো সিরিজে নাঈম-সৌম্যর ওপেনিং জুটি ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্টও পরিবর্তন আনে। নাঈমের সঙ্গে মেহেদীকে ওপেনিংয়ে পাঠিয়ে ভালো শুরু পায়। ওপেনিংয়ে পাওয়া ৪২ রানে স্কোরলাইন ১২২ পর্যন্ত নিয়ে যায়।

টি-টোয়েন্টিতে ১২২ রানের অল্প পুঁজি হলেও মিরপুরের উইকেটে এই রান পাহাড়সম! কঠিন এই লক্ষ্যে খেলতে নেমে অজিরা শেষ ১৪ রান তুলতেই হারায় ৭ উইকেট। অথচ পুরো সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখা মোস্তাফিজুর রহমান বল করেন মাত্র এক ওভার। মোস্তাফিজের কাটার-স্লোয়ার ছাড়াই অজিরা সাকিব-সাইফউদ্দিনের সামনে অলআউট হয়ে যায়। চার ম্যাচ পর একাদশে সুযোগ পেয়ে সাইফউদ্দিনের শিকার ৩ উইকেট। আর ইতিহাস গড়ার পথে সাকিব নিয়েছেন ৪ উইকেট। আর তাতেই বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বনিম্ম (৬২) রানে অলআউট হওয়ার লজ্জা পায় সফরকারীরা। বাংলাদেশও ম্যাচটি জিতে যায় রানের হিসাবে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে (৬০)। আর এই জয়েই বাংলাদেশের স্কোরলাইন এখন ৪-৫।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের এই সিরিজটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। অদ্ভুত সব শর্ত দিয়ে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল অজিরা। বিসিবি অস্ট্রেলিয়ার সব শর্তই মেনে নেয়। কারণও আছে। অস্ট্রেলিয়া এমনিতেই বাংলাদেশ সফরে আসতে চায় না। এর আগেও ভবিষ্যৎ সফরসূচিতে থাকা বেশ কিছু সিরিজ নানা অজুহাতে আসেনি তারা। সব মিলিয়ে তাই ১৫ বছরেও দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ হয়নি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ৮ বছর পর আরেকটি সফর যখন সামনে এসেছে, বিসিবি তাই যেকোনও মূল্যে সিরিজ খেলতে চেয়েছে। এই কারণেই কোটি টাকা বাড়তি খরচ হলেও অজিদের দেওয়া যাবতীয় শর্ত মেনে সেগুলো শতভাগ বাস্তাবায়ন করেছে। সবকিছু ছাপিয়ে তাই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ এই সাফল্য কেবল জয়েই নয়, অনেক কিছুর জবাবও বটে।

অস্ট্রেলিয়া সিরিজে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তিন ক্রিকেটারকে পায়নি বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসকে হারিয়ে খর্বশক্তির দলে পরিণত বাংলাদেশ কেমন করে, সেটিই ছিল দেখার। যদিও অস্ট্রেলিয়াও মূল শক্তি নিয়ে আসেনি। দলের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার ছিলেন না। দুই দলের শক্তি কমে যাওয়ার পরও লড়াইটা হয়েছে একপেশে। যেখানে বাংলাদেশের একক আধিপত্য। শুধু চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ঠিকঠাক হলে হোয়াইটওয়াশের উৎসবও হতো লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। সেক্ষেত্রে টি-টোয়েন্টি লড়াইয়ে মুখোমুখি পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকতো ৫-৪ ব্যবধানে! তারপরও ৪-৫ স্কোরলাইনই বা কম কীসে!

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn